ভারত–ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের আলোচিত ৩
ধর্মশালায় কাল পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডকে ইনিংস ও ৬৪ রানে হারিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে রোহিত শর্মার ভারত। দুই দলের জন্যই বিরাট চাপের এই সিরিজ শেষে সংবাদ সংস্থা এএফপি পেছন ফিরে দেখেছে তিনটি আলোচিত বিষয়।
নতুন প্রতিভার উত্থান
এবারের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজে দুই দলেই দেখা গেছে নতুন প্রতিভার উত্থান। ইংল্যান্ড ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারলেও তাদের অভিষিক্ত দুই স্পিনার শোয়েব বশির ও টম হার্টলি ভারতের মাটিতে দারুণ বোলিং করেছেন। দলের সিনিয়র স্পিনার জ্যাক লিচের অনুপস্থিতিতে বাঁহাতি হার্টলি ইংল্যান্ডের স্পিন-আক্রমণকে ভালোভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। হায়দরাবাদে টেস্ট অভিষেকেই ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। সব মিলিয়ে সিরিজে ৫ ম্যাচে ২৪ বছর বয়সী হার্টলি নিয়েছেন ২২ উইকেট। আরেক অভিষিক্ত ২০ বছর বয়সী অফ স্পিনার শোয়েব বশির ৩ ম্যাচে ৫ ইনিংস বল করে ইনিংসে দুবার ৫ উইকেটসহ নিয়েছেন ১৭ উইকেট।
এই সিরিজে ভারত দলে টেস্ট অভিষেক হয়েছে চারজনের। প্রত্যেকেই রেখেছেন প্রতিভার ছাপ। ব্যাটসম্যান সরফরাজ খান ও দেবদূত পাড়িক্কাল যেমন ভালো ব্যাটিং করেছেন, তেমনি প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ধ্রুব জুরেল ও সিমার আকাশ দীপ।
বাজবলের পতন
এই সিরিজের আগে ক্রিকেটবিশ্ব একটু রোমাঞ্চই অনুভব করছিল যে ভারতের পিচে ইংল্যান্ডের টেস্ট খেলার নতুন ধারা ‘বাজবল-স্টাইল’ কতটা কাজে লাগে। অধিনায়ক বেন স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের হাত ধরেই ইংল্যান্ড দলে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার এই ধরনের আবির্ভাব। হায়দরাবাদে বাজবলের ঝলক ভালোই দেখা গিয়েছিল। ওলি পোপ ১৯৬ রান করার পথে ভারতের স্পিনারদের নির্বিঘ্নে একের পর এক রিভার্স সুইপ করেছেন। ইংল্যান্ডও জিতেছে সেই ম্যাচ। কিন্তু পরের তিন টেস্টে ধারাবাহিক ব্যাটিং ধসের কারণে হেরে যায় তারা। এরপরই ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা
রাজকোটে তৃতীয় টেস্টে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হওয়ার পর জো রুট কঠিন সমালোচনার শিকার হন। ওই শটটিকে টেলিগ্রাফের ক্রিকেট লিখিয়ে শিল্ড বেরি বলেছেন ‘ইংলিশ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে গর্দভ শট’। পুরোনো স্টাইলে খেলে পরের ম্যাচে রুট অপরাজিত ১২২ রান করেন। যদিও সেই ম্যাচেও হেরে যায় ইংল্যান্ড
ঘরের মাঠে ভারতের আধিপত্য
ঘরের মাঠে ভারত সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ হেরেছে ২০১২ সালে। সেবার তাদের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছিল অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ড। এবারও হায়দরাবাদে ভারত প্রথম টেস্ট হারার পর সে রকম কিছুরই আভাস পাচ্ছিলেন অনেকে। হয়তো বিরাট কোহলিসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ তারকাকে ছাড়া খেলতে নামার ধাক্কার কারণেই অমনটা হয়েছিল ভারতের। কিন্তু সেই ধাক্কা কাটিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে ঘরের মাঠে নিজেদের চিরায়ত রূপে ধরা দেয় ভারত
২২ বছর বয়সী ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল ৯ ইনিংসে ৭১২ রান নিয়ে সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে করেছেন টানা দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। জিতেছেন সিরিজসেরার পুরস্কার। প্রথম ম্যাচের পর ভারতের স্পিনাররাও ফেরে ঘরের মাঠে তাদের সহজাত ছন্দে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন সিরিজ-সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট নিয়েছেন। রাজকোটে ছুঁয়েছেন ৫০০ উইকেটের মাইলফলক। আর ধর্মশালায় নিজের শততম টেস্টে নিয়েছেন ৯ উইকেট।