ব্যানারম্যান, হাবিবুল থেকে বলবার্নি—নড়বড়ে নব্বইয়ে যাঁরা প্রথম
অ্যান্ডি বলবার্নি আজ আউট হয়েছেন অদ্ভুতভাবে। রমেশ মেন্ডিসকে সুইপ করতে গিয়ে তাঁর ব্যাটের পেছনের দিকে লাগে বল, তাতেই ক্যাচ যায় স্লিপে। আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক ফেরেন ৯৫ রান করেই। তবে এই ইনিংসেই হয়ে গেছে একটা ইতিহাস। টেস্টে আয়ারল্যান্ডের হয়ে নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান হয়ে গেছেন বলবার্নি।
বলবার্নি আর যাঁর মতোই হোন না কেন, অ্যালেক ব্যানারম্যান, উইল স্কটন, লুই টানক্রেড, কার্ল নু্নেস বা রজার ব্লান্টের মতো নিশ্চয়ই হতে চাইবেন না!
ব্যানারম্যান নামটা ক্রিকেট ইতিহাসে বেশ পরিচিতই। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান, তাঁরই ভাই ছিলেন অ্যালেক। তবে ভাইয়ের রেকর্ডটা যেখানে তৃপ্তির, অ্যালেকের রেকর্ডটি সেখানে আক্ষেপের।
১৮৭৭ সালে ইতিহাসের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন চার্লস। ছয় বছর পর ১৮৮৩ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৫ মিনিট ব্যাটিং করে অ্যালেক করেছিলেন ৯৪ রান। শুধু অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নয়, টেস্টেই নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি! অ্যালেকের আক্ষেপটা আরও বেশি, ক্যারিয়ারে এর আগে-পরে আরও ২৭টি টেস্ট খেললেও একবারও সেঞ্চুরির দেখা পাননি।
নিজ দেশের প্রথম সেঞ্চুরি স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি তৃপ্তি হওয়ার কথা। নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হওয়া তাই বাড়তি আক্ষেপেরই।
ইংল্যান্ডের হয়ে রেকর্ডটি উইল স্কটনের। অ্যালেক ব্যানারম্যানের ওই আক্ষেপের পরের বছর স্কটন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওভাল টেস্টে আউট হন ৯০ রানে। ব্যানারম্যানের মতো স্কটনের ১৫ টেস্টের ক্যারিয়ারেও সেঞ্চুরি নেই। একই আক্ষেপ আছে টানক্রেড, নুনেস ও ব্লান্টেরও।
১৯০২ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৭ রানে আউট হওয়া প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান টানক্রেডের ১৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে নেই কোনো সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নুনেস অবশ্য খেলেছিলেন ৪টি টেস্ট, এর মধ্যে শেষটিতে তিনি ফিরেছিলেন ৯২ রান করে। সে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের রজার ব্লান্টের ক্যারিয়ারও দীর্ঘ নয়, খেলেছিলেন ৯টি টেস্ট। ১৯৩১ সালে লর্ডসে ব্লান্ট কাটা পড়েছিলেন ৯৬ রানেই।
হানিফ মোহাম্মদের তেমন কোনো আক্ষেপ নেই। পাকিস্তানের হয়ে প্রথম নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হওয়ার ‘কীর্তি’টি হানিফ গড়েছিলেন ব্র্যাবোর্নে, ভারতের বিপক্ষে তাদের প্রথম সিরিজে। পাকিস্তানের লিটল মাস্টারের ক্যারিয়ারে অবশ্য আছে ১২টি সেঞ্চুরি, আছে ট্রিপল ও ডাবল সেঞ্চুরিও।
কম সমৃদ্ধ নয় ভিনু মানকড়ের ক্যারিয়ারও। ৪৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে তাঁর সেঞ্চুরি ৫টি, ১৯৫৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পোর্ট অব স্পেন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যিনি আউট হয়েছিলেন ৯৬ রানে। মানকড় অবশ্য তত দিনে করে ফেলেছেন ৩টি সেঞ্চুরি।
শ্রীলঙ্কার হয়ে ৯০ পেরিয়ে সেঞ্চুরির আগেই থামা প্রথম ব্যাটসম্যান রয় ডিয়াজ। ১৯৮২ সালে ফয়সালাবাদে ৯৮ রানে থেমেছিলেন তিনি। ২০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ডিয়াজ শেষ পর্যন্ত করেন ৩টি সেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের রেকর্ডটি গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের। ১৯৯৩ সালে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ৯৬ রানে আউট হয়েছিলেন ফ্লাওয়ার, ৬৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে যাঁর আছে ৬টি সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ রেকর্ডটি হাবিবুল বাশারের। ২০০৩ সালে ফয়সালাবাদে ৯৭ রানে আউট হন হাবিবুল। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরেকবার নড়বড়ে নব্বইয়ে ফেরেন তিনি। ক্যারিয়ারে ৩টি সেঞ্চুরির বিপরীতে হাবিবুল করেন শেষ পর্যন্ত ২৪টি ফিফটি, এর বেশ কয়েকটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়া উচিত ছিল বলেও ক্যারিয়ার শেষে আক্ষেপ করেছিলেন সাবেক এ অধিনায়ক।
আফগানিস্তানের রহমত শাহ অবশ্য দুটি ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের ‘প্রথম কীর্তি’র মালিক। ২০১৯ সালে মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেরাদুনে প্রথম আফগান ব্যাটসম্যান হিসেবে নড়বড়ে নব্বইয়ে আউট হন তিনি, সেবার সেঞ্চুরি পাননি ২ রানের জন্য। সে বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি খেলেন ১০২ রানের ইনিংস, আফগানিস্তানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি সেটিই।