অবৈধ বোলিং অ্যাকশন: রফিক–নাঈমুরকে দিয়ে শুরু, বাংলাদেশের আরও যাঁরা

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেই মোহাম্মদ রফিকের বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলএএফপি

‘সাকিব আল হাসানের বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ’—এই খবরটা বিস্ময় হয়েই এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই প্রথম যে এমন কিছু শোনা গেল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের বোলিং নিয়ে। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের পাকিস্তান ও ভারত সফরের মাঝখানে কাউন্টি ক্রিকেটে সারের হয়ে খেলার সময় সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাকিবের বোলিং অ্যাকশন এবারই প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বোলারের অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিষিদ্ধও হয়েছিলেন কয়েকজন। পরে বোলিং অ্যাকশন শুধরে বোলিং করার অনুমতি পেয়েছেন তাঁরা।

ওয়ানডে অভিষেকের পরপরই বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয় আবদুর রাজ্জাকের
প্রথম আলো

বাংলাদেশের বোলারদের দিকে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের তির সর্বপ্রথম ধেয়ে এসেছিল ২০০১ সালের শুরুতেই। সেই বছরের জানুয়ারিতে আইসিসি বাংলাদেশের দুই স্পিনার নাঈমুর রহমান ও মোহাম্মদ রফিকের বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানায়। আইসিসি জানায়, ২০০০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে এই দুই বোলারের বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক ছিল। তবে আইসিসি নাঈমুর-রফিককে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। আইসিসির বিধিমালা মেনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিয়োগ দেওয়া বোলিং বিশেষজ্ঞরা নাঈমুর ও রফিকের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে ছয় সপ্তাহ কাজ করেন। কিংবদন্তি ভারতীয় অফ স্পিনার এরাপল্লী প্রসন্নও এসেছিলেন।

রফিক-নাঈমুরের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয় আবদুর রাজ্জাকের। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে অভিষেকের পরই প্রশ্ন ওঠে তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। সতর্ক করে দিয়ে তাঁকে অবশ্য খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। চার বছর পর আর সেই সুযোগ পাননি রাজ্জাক। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আবার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন রাজ্জাক। অ্যাকশন শুধরে পরীক্ষা দিয়ে চার মাস পর ফেরার অনুমতি পান এই বাঁহাতি স্পিনার। ফেরেন ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে।

আরও পড়ুন

ছয় বছর পর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের আরও দুই বোলারের বোলিং নিয়ে প্রশ্ন তোলে আইসিসি। ওই বছরই প্রথম বাংলাদেশের কোনো পেসারের অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অফ স্পিনার সোহাগ গাজী ও পেসার আল আমিন হোসেনকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। দুবার অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে আবার ফেরার অনুমতি পান এই দুজন।

২০১৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ
শামসুল হক

অবৈধ বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনিটা খায় ২০১৬ সালে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলছিল তখন। ধর্মশালায় বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস প্রথম পর্বের ম্যাচটির পর পেসার তাসকিন আহমেদ ও বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশনকে অবৈধ ঘোষণা করে আইসিসি নিষিদ্ধ করে দুজনকে।

আরাফাত সানির অ্যাকশন নিয়ে আগেই থেকেই আলোচনা ছিল। তবে পেসার তাসকিনের অ্যাকশনও অবৈধ হওয়াটা বিস্ময় হয়েই আসে। বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা তো তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র–তত্ত্ব’ হাজির করেন।

আরও পড়ুন

সন্দেহভাজন হওয়ার পর বিশ্বকাপ চলাকালেই চেন্নাইয়ে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন আরাফাত সানি ও তাসকিন। সেখানেও তাঁদের অ্যাকশন অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় তাঁদের। পরে অ্যাকশন ত্রুটিমুক্ত করে ছয় মাস পর সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা দেন দুজন। সেই পরীক্ষায় পাস করে আবারও বোলিংয়ের অনুমতি ফিরে পান সানি-তাসকিনরা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাত বোলারের অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে অসংখ্য বোলারের বোলিং নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বারবার। বিসিবি তো বেশ কয়েকবার অ্যাকশনের পরীক্ষা নিয়ে নিষিদ্ধও করেছে অনেককে।

আরও পড়ুন