১৪ টেস্টের বছরে কী হবে তাসকিন–শরীফুলদের
খেলা যত বেশি, খেলোয়াড়দের ওপর চাপও তত বেশি। বেশি ম্যাচ খেললে পেসারদেরই চোটে পড়ার শঙ্কা বেশি থাকে। তার ওপর বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এখন দেশে ও দেশের বাইরে কিছুটা পেসনির্ভর হয়ে উঠতে চাইছে। ১৪ টেস্টের বছরে তাই পেসারদের ব্যবস্থাপনাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে শুরু হবে ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ব্যস্ত যাত্রা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে শেষ। ৯টি ওয়ানডে, দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ১৭টি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ এবং টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়াও ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা অনুযায়ী (এফটিপি)—এই আট মাসে বাংলাদেশ দল টেস্ট খেলবে ১৪টি।
১৪ টেস্টের ৬টি দেশে ও ৮টি দেশের বাইরে। বাংলাদেশ এক বছরে এত টেস্ট এর আগে কখনোই খেলেনি। সর্বোচ্চ ১০টি টেস্ট খেলেছে ২০২২ সালে। এ বছরও সংখ্যাটা ১০-ই থাকতে পারত। কিন্তু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রের ১০ টেস্টের বাইরে জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২টি করে টেস্ট থাকায় সেটি হয়ে যাচ্ছে ১৪।
খেলা যত বেশি, খেলোয়াড়দের ওপর চাপও তত বেশি। তার মধ্যেও পেসারদের কথা আলাদা করে বলতে হয়। কারণ, বেশি ম্যাচ খেললে তাদেরই চোটে পড়ার শঙ্কা বেশি থাকে। তার ওপর বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এখন দেশে ও দেশের বাইরে কিছুটা পেসনির্ভর হয়ে উঠতে চাইছে। ১৪ টেস্টের বছরে তাই পেসারদের ব্যবস্থাপনাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাঁদের বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর যে নীতিতে বিসিবি আগে থেকেই আছে, সেটা আরও বেশি দেখা যাবে ২০২৪ সালে।
জাতীয় দলের সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরানও এতেই সমাধান দেখেন, ‘আগের তুলনায় আমাদের এখন ভালো ভালো পেসার এসেছে। সেখান থেকে কারা টেস্ট খেলবে, কারা সাদা বলে—এটা আলাদা করা দরকার। এরপর সেই তালিকা থেকে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানো উচিত।’
টেস্টের পেস আক্রমণে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন চোটের সঙ্গে লড়ছেন। হাঁটুর চোটে থাকা ইবাদতের আগস্টের আগে মাঠে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তাসকিন অবশ্য সুস্থ হওয়ার দিকে। বিশ্বকাপের মাঝপথে কাঁধের পুরোনো ব্যথা ফিরে আসায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি সিরিজ খেলা হয়নি তাঁর।
১৯ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া বিপিএল দিয়ে ফেরার আশা করছেন তাসকিন। তবে চোটপ্রবণ এই পেসারের জন্য বিপিএলটাকে একটা পরীক্ষা হিসেবেই নিয়েছেন বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী, ‘তাসকিনকে আমরা পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে চেয়েছিলাম। সেটা সে পেয়েছেও। বিপিএলটা তার জন্য প্রথম পরীক্ষা হবে।’
তাসকিন ও ইবাদতের অনুপস্থিতির সময়ও তাঁদের শূন্যতা বুঝতে দেননি শরীফুল ইসলাম। গত বছর বাংলাদেশ দলের ৪ টেস্টের সব কটিই খেলেছেন এই বাঁহাতি পেসার। ৮ ইনিংসে ১২ উইকেট নেওয়া শরীফুল এখন শুধু টেস্টে নন, তিন সংস্করণেই বাংলাদেশ দলের প্রথম পছন্দ। চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও সেটাই বলেন, ‘আট মাস আগেও সে দলে নিয়মিত ছিল না। এখন সে-ই হয়তো আমাদের সেরা বোলার।’
যতই নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠুন, ১৪ টেস্টের বছরে শরীফুলকেও বিশ্রাম দিয়ে খেলাতে হবে নিশ্চিত। কিন্তু বাঁহাতি পেসার হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান কি বিকল্প হতে পারবেন শরীফুলের? গত ৫ বছরে মোস্তাফিজ টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৩টি। পেসারদের ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানোর দাবি পূরণ করতে টেস্টবিমুখ মোস্তাফিজকে এ বছর আবার টেস্টে ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে নির্বাচকদের। সঙ্গে হাত বাড়াতে হবে অন্য পেসারদের দিকেও।
খালেদ আহমেদ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি। তবে বিসিএলের চার দিনের প্রতিযোগিতায় ৪ ইনিংসে ১৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনি। টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা আরেক পেসার রেজাউর রহমান জাতীয় লিগে ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ২০ উইকেট।
গেম ডেভেলপমেন্টের পেস বোলিং কোচ মাহবুব আলীও আলাদা করে বললেন এই দুজনের কথা, ‘নিয়মিতদের বাইরে খালেদ ও রেজাউরকে জাতীয় লিগে দেখে মনে হয়েছে খুব ভালো জায়গায় আছে। দুজনই থার্ড অপশন হিসেবে বেশ ভালো।’
সাদা বলে নিয়মিত হাসান মাহমুদও আছেন টেস্টের ভাবনায়। না খেললেও সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজের টেস্ট দলে ছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে ছিলেন তরুণ পেসার মুশফিক হাসান। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরেও তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫টি ওয়ানডে ও ২টি টি-টোয়েন্টি খেলা তানজিম হাসানও আসতে পারেন টেস্টের বিবেচনায়।
জাতীয় দল ও এর আশপাশে থাকা পেসারদের বাইরে নির্বাচকদের চোখ পড়তে পারে হাই পারফরম্যান্স বিভাগের নাহিদ রানা, রিপন মন্ডলের ওপর। ২০২২-২৩ মৌসুমে জাতীয় লিগে নাহিদ ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, ১১ ইনিংসে ৩২ উইকেট নিয়েছিলেন রাজশাহীর পেসার। ‘এ’ দল ও হাই পারফরম্যান্সের হয়ে লাল বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে সুযোগ পাচ্ছেন রিপন। এ ছাড়া নির্বাচকদের বিবেচনায় থাকতে পারেন হাই পারফরম্যান্সের আরও দুই পেসার মুকিদুল ইসলাম ও আশিকুর রহমান।
১৪ টেস্টের বছরে নির্বাচক হাবিবুল বাশারের প্রথম আশা, সব পেসার চোটমুক্ত থাকবেন, ‘আশা করি আমাদের কোনো ম্যাচে তিনজন নতুন খেলোয়াড় নিয়ে নামতে হবে না।’ সে জন্য পেসারদের ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানোর চিন্তাটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তাঁরা, ‘আমাদের হাতে সাত-আটজন পেসার আছে। মূল চ্যালেঞ্জ ওদের সুস্থ রাখা। সবাইকে সব সময় পাব না, এটা ধরে নিয়েই এগোচ্ছি। হয়তো দুজন অভিজ্ঞ পেসারের সঙ্গে একজন অনভিজ্ঞ রেখে খেলাতে হবে।’