সাকিবের চেয়ে ‘সিরিয়াস’ কাউকে দেখছেন না বিসিবি সভাপতি
অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে যে নামটা সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছিল, সেই সাকিব আল হাসানকেই আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান তাঁর গুলশানের বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অধিনায়ক কে হচ্ছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ—সবগুলোর জন্যই (সাকিব) অধিনায়ক।’ তবে সাকিবকে দায়িত্বটা দীর্ঘ মেয়াদে দেওয়া হয়নি, ‘ওর সঙ্গে সে রকম (দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়কত্বের ব্যাপারে) আলোচনা হয়নি। ও দেশে এলে বলতে পারব। দীর্ঘ মেয়াদে ওর পরিকল্পনাটাও জানতে হবে।’
ওয়ানডের অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে থেকে টেস্ট ও টি–টোয়েন্টি সংস্করণে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সাকিব। বিসিবি মনে করছে, তিন সংস্করণের অধিনায়কত্ব সাকিবের জন্য চাপ হয়ে যাবে। নাজমুল হাসানের কথা, ‘একসঙ্গে তিনটা ওর ওপর বোঝা হয়ে যাবে। কাজেই ওর সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। ওর সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলাটা এখন কঠিন। একে তো ও দেশের বাইরে, তার ওপর একটা দলের হয়ে খেলছে। ওখানে ওরও কিছু ব্যস্ততা আছে। সে জন্য ওকে বেশি ডিস্টার্ব করতে চাইনি। আজকেও আবার ওর খেলা।’
সে জন্য আপাতত সাকিবকে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ‘মোটামুটিভাবে যেটা আমরা ঠিক করেছি, বিশ্বকাপ পর্যন্ত যে খেলা আছে, এই সময়টায় অবশ্যই সাকিব আল হাসান অধিনায়ক। ওর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব যে এটা কি দীর্ঘমেয়াদি, নাকি তিনটাই থাকবে, নাকি কোনোটা ছাড়বে। এগুলো ও এলেই কথা বলব।’
সাকিবকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়ার আরও একটা কারণ জানা গেল বোর্ডপ্রধানের কথায়, ‘ওর পটেনশিয়াল নিয়ে তো কোনো সন্দেহ নেই। একটা জিনিস খুব ভালো লাগছে আমার। সেটা হচ্ছে সাকিবকে নিয়ে আমার যে সন্দেহ ছিল, এটা আমার ব্যক্তিগত কথা, সে কতটা সিরিয়াস, কোন খেলাটা খেলবে কিংবা খেলবে না…। এখন দেখছি, ওর চেয়ে সিরিয়াস কেউ নেই ক্রিকেট নিয়ে।’
বোর্ডপ্রধান আরও যোগ করেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ খেলা, সেগুলো তো খেলছেই, এরপরও নিয়মিতই খেলে যাচ্ছে। কানাডায় গেল, এখন আবার শ্রীলঙ্কায় গেল। এই যে এখন বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব, আমার কাছে মনে হয়, সে এখন টোটালি ফোকাসড অন ক্রিকেট। এটা আমাদের জন্য খুব প্লাস পয়েন্ট। ওর সামর্থ্য নিয়ে কখনো কোনো সন্দেহ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’
ওয়ানডের নতুন অধিনায়কের আলোচনাটা অবশ্য আরও আগেই শুরু। গত জুলাইয়ে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। পরদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর অবসর ভেঙে ফিরলেও তামিম ৩ আগস্ট ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার পর অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এর পর থেকেই সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নামটা সবার মুখে মুখে। শেষ পর্যন্ত সেই সাকিবই পেয়েছেন। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফি বিন মুর্তজা চোটে পড়লে তিন সংস্করণেই সাকিবকে অধিনায়ক করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ মেয়াদে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারকে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে সাকিব জুয়াড়ির তথ্য গোপনের দায়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলে বিসিবিকে নতুন অধিনায়ক খুঁজতে হয়। এ সময় টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয় মাহমুদউল্লাহকে, টেস্টে মুমিনুল হককে। মাশরাফি বিন মুর্তজা দায়িত্ব ছাড়লে ওয়ানডের অধিনায়ক করা হয় তামিম ইকবালকে। ২০২২ সালে আবার অধিনায়কত্ব ফিরে পান সাকিব। জুন মাসে মুমিনুল হক সরে যাওয়ায় সাকিবকে টেস্টে অধিনায়ক করা হয়, আগস্টে গিয়ে পান টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বও। এবার এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসর সামনে রেখে ওয়ানডের নেতৃত্বেও ফেরানো হলো সাকিবকে।