বাজে ফিল্ডিং আর হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বড় হারে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের
শক্তি আর অভিজ্ঞতায় দুই দলের পার্থক্য অনেক বেশি। মিরপুরে সিরিজের প্রথম নারী ওয়ানডেতে ১১৮ রানের জয়ে যেন সেটিই বোঝাল অস্ট্রেলিয়া। তবে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছিল অঘটন তৈরির। কিন্তু ক্যাচ হাতছাড়ার সঙ্গে বাজে ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে বেশ। ২১৪ রানের রেকর্ড লক্ষ্যে এরপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ব্যাটিং। স্বাগতিকেরা গুটিয়ে গেছে ৯৫ রানেই। টানা তিন ব্যাটার হয়েছেন রান আউট, ২৫ রানে পড়েছে শেষ ৮ উইকেট।
২১৪ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নিজেদের নতুন রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে। শুরুটা সুবিধার হয়নি—মেগান শুটের করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই কট বিহাইন্ড ফারজানা হক। শুটের সঙ্গে কিম গার্থও সে সময় মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন, অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারদের চ্যালেঞ্জ আসতে তখনো বাকি। অষ্টম ওভারে প্রথম বদলি হিসেবে আসা অফ স্পিনার অ্যাশলেই গার্ডনারের প্রথম ওভারে স্লিপে ক্যাচ তোলেন মুর্শিদা খাতুন। ২১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর সোবহানা মোস্তারি ও অধিনায়ক নিগার সুলতানার জুটি চেষ্টা করেছিল ইনিংস মেরামতের।
সে সময়ও অস্ট্রেলিয়া সাজায় আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং, বৃত্তের বাইরে ছিলেন মাত্র দুজন। সে জুটি ভাঙেন কিং, তাঁর লেগ স্পিনে অ্যারাউন্ড দ্য লেগে বোল্ড হন সোবহানা। বাংলাদেশের ইনিংসে এরপর যেন লাগে রানআউটের অভিশাপ। নিগারের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝিতে পাঁচে আসা ফাহিমার পর রিতু মনিও হন রান আউট, পরে এর শিকার নিগার নিজেও। রিতু ক্রিজের ভেতর ব্যাট নিলেও শূন্যে রেখেছিলেন, নিগার তো ব্যাট ফেলতেই ভুলে যান। সেই ডামাডোলের পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি বাংলাদেশ।
মিরপুরের ধীরগতির ও নিচু বাউন্সের উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে আটকাতে স্পিন হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, তা ছিল জানা কথাই। টসে জিতে অনুমিতভাবেই ফিল্ডিং নেন নিগার। উইকেট কেমন, সেটির আভাস অবশ্য পাওয়া গিয়েছিল সুলতানা খাতুনের প্রথম বলেই। টার্নে পরাস্ত হন ব্যাকফুটে খেলার চেষ্টা করা ফিবি লিচফিল্ড, বাংলাদেশ ব্রেকথ্রু পায় দ্বিতীয় ওভারেই। বেঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএল জিতে আসা এলিস পেরি সুলতানার দ্বিতীয় শিকার।
অন্য প্রান্তে ৮ রানের মধ্যে দুবার ক্যাচ তুলেও বেঁচে যাওয়া অ্যালি হিলি শেষ পর্যন্ত থামেন মারুফা আক্তারের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে। ২৭ রানেই ৩ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তালিয়া ম্যাকগ্রা ও বেথ মুনির প্রতিরোধের জুটি এরপর ভাঙেন নাহিদা—ম্যাকগ্রাকে এলবিডব্লু করে। ফাহিমার বলে মুনি কট বিহাইন্ড হলে ৭৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ২০১৩ সালের পর আগে ব্যাটিং করে এত কম রানে ৫ উইকেট হারায়নি তারা।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে সে সময় ঠিক চেপে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইকেট তুলনামূলক সহজ হয়ে এসেছে যেমন, তেমনি চাপও কমেছে অস্ট্রেলিয়ার। সাদারল্যান্ডকে কেন্দ্র করে এরপর এগোয় তাদের ইনিংস।
বাংলাদেশ সুযোগ হারিয়েছে এরপরও, ১৬ রানে ফাহিমার বলে মিড অনে গার্ডনারের সহজতম ক্যাচ ফেলেন সোবহানা। নাহিদার বলে স্টাম্পিং হওয়ার আগে গার্ডনার করেন ৩২ রান। ওই উইকেট দিয়ে সালমা খাতুনকে (৫২) টপকে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে যান নাহিদা। ১০ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট, তবে শেষের ঝড়ে কিছুটা ম্লান হয়ে যায় সে পারফরম্যান্স।
নাহিদার ওই রেকর্ড গড়া উইকেটের পর জর্জিয়া ওয়ারেহাম ও সাদারল্যান্ডের ৩৪ রানের জুটি ভাঙেন পার্ট টাইমার স্বর্ণা আক্তার, স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন রাবেয়া। এরপর আর সাফল্যের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। শেষ ওভারে গিয়ে ফাহিমার তো অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডটাও হয়ে গেছে। প্রথম বলে অ্যালানা কিংকে স্ট্রাইক দিয়েছিলেন সাদারল্যান্ড, পরের ৫ বলে কিং তোলেন ২৮ রান! ১ ওভারে ২৯ রান দিয়ে মেয়েদের ওয়ানডেতে সবচেয়ে খরুচে ওভারের রেকর্ড হয়েছে ফাহিমার, যা আগে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার আয়াবঙ্গো খাকার (২৮)। ১০ ওভারে ফাহিমা দিয়েছেন ৬৭ রান, বাংলাদেশের হয়ে যা সবচেয়ে বেশি।
দারুণ ফর্মে থাকা সাদারল্যান্ড অপরাজিত ছিলেন ৭৬ বলে ৫৮ রানে, কিংয়ের সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ওঠে ৬৭ রান—বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে যা সর্বোচ্চ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২১৩/৭ (সাদারল্যান্ড ৫৮*, কিং ৪৬*, গার্ডনার ৩২, মুনি ২৫; নাহিদা ২/২৭, সুলতানা ২/৪২, স্বর্ণা ১/১৯)
বাংলাদেশ: ৩৬ ওভারে ৯৫ (নিগার ২৭, সোবহানা ১৭; গার্ডনার ৩/২২, গার্থ ২/২৬, শুট ১/৫, কিং ১/১২)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ১১৮ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: অ্যালানা কিং (অস্ট্রেলিয়া)