ঘোষণাটি দিলেন এমন সময়ে, যার এক দিন আগে বাংলাদেশ দল দুবাই থেকে ঢাকা ফিরেছে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার হতাশা নিয়ে।
ঘোষণাটি দিলেন এমন মুহূর্তে, যখন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সময়ের হিসাবে সবচেয়ে বেশি ১৫ বছর ২৮১ দিনের ক্যারিয়ার তাঁর।
আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বার্তায় মুশফিকুর রহিম জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে খেলবেন না।
ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণ থেকে বিদায়কালে কী পদচিহ্ন রেখে গেলেন মুশফিক, একনজরে তা দেখে নেওয়া যাক—ম্যাচ: ১০২, ইনিংস: ৯৩, রান: ১৫০০, সর্বোচ্চ: ৭২*, গড়: ১৯.৪৮, স্ট্রাইক রেট: ১১৫.০৩।
এর সঙ্গে ৬টি ফিফটি, ৩৭টি ছয়, ৪টি ম্যাচসেরার পুরস্কার, উইকেটকিপিংয়ে ৪২টি ক্যাচ আর ৩০টি স্টাম্পিংও উল্লেখ করার মতো।
এত এত সংখ্যার ভিড়ে মুশফিককে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে স্ট্রাইক রেট নিয়ে। ১০২ টি-টোয়েন্টির ৯৩ ইনিংসে ব্যাট করে ১ হাজার ৩০৩ বল খেলে করেছেন ১৫০০ রান, স্ট্রাইক রেট ১১৫.০৩।
মুশফিকের রান তোলার এই গতি নিয়ে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ওয়াসিম আকরামও প্রশ্ন তুলেছিলেন। ধারাভাষ্যকক্ষে তিনি বলেছেন, ১০০–এর বেশি ম্যাচ খেলেও স্ট্রাইক রেট ১১৫ কেন?
শুধু রান তোলার গতিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে সঙ্গে যোগ হয়েছিল ছন্দে না থাকার অস্বস্তিও। সর্বশেষ ৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সাকল্যে তুলতে পেরেছেন মাত্র ৭৩ রান, যে কারণে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হয়, পরে নিজে যেটিকে ‘বাদ দেওয়া’ মন্তব্য করে বিসিবির কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়েছিলেন।
এরপর এশিয়া কাপের আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজেও বিশ্রাম দেওয়া হয় মুশফিককে। দলে ফেরেন এশিয়া কাপে, যেখানে দুই ম্যাচে তাঁর অবদান ৫ রান!
২০০৬ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল মুশফিকের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি যাত্রা, যা ছিল বাংলাদেশ দলেরই প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি।
১৬ বছরের এ যাত্রায় ভালো–মন্দ দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে মুশফিকের। সুখস্মৃতির মধ্যে আছে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় নিদাহাস ট্রফি; যেখানে লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন ৩৫ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে।
পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও অপরাজিত ৭২ রানের একটি ইনিংস আছে মুশফিকের। ৫৫ বলের সেই ইনিংসে অবশ্য দলকে জেতাতে পারেননি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই তাঁর সর্বোচ্চ রানের স্কোর।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলে দলকে জেতানো ম্যাচটি যদি মুশফিকের জন্য হয় আনন্দ-অনুভূতির, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বেদনাবিধুর।
নানা বিষয় নিয়ে বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচ শুরুর আগেই উত্তাপ ছড়িয়েছিল। ম্যাচেও রোমাঞ্চ কম ছিল না। শেষ ওভারে গড়ানো ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিততে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে দুটি চার মেরে আগাম জয় উদ্যাপন করে ফেলেছিলেন মুশফিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ!
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে মুশফিকের সেরা সময় ছিল নিদাহাস ট্রফির বছরটিই। সবচেয়ে বেশি ১৬ ম্যাচ খেলে রান করেছিলেন ৩৯৭, স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩২.৩৩, গড় ছিল ৩০.৫৩। ক্যারিয়ারের ৪টি ম্যাচসেরার ২টি এবং ৬ ফিফটির ৩টি ২০১৮ সালেই।
তবে এরপর আর টি–টোয়েন্টিতে ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি মুশফিক। ২০১৯ সালের নভেম্বরে থেকে গত তিন বছরে ফিফটি মাত্র দুটি। ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচ খেলে ১১৩.৩৮ স্ট্রাইক রেটে করেন মাত্র ১৪৪ রান।
তখন থেকেই পরবর্তী বিশ্বকাপে মুশফিককে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় ক্রিকেটাঙ্গনে।
সে প্রশ্ন সামনে রেখেই খেলতে গিয়েছিলেন এশিয়া কাপে।
কিন্তু মুশফিকের স্ট্রাইক রেট আর টি–টোয়েন্টিতে ছন্দহীনতা নিয়ে সমালোচনার যে ঝড় উঠেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট–আকাশে, সেটা আর সামলাতে পারলেন না।
বিদায় বলে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণকে।