ওয়ার্মআপ শেষ, নেট অনুশীলনও শুরু হয়ে গেছে। মাঝমাঠে চলছে ম্যাচ পরিস্থিতির ব্যাটিং-বোলিং। এভাবে অনুশীলনের খানিকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর হোবার্টের কিংস্টন টুইন ওভালে তাঁদের দেখা মিলল। তাঁরা বলতে বাংলাদেশ দলের ‘রাম’ আর ‘লক্ষ্মণ’, টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরণ শ্রীরাম ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ।
এ দুজনকে ‘রাম-লক্ষ্মণ’ বলা নিয়ে আবার ভুল–বোঝাবুঝির অবতারণা না হয়! বিশেষ করে যেদিন সাকিব আল হাসান বলে দিলেন, ‘নেদারল্যান্ডস-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বাংলাদেশ দল স্বস্তিতে’ কথাটা মিডিয়ার সৃষ্টি, সেদিন এ ধরনের উপমার প্রয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এটা টি-টোয়েন্টির ভরা মৌসুম, আর টি-টোয়েন্টিতে যেদিন যার ওপর দিয়ে ঝড় যায়, সেদিন তার ওপর দিয়েই সব যায়।
কিন্তু শ্রীরাম-মাহমুদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি সে রকমই নয়? শ্রীধরণ শ্রীরামের নামের সঙ্গে তো ‘রাম’ আছেই, বাংলাদেশ দলের থিঙ্কট্যাংকের মস্তিষ্কে আর যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে সচল এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন, তিনি তো মাহমুদই। অন্য কোচিং স্টাফদের সঙ্গে রেখে এ দুজনই দলের পরিকল্পনা আঁকেন, অনুশীলন-খেলা ইত্যাদির ছক কষেন। সে কারণে খুব ভালো বোঝাপড়ার জুটি বোঝাতেই শ্রীরাম ও মাহমুদকে ‘রাম-লক্ষ্মণ’ বলা। এটাকে অন্য কিছু ভাবলে যে ভাববেন, ভাবনাটা শুধুই তাঁর একটা ‘সৃষ্টি’।
তো শ্রীরাম আর মাহমুদ এত দেরিতে কোথা থেকে এলেন? তাঁরা কেন শুরু থেকেই দলের অনুশীলনে ছিলেন না? আসলে বাংলাদেশের অনুশীলন ভেন্যু কিংস্টন টুইন ওভালে আসার পথে তাঁরা গিয়েছিলেন অন্য এক মাঠে, যেখানে বাংলাদেশ দলের আজ অনুশীলনই ছিল না।
হোবার্টের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু যে বেলেরিভ ওভালে আগামীকাল বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস মুখোমুখি হবে, শ্রীরাম-মাহমুদ আসলে গিয়েছিলেন সেখানে। উদ্দেশ্যটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ম্যাচের আগের দিনও যেহেতু বাংলাদেশ দলের সুযোগ হয়নি খেলার মাঠ দেখার বা সেখানে অনুশীলন করার, দলের হয়ে শ্রীরাম আর মাহমুদই গেলেন মাঠটাকে অন্তত চোখের দেখা দেখে আসতে, উইকেটটাকে একটু পড়ে আসতে।
বেলেরিভ ওভালের মাঠ-উইকেট সম্পর্কে শ্রীরাম-মাহমুদ সেই ধারণা বিতরণ করেছেন দলের মধ্যে। এরপর ম্যাচের আগে স্বচক্ষে মাঠ-উইকেট দেখে ধারণাটাকে যাঁর যাঁর মস্তিষ্কে আরও ভালোভাবে গেঁথে নেবেন ক্রিকেটাররা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে প্রচলিত স্লোগান হচ্ছে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। যখন যে পরিস্থিতি সামনে আসবে, সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারলেই আপনি বড় ক্রিকেটার। সাকিব আজ তাঁর সংবাদ সম্মেলনে যেমন বারবারই বলছিলেন, তিনি চান দলের সবাই যেন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। তবে কথাটা তিনি মাঠের খেলার প্রসঙ্গেই বলেছেন। নইলে খেলার আগের দিনও ম্যাচ ভেন্যুতে অনুশীলন করতে না পারার অস্বস্তির কাঁটা তাঁর মধ্যেও আছে এবং তিনি সেটা নিজ মুখেই বলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বেরিয়ে আসে সাকিবের সেই অস্বস্তি, ‘মাঠে (বেলেরিভ ওভাল) যদি একটু ফিল্ডিং করতে পারতাম বা অনুশীলন করতে পারতাম, অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো হতো।’ বাংলাদেশ দলের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সাকিবই এর আগে বেলেরিভ ওভালে বিগ ব্যাশের একটি ম্যাচ খেলেছেন। সেটিও অনেক আগে, সেই অভিজ্ঞতা এখন আর কাজে লাগবে না বলেই সাকিবের ধারণা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল তাই তাদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে এমন এক মাঠে, যে মাঠকে দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার আগে কখনো চোখেই দেখেননি। এমন মাঠে খেলতে গিয়ে টিম বাস থেকে নামার পর প্রতিটি পদক্ষেপেই ক্রিকেটারদের মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকবে। ড্রেসিংরুমের করিডরটা পর্যন্ত তাঁদের চিনিয়ে দিতে হবে স্বেচ্ছাসেবকদের।
সমস্যা বাধিয়েছে আসলে গতকালের বৃষ্টি। বাংলাদেশ দলের হোবার্টে এসে পৌঁছার কথা ছিল গতকাল দুপুরের মধ্যে। আইসিসির সূচি অনুযায়ী গতকাল রাতে ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে বাংলাদেশের অনুশীলন করার কথা ছিল কিংস্টন টুইন ওভালে। তবে আগেই যেহেতু জানা ছিল শ্রীলঙ্কা-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ থাকায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলার আগের দিন বেলেরিভ ওভালে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার থাকবে না, সে অনুশীলনটা কিংস্টনের পরিবর্তে বেলেরিভ ওভালে করার চেষ্টা ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের।
একটা ম্যাচের আগের দিন বলে মাঝ–উইকেটে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন হয়তো করা যেত না, তবু সাকিবের কথামতো যদি ফিল্ডিংটাও অনুশীলন করা যেত, মাঠের ঘাস-মাটির সঙ্গে কিছুটা হলেও তো চেনাজানা হতো। সেটি হতে পারেনি বৃষ্টিতে দুবার ফ্লাইটের সময় বদলে বাংলাদেশ দলের হোবার্টে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যাওয়ায়। এরপর বাতিল করতে হয় অনুশীলনটাই।
কিংস্টন টুইন ওভালে আজ দীর্ঘ অনুশীলনের পরও তাই আফসোস থেকে গেছে সাকিবের। ম্যাচের আগের দিন সাধারণত কোনো দলই এত লম্বা সময় ধরে অনুশীলন করে না, যেটা আজ করেছে বাংলাদেশ দল। বেলা ১১টায় শুরু করে ১টার মধ্যে অনুশীলন শেষ করার কথা থাকলেও অনুশীলন হয়েছে আরও ৫০ মিনিটের মতো।
কিন্তু তাতেও কি খেলার আগে খেলার মাঠ না দেখার আফসোসটা যাবে? আর আফসোস তো শুধু নয়, বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতিতেই এটা বড় এক অপূর্ণতা রেখে দিচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা তো এখন এ রকমই—সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে আপনি কিসের ক্রিকেটার!