মুজিব-রশিদরা কেমন, এখন সাকিবরা তা জানে

আগের বিশ্বকাপের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য এই বিশ্বকাপটা একটু ভিন্ন। এবার বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলার যে স্বপ্নটা দেখছে, সেটি যুক্তিসংগত কারণেই। এর আগে কখনো এমন ছিল বলে মনে পড়ে না। তবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে প্রথম ম্যাচটার ওপর। কারণ, একটা বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, সেটা বাংলাদেশ নানা কারণেই নিতে পারেনি। তাই দল এখন সব মিলিয়ে কী অবস্থায় আছে, সেটা বোঝা বেশ মুশকিল।

সেদিক থেকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের জয় পাওয়াটা খুব দরকার। বাংলাদেশের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে একটি জয়ে। তাতে দলকে ঘিরে যত দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, অনিশ্চয়তা সব পেছনে ফেলে বাকি ম্যাচগুলো খুব গোছানো দল হিসেবে খেলতে পারবে।

ম্যাচের আলোচনায় যদি আসি, তাহলে সবার আগে কন্ডিশনের কথা আসবে। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বলতে শুনেছি, উইকেট যথেষ্ট শক্ত। ঘাস আছে। ভালো কাভার আছে। এর অর্থ হচ্ছে, উইকেট পেসারদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। বল ঘোরার সুযোগ কম পাবে। স্পিনাররা হয়তো খুব বেশি সাহায্য পাবে না। পেসনির্ভর বোলিংই হয়তো দেখা যাবে। এটাও মাথায় রাখতে হবে, খেলাটা শুরু হবে সকালে। তাই দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। উইকেটের চরিত্রেও খুব একটা পার্থক্য থাকবে না। টসে হেরে আগে বা পরে ব্যাটিং করলেও তা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না হয়তো। কারণ, এ ধরনের উইকেটের চরিত্র খুব বেশি বদলায় না।

ধর্মশালার উইকেট পেসারদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে
ছবি: এএফপি

সেদিক থেকে একটু নিশ্চিন্ত থাকার সুযোগ আছে। তবে প্রথমে ব্যাটিং করে একটা ভালো স্কোর করতে পারলে তা আফগানিস্তানকে ব্যাকফুটে ফেলে দিতে পারে।
বাংলাদেশের আজ ভালো খেলার পূর্বশর্ত একটাই—ব্যাটিংয়ের সময় শুরুতে উইকেট না দেওয়া। শুরুতে যদি মুজিব বা ফারুকি আফগানদের উইকেট এনে দেয়, তাহলে মাঝের ওভারে ওরা যথেষ্ট উজ্জীবিত থাকে। যথেষ্ট মিতব্যয়ী বোলিং করার সুযোগ পায়, যা মিডিল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। প্রথমে যদি উইকেট না পায়, সে ক্ষেত্রে মাঝের ওভারে তাদের অতটা কার্যকরী মনে হয় না। বাংলাদেশ যদি শুরুতে উইকেট না দেয়, তাহলে বড় রান করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন

আফগানিস্তানের মূল শক্তি বরাবরই স্পিন। সেই তুলনায় বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ে যথেষ্ট বৈচিত্র্য আছে। বিশেষত, পেস বোলিংয়ের কারণে। এই উইকেটে যা বাংলাদেশকে তুলনামূলকভাবে কার্যকরী করে তুলবে। এ ক্ষেত্রে মোস্তাফিজুর রহমানের কথা বলতেই হয়। সে এখন যেভাবে বোলিং করছে, সেটা অধিনায়কের অপশন বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ, মোস্তাফিজ এখন নতুন বলে বল করছেন। সঙ্গে তাসকিন যদি শুরুতে ভালো করতে পারে, তাহলে বিপক্ষে দলের জন্য কঠিন হবে। এখন ম্যাচের তিন অবস্থায় বোলিং করার মতো যথেষ্ট শক্তি আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট ব্যাপার। যদি স্কোরবোর্ডে রান থাকে, তাহলে বোলিং নিয়ে আফগানদের আটকে দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

মোস্তাফিজুর রহমান এখন যেভাবে বোলিং করছে, সেটা অধিনায়কের অপশন বাড়িয়ে দিচ্ছে
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশ দল ‘ব্যাটিং হেভি’ হবে নাকি ‘বোলিং হেভি’, সেটাও একটা প্রশ্ন। যদি একজন ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে খেলতে চায়, সে ক্ষেত্রে জেনুইন স্পিনারের জায়গায় হয়তো মাহমুদউল্লাহর জায়গা হবে। বোলিং শক্তি বাড়াতে চাইলে সাকিব, মিরাজের সঙ্গে মেহেদী বা নাসুম থাকতে পারে। আর সব বাদ দিয়ে পেস হেভি করতে চাইলে কিছুটা ব্যাটিং করতে পারা তানজিম সাকিব তো আছেই। বাংলাদেশ দলের ওপেনার কে হবে, সেটাও একটা আলোচনা। এশিয়া কাপে মিরাজ আফগানদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিল। তবে আমি বিশ্বকাপের মতো জায়গায় খুব প্রয়োজন না হলে ওপেনিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখতে চাইব না।

আরও পড়ুন

আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ সম্প্রতি অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে। আফগানদের নিয়ে আগের যে রহস্য ছিল, সেটা কিন্তু এখন আর তেমন নেই। মুজিব-রশিদরা কেমন বোলার, তা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা জানে। ওদের বিপক্ষেও রান করা যায়, দাপট দেখানো যায়। সেটা বাংলাদেশ করেছেও। এবার সে অভিজ্ঞতা বড় মঞ্চে কাজে লাগানোর পালা।