সাকিবকে তিন নম্বরে দেখতে চাই
বাংলাদেশের এশিয়া কাপ যাত্রাটা এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে দলগত প্রাপ্তির কিছু নেই। এখন বাংলাদেশের লক্ষ্যটা একদমই ছোট একটা বৃত্তের মধ্যে চলে এসেছে। সেই ছোট বৃত্তে থেকে ভারতের মতো টুর্নামেন্ট ফেবারিট দলের বিপক্ষে আশাবাদী হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ নেই।
ভারত হয়তো আজকের ম্যাচটায় দল নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। যদি কারও ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা থাকে, তাঁদের নিশ্চয়ই বিশ্রাম দেওয়া হবে। কারণ, রোহিতরা এর মধ্যেই এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছেন।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, ভারতের একাদশে মূল খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতিও এ ম্যাচটায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা বাড়াবে না। অনেক কারণেই এ কথাটা বলা। এবারের এশিয়া কাপের শুরু থেকেই দেখছি, বাংলাদেশ দল কোন দলটা নিয়ে খেলছে, কেন খেলছে, তা একদমই পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশের এশিয়া কাপ শেষের পথে, কিন্তু আমরা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে কে হবেন আজকের ম্যাচের ওপেনার। দলের ছবিটা এ থেকেই পরিষ্কার।
এশিয়া কাপের দলে খুবই সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছিল তানজিদ ইসলামকে। কিন্তু এক ম্যাচের পর তিনি আর সুযোগ পাননি। ওপেনার হিসেবে মোহাম্মদ নাঈমকে সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি কতটুকু কী করতে পারেন, তা বোঝা হয়ে গেছে। নাঈমের জায়গায় আমি তানজিদকে দেখতে চাইব।
তিনি নিশ্চয়ই গত কয়েকটি ম্যাচে দেখেছেন, শ্রীলঙ্কার মন্থর উইকেটে কীভাবে খেলা উচিত। সে শিক্ষাটা মাঠে খেলে অর্জিত নয়, তবু এই মুহূর্তে আমি তানজিদকেই দেখতে চাইব। শুধু আমি নই, আমার মনে হয় পুরো দেশ দেখতে চাইবে তিনি ভারতের বিপক্ষে কেমন করেন। তাঁর সঙ্গে লিটন দাসকেও তাঁর পুরোনো জায়গায় ফিরিয়ে আনা উচিত। কারণ, বাংলাদেশ দলের তাঁর আদর্শ জায়গা উদ্বোধনেই, তিনে নয়।
নাজমুল যখন চোটে পড়েন, তখন ধারণা করেছিলাম, সাকিব নিজেই তিনে এসে হাল ধরবেন। কিন্তু যেকোনো কারণেই তিনি তা করেননি। আজ অধিনায়কের কাছে এই পরিবর্তনটা দেখতে চাইব। তাওহিদ হৃদয়কে চারে দেখতে চাইব। যেহেতু লোয়ার অর্ডারে মুশফিক নেই, পাঁচ, ছয় ও সাত নম্বর পজিশন আফিফ, শামীম ও মিরাজরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন। তাহলে এই ক্রিকেটাররা নিজেদের আরও একবার প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। এক ধাপ ওপরে খেলতে পারলে ব্যাটিংয়ের যথেষ্ট সময়ও পাবেন। যা এই ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে সাহায্য করবে।
বোলিং আক্রমণেও আমি কিছুটা পরিবর্তন দেখতে চাই। নাসুম আগের ম্যাচে ভালো করেছেন, তাঁর কাছে এ ম্যাচেও অনেক আশা। ভারত তাদের সর্বশেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিনে ভুগেছে, নাসুমকে ভারতীয়রা কেমন খেলেন, সেদিকে নিশ্চয়ই অনেকের চোখ থাকবে।
ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের কথা মাথায় রাখলে পেস আক্রমণের দু-একজনকে বিশ্রামে রাখা হতে পারে। সেটা মনে হয় তাসকিনই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে তাসকিনের জায়গায় মোস্তাফিজের সুযোগ হতে পারে। ইবাদতের বদলি হিসেবে দলে ডাক পাওয়া তানজিম হাসানকেও দেখার সুযোগ আছে। বাংলাদেশ সেটা করবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে আবেগ দিয়ে না ভেবে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রাখা উচিত।
এনামুল হকের নামটাও এখানে চলে আসবে। তবে তিনি দলের ১৮তম ক্রিকেটার, এটা মাথায় রাখতে হবে। যদি তিনি বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ ভাবনায় না থাকেন, তাহলে এনামুলকে এই মুহূর্তে না খেলানোই শ্রেয়।
আর শ্রীলঙ্কার উইকেটও এনামুলের জন্য আদর্শ নয়। গতকালও তো বৃষ্টি হয়েছে। নিশ্চয়ই মাঠকর্মীরা আজকের ম্যাচের উইকেট ঠিকমতো পরিচর্চার সুযোগ পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আজও বোলিং দাপট দেখা যেতে পারে। তবে এ ম্যাচটায় মোটা দাগে এগিয়ে থাকবে ভারতই। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, বাংলাদেশের পক্ষে বলার মতো এই একটাই কথা আছে।
গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ