একদল নির্বোধ ১৮ বছর বয়সে আমাকে দলে নিয়েছিল: কনস্টাসকে অভয় দিয়ে কামিন্স
২৬ ডিসেম্বর। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সূচিতে বছরের সবচেয়ে ‘বড় দিন’। ক্রিসমাসের পরের দিন বক্সিং ডেতে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুরু হয় টেস্ট। এবার বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ভারত। দুই দলের সাম্প্রতিক লড়াইয়ের ইতিহাস ও সিরিজের প্রথম তিন টেস্ট শেষের ফল এবারের বক্সিং ডে টেস্টকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ আরও চড়িয়েছে। এই ম্যাচটি যারা জিতবে, তারাই এগিয়ে যাবে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে।
এমন রোমাঞ্চকর আবহে শুরু ম্যাচ দিয়েই টেস্ট অভিষেক হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ১৯ বছর বছর বয়সী খেলোয়াড় স্যাম কনস্টাসের। ২০১১ সালে ১৮ বছর বয়সে প্যাট কামিন্সের টেস্টে অভিষেকের পর কনস্টাসই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন।
অস্ট্রেলিয়ার মানদণ্ডে ‘অল্প বয়সেই’ টেস্ট খেলতে যাওয়া কনস্টাস কাল ব্যাটিং ওপেন করবেন উসমান খাজার সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ডটকম এইউ জানাচ্ছে, খাজা-কনস্টাসের বয়সের যে পার্থক্য, অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে এর আগে বয়সের এত পার্থক্য নিয়ে খেলতে নামেননি কোনো উদ্বোধনী জুটি। দুজনের বয়সের পার্থক্য কত—মাত্র ১৮ বছর!
এত অল্প বয়সে টেস্ট খেলতে নামার উত্তেজনায় নিশ্চিত কনস্টাস টগবগিয়ে ফুটছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বশেষ এত কম বয়সে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা যাঁর, সেই কামিন্স আবার কনস্টাসের অভিষেকে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক।
ভাবতেই কেমন লাগে না, যখন বাড়ির উঠানে খেলার কথা, তখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামছেন। আপনাকে এটাকে আরেকটা ম্যাচ ধরেই নামতে হবে, উপভোগ করতে হবে, আর এ নিয়ে বেশি চিন্তা করা যাবে না। স্যামের জন্য এটা আমার বার্তা।প্যাট কামিন্স, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক
আজ মেলবোর্নে টেস্ট–পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে নিজের অভিষেকের স্মৃতিচারণা করলেন সেই কামিন্স। কনস্টাস প্রসঙ্গ টেনেই অল্প বয়সে কামিন্সের টেস্ট অভিষেকের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিল সংবাদমাধ্যম। ১৩ বছর আগে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষিক্ত কামিন্স যেন এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্ততই ছিলেন, ‘অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। এই ভেবে অবাক হচ্ছিলাম যে কেন এবং কীভাবে এত দ্রুত আমি এখানে চলে এলাম। খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম।’
এরপর কনস্টাসকে একটু পরামর্শও দিলেন, কীভাবে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে তা নিয়ে, ‘আমি জানি, এ সপ্তাহে স্যামিরও (কনস্টাস) আমার মতোই লাগছে। ভাবতেই কেমন লাগে না, যখন বাড়ির উঠানে খেলার কথা, তখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামছেন। আপনাকে এটাকে আরেকটা ম্যাচ ধরেই নামতে হবে, উপভোগ করতে হবে, আর এ নিয়ে বেশি চিন্তা করা যাবে না। স্যামের জন্য এটা আমার বার্তা। ১৮ বছর বয়সে আমারও এমন লাগছিল। আমি খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। তবে খেলা শুরু হতেই আপনি গেম মুডে চলে যাবেন, অন্য যেকোনো ম্যাচের মতোই মনে হবে।’
আমি মনে মনে বলছিলাম যদি ভালো না খেলি তবে সেটি আমার দোষ নয়, দোষ নির্বাচকদের, তাঁরা কেন আমাকে দলে নিলেন। ভাবখানা এমন ছিল, ‘‘ওই নির্বোধের দল কেন ১৮ বছর বয়সী একজনকে দলে নিল।’’
কনস্টাসকে পরামর্শ দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনকক্ষে একটু মজাও করলেন কামিন্স, আর তাতে হাসির রোল উঠল সেখানে। কেন, সেটি শোনা যাক কামিন্সের মুখেই, ‘মনে আছে, ১৮ বছর বয়সী আমি ভাবছিলাম, ‘‘বয়স যেহেতু কম ছিল মনোযোগের ঘাটতি তো থাকতেই পারে।” তাই আমি মনে মনে বলছিলাম, যদি ভালো না খেলি, তবে সেটি আমার দোষ নয়, দোষ নির্বাচকদের, তাঁরা কেন আমাকে দলে নিলেন। ভাবখানা এমন ছিল, ‘‘ওই নির্বোধের দল কেন ১৮ বছর বয়সী একজনকে দলে নিল।’’’
এরপর কনস্টাসকে উপভোগ করা মন্ত্রই দিলেন কামিন্স, ‘এত অল্প বয়সে বক্সিং ডেতে ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছে, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারত। তাই সময়টা উপভোগ করো।’
মেলবোর্ন টেস্টের একাদশও জানিয়ে দিয়েছিলেন কামিন্স। ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেডকে পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। পেশির চোটের কারণে সংশয় ছিল তাঁর খেলা নিয়ে। নাথান ম্যাকসুয়েনির জায়গায় স্যাম কনস্টাসের খেলা তো আগেই নিশ্চিত হয়েছে, একাদশে পরিবর্তন আছে আরেকটি। চোটে পড়া পেসার জশ হ্যাজলউডের বদলে একাদশে ঢুকেছেন স্কট বোল্যান্ড।