বিশ্বকাপে প্রথম পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বাজে বাংলাদেশ
‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’—প্রবাদটি হয়তো সবাই শুনে থাকবেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে শেষের সঙ্গে শুরুটাও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যান, ম্যাচের ফল ও পয়েন্ট তালিকা সে কথাই বলছে।
এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দুই দল ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ। দশ দলের বিশ্বকাপে জস বাটলারের দল আছে দশে, সাকিব আল হাসানের দল নয়ে। সবার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পর্ব থেকে বিদায় ঘণ্টাও বেজে গেছে এই দুই দলের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তো রসিকতা করে লিখছেন, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দশম হওয়ার হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলছে।
বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে ‘জয়ী’ হবে, সেটা নিশ্চিত হতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে একটি জায়গায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলেছে। সেটা প্রথম পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারানোর সংখ্যায়।
এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এই সাত ম্যাচে ১ থেকে ১০ ওভারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। মানে, ম্যাচপ্রতি ২.২৯টি।
বাংলাদেশের পরেই আছে ইংল্যান্ড। ইংলিশরাও বাংলাদেশের সমান ম্যাচ খেলে প্রথম পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারিয়েছে ১৫টি। অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি ২.১৪টি। তিনে থাকা শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে ১৪টি, নেদারল্যান্ডস ১২টি। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ১০টির বেশি উইকেট হারানো দল এই চারটিই। পয়েন্ট তালিকার দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে, এরাই তলানির চার দল।
শুরুটা নড়বড়ে হলে বেশির ভাগ সময়ই যে শেষে গিয়ে সেটা পুষিয়ে দেওয়া যায় না, এই পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ। পুষিয়ে দিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিমও। প্রথম পাওয়ার প্লেতে বেশি উইকেট হারানোয় দলীয় সংগ্রহও বড় হয়নি।
১ থেকে ১০ ওভারের মধ্যে সবচেয়ে কম ৬টি উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তানও। সেটার সুফলও পাচ্ছে আফগানরা। ইব্রাহিম জাদরান, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, রহমত শাহদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে দলটি টানা তিন ম্যাচ জিতেছে। সেমিফাইনালের দৌড়েও আফগানরা ভালোভাবেই টিকে আছে।
সবচেয়ে কম রান রেট ও কম স্ট্রাইক রেট বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্দশার আরও জ্বলন্ত উদাহরণ। দশ দলের মধ্যে স্ট্রাইক রেটে সবার নিচে বাংলাদেশ। সাকিবের দল প্রতি ১০০ বলে রান তুলেছে ৭৩.৪৫। একমাত্র সহযোগী দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া নেদারল্যান্ডসের স্ট্রাইক রেটও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। ডাচরা প্রতি ১০০ বলে ৭৩.৭৮ রান তুলেছে।
স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার; ১১০.২২। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৫ বার ৩০০ রানের বেশি করা দলও দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিশ্বকাপে ওভারপ্রতি মাত্র ৪.৬১ রান তুলে বাংলাদেশ যেন এটাও বুঝিয়ে দিয়েছে, এখনো ওয়ানডের সেকেলে ধারা থেকে বেরোতে পারেনি। এ তালিকাতেও বাংলাদেশের ওপরে আছে নেদারল্যান্ডস। ডাচরা ওভারপ্রতি ৪.৮১ রান তুলেছে। শুধু বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসেরই ওভারপ্রতি রান রেট ৫-এর কম।
দ্রুত রান তোলায় সবার ওপরে দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক-হাইনরিখ ক্লাসেনরা ওভারপ্রতি ৬.৯২ রান তুলেছেন। ওভারপ্রতি ৬-এর বেশি রান তুলেছে আরও চার দল—নিউজিল্যান্ড (৬.৪৮), অস্ট্রেলিয়া (৬.২৫), পাকিস্তান (৬.১২), ভারত (৬.১২)।
অভিজ্ঞ তামিম ইকবালকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। তামিমের পরিবর্তে কোনো বিকল্প ওপেনারকেও রাখা হয়নি। লিটন দাস ও তানজিদ হাসান প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলেও প্রতি ম্যাচেই তাঁদের খেলানো হচ্ছে। বেশির ভাগ ম্যাচে তিনে নামা নাজমুল হোসেন যেন ব্যাটিংই ভুলে গেছেন! সর্বশেষ ৬ ম্যাচের একটিতেও দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি নাজমুল। মেহেদী হাসান মিরাজকেও মাঝেসাজে ওপরে তুলে আনা হলেও লাভ হয়নি।
প্রথম পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট হারানো, স্ট্রাইক রেট ও রান রেটে তলানিতে থাকাটা যেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির কারণগুলোই আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।