এমন ইনিংস ঘোষণার পরও হার—পাকিস্তানের আগে এ ‘দুর্ভাগ্য’ যাদের
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান যখন ইনিংস ঘোষণা করে, দলের অবস্থা বেশ ভালোই। মোহাম্মদ রিজওয়ান ছুটছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির পথে, আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদিও। শান মাসুদ আচমকাই ডেকে পাঠালেন দুই ব্যাটসম্যানকে। সে সময় ব্যাপারটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হয়েছিল।
১১৩ ওভার ফিল্ডিং করার পর দিনের শেষে গিয়ে ব্যাটিং করাটা সহজ কাজ নয়, এমন অবস্থায় বাংলাদেশের ২-১টি উইকেট নেওয়া গেলে তো স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়বে। তবে জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম তা হতে দেননি। এরপর থেকেই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে চলে বাংলাদেশের দাপট, যার শেষ পরিণতি—পাকিস্তানের হার।
ম্যাচ শেষে অবধারিতভাবেই মাসুদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ইনিংস ঘোষণা নিয়ে। তাতে কূটনৈতিক উত্তরই দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। তাঁর মতে, ম্যাচ সামনে এগিয়ে নিতে সেটি ছিল ইতিবাচক পদক্ষেপ, যাতে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের ওপর চড়াও হওয়া যায়। যে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো, তাতে পাকিস্তান অধিনায়কের এমন কৌশলে তখন তেমন কোনো সমালোচনা হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে গুবলেট পাকানোয় মনে হতেই পারে, বুমেরাং হয়ে গেছে মাসুদের প্রথম ইনিংসের ওই সিদ্ধান্ত!
তাতে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডও হয়ে গেছে পাকিস্তানের। প্রথম ইনিংসে ৬ বা এর কম উইকেট হারানোর পরও ইনিংস ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত টেস্ট হেরে বসা তৃতীয় দল এখন তারা। আগের দুবারের একটি ১৯৭৬ সালের ঘটনা, আরেকটি ২০০৬ সালের।
২০০৬ সালে অ্যাডিলেডের ইংল্যান্ডের সঙ্গে ২০২৪ সালে রাওয়ালপিন্ডির পাকিস্তানের ভালো মিলই আছে। সেবার প্রথমে ব্যাটিং করে পল কলিংউডের ডাবল সেঞ্চুরি ও কেভিন পিটারসেনের ১৫০ পেরোনো ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। জবাবে রিকি পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্কের সেঞ্চুরির পর অস্ট্রেলিয়া থামে ৫১৩ রানে।
অ্যাডিলেডে চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ৫৯/১। ম্যাচ অবধারিতভাবে ড্রয়ের পথে এগোচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ ভেবে থাকবেন এটিই। হয়তো ইংল্যান্ডও সেটিই ভেবেছিল। কিন্তু পরদিন তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, সেটি যদি জানত অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের দল!
১ উইকেটে ৬৯ রানের স্কোর থেকে ইংল্যান্ড অলআউট ১২৯ রানেই! দুদিন আগে শেন ওয়ার্ন গড়েছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের রেকর্ড (১/১৬৭)। সেই ওয়ার্ন এরপর চালালেন ঘূর্ণি-ঝড়। সঙ্গে ব্রেট লি আর গ্লেন ম্যাকগ্রার তোপে খেই হারায় ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য শেষ সেশনে অস্ট্রেলিয়াকে তুলতে হতো ১৬৮ রান। পন্টিং, মাইক হাসি আর ক্লার্ক এনে দেন স্মরণীয় এক জয়।
আর সে হারে ইংল্যান্ড ধাক্কা খায় বেশ বড়সড়। এমনিতেই প্রথম টেস্টে হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়েছিল তারা, অ্যাডিলেডে অমন হারের পর কার্যত মনোবল ভেঙেই যায় তাদের। ১৯২০-২১ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো অ্যাশেজে কোনো দল হয় ধবলধোলাই।
প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট বাকি রেখে ইনিংস ঘোষণা করার পর হারের অপর গল্পটি অবশ্য একটু অন্য রকম। সেটির ভুক্তভোগী ভারত। তবে একরকম বাধ্য হয়েই ইনিংস ঘোষণা করতে হয়েছিল তাদের।
জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কের সে উইকেটের বাউন্স ছিল অসম, এমনকি লেংথ থেকেও বল লাফিয়ে উঠছিল মাথা বরাবর। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের ভয়ংকর বোলিং। মাইকেল হোল্ডিংদের তোপে প্রথম ইনিংসে ভারতের প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের দুজনকেই মাঠ ছাড়তে হয় চোট পেয়ে। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ৩০৬ রান তুলেই প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। অধিনায়ক বিষান সিং বেদি পরে বলেন, তাঁকে ও আরেক স্পিনার ভগবত চন্দ্রশেখরকে ‘রক্ষা’ করতেই অমন সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে যায় ৮৫ রানে, তখনো ভারত ভালোভাবেই ম্যাচে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ৯৭ রান তোলার পরই শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস! কারণ, শেষ ৫ ব্যাটসম্যানের কেউই ব্যাটিং করার মতো শারীরিক অবস্থায় ছিলেন না!
প্রথম ইনিংসে চোট পাওয়া অংশুমান গায়কোয়াড়, ব্রিজেশ প্যাটেল ও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের সঙ্গে তালিকায় যোগ দেন বেদি ও চন্দ্রশেখরও। দুই স্পিনারই চোট পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের সময় ফিরতি ক্যাচ নিতে গিয়ে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, বেদি বোধ হয় আবার ব্যাটসম্যানদের রক্ষা করতেই ইনিংস ঘোষণার পথ বেছে নিয়েছিলেন। তবে বেদি পরে এক বিবৃতি দিয়ে নিশ্চিত করেন—তাদের ইনিংস শেষ হয়েছে ৫ জন ব্যাটসম্যান ‘আহত অনুপস্থিত’ থাকাতেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ রান, ১১ বলেই সেটি ছুঁয়ে ফেলে তারা। ৪ ম্যাচের সিরিজ স্বাগতিকেরা জেতে ২-১ ব্যবধানে।