স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ের পর কামিন্সের হাসি
ইডেন গার্ডেনে সেমিফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে দাঁড়াবেন—ট্রাভিস হেড কি তা সেপ্টেম্বরের শেষে কিংবা অক্টোবরের শুরুতেও ভাবতে পেরেছিলেন? হাত ভেঙে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ খেলে ফেলার পর দলে এসেছেন।
লিগপর্বে শতক পেলেও বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটি খেলেছেন কাল। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারানোর এই ম্যাচে হেডের অবদান ৪৮ বলে ৬২। স্কোরটি আরও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ২১২ রান তাড়ার প্রেক্ষাপটে। ৬১ রানে ২ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় অর্ধেকটা পথ পৌঁছে দিয়েছিলেন হেড। এরপর ফিরে আসতে শুরু করেছিল ১৯৯৯ সেমিফাইনাল!
২৪ বছর আগের সে সেমিফাইনালে ২১৩ তাড়া করতে নেমে ম্যাচ টাই করে ওয়ানডে ইতিহাসে ‘ক্ল্যাসিক’–এর জন্ম দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার অস্ট্রেলিয়ার সামনে ছিল সেই ম্যাচের চেয়ে ১ রান কম—২১২। আর সেটাই তাড়া করতে নেমে ১৩৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল তারা। স্মিথ, স্টার্ক, কামিন্সরা মিলে বাকি পথটা পাড়ি দিলেও পার্থক্য গড়েছে হেডের ইনিংস। ম্যাচসেরা হেড পুরস্কার হাতে টানলেন উইকেটের প্রসঙ্গ, ‘উইকেট কেমন আচরণ করবে আমরা জানতাম। এখানে তিন–চার দিন হলো আছি, এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমাতে গিয়েছি। বল বেশি বাঁক নেয়নি, তবে জানতাম কঠিন পরীক্ষা নেবে।’
হেড নিজেও নিরীহদর্শন অফ স্পিনে ২টি উইকেট নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার তাব্রেইজ শামসি, কেশব মহারাজরাও তেমন বাঁক পাননি। তবে প্রতি ২ বলে একটি ‘ডট’ এবং ৪ বলে একটি করে ‘ফলস শট’ আদায় করেছেন। দুজন মিলে বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিলেও বাউন্ডারি হজম করেছেন মাত্র ৪টি। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে চাপটা এতেই বোঝা যায়। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তাই ৪৯ বলে ২৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলা জস ইংলিসের প্রশংসা করেছেন স্পিনের প্রসঙ্গেই, ‘ইংলিস ভালো খেলেছে। কঠিন উইকেটে দুজন ভালো স্পিনারকে ভালোভাবে সামলেছে।’
কামিন্সের এর আগে ২১৫ বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও এবার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হতে যে ‘আর তর সইছে না’ সেটাও জানিয়ে রাখলেন। তবে লো–স্কোরিং সেমিফাইনাল জিতে কামিন্স কতটা খুশি, সেটাও বোঝা যায় তাঁর কথায়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সম্প্রচারক চ্যানেলকে বলেছেন, ‘স্নায়ুক্ষয়ী কয়েকটা ঘণ্টা কেটেছে। দারুণ ম্যাচ হলো। ভেবেছিলাম স্পিন ধরবে। তবে স্টার্ক ও জসকে শুরুতে এত বেশি বল করতে হবে ভাবিনি।’ টস হারলেও পেসাররা সুইং পাওয়ায় ভাগ্যের ওপর আর মন খারাপ হয়নি কামিন্সের। প্রশংসা করেছেন দলের ফিল্ডিংয়েরও, ‘টুর্নামেন্টের শুরুতে আমরা এত ভালো (ফিল্ডিং) ছিলাম না। ডেভির (ওয়ার্নার) কথাই ধরুন, ৩৭ বছর বয়সে ডাইভ দিয়েছে, অবিশ্বাস্য!’
বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত এসে বারবার পা হড়কানোর ‘জুজু’ এবারও কাটাতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। বিশ্বকাপে এবারসহ মোট পাঁচবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল দলটি। প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা তাই স্বাভাবিকভাবেই মলিন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাইক্রোফোনের সামনে। শুরুটা করলেন অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন জানিয়ে, ‘ফাইনালে ওঠায় অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন। যোগ্য দল হিসেবেই তারা জিতেছে।’
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল প্রোটিয়ারা। ৪৭ রান করা হাইনরিখ ক্লাসেন দলীয় ১১৯ রানে ফিরে গেলে বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার। এই বাজে শুরুকেই হারের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বাভুমা, ‘কন্ডিশন কঠিন হলেও তারা শুরুতে আমাদের চাপে ফেলেছিল। (ক্লাসেনের আউট) সে সময় ম্যাচে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলাম।’