চেন্নাই-বেঙ্গালুরুতে নাজমূল আবেদীন কী দেখলেন, দেশে ফিরে কী করতে চান
ভারতের জার্সি গায়ে ঋষভ পন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন, এই দৃশ্য দেখলেই নাকি বেঙ্গালুরুতে ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির (এনসিএ) চিকিৎসক, ফিজিও, ট্রেনারদের বুক গর্বে ভরে যায়। ২০২২ সালের গাড়ি দুর্ঘটনার পর যে পন্তের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাই ছিল শঙ্কায়, সেই পন্তই এ বছরের আইপিএল দিয়ে ক্রিকেটে ফিরেছেন, ভারতের হয়ে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। বাংলাদেশ সিরিজ দিয়ে ফিরেছেন প্রিয় সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেটেও। আর প্রত্যাবর্তনটাও হলো স্মরণীয়। প্রথম ইনিংসে ৩৯, দ্বিতীয় ইনিংসে ঝলমলে ১০৯। উইকেটের পেছনে সেই সদা সজাগ পন্তকে দেখে মনে হয় না, তিনি মাঝের এক-দেড় বছর জীবনযুদ্ধে লড়াই করেছেন।
এনসিএর চিকিৎসক, ফিজিও, ট্রেনারদের কাজই পন্তের মতো ক্রিকেটারদের মাঠে ফিরিয়ে আনা। ভারতের ক্রিকেটাররা চোট ও পুনর্বাসনের যুদ্ধে একা নন, তাদের পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে আছে বিজ্ঞান ও পেশাদারি। ফর্মহীনতায় ভোগা খেলোয়াড়দের দক্ষতার উন্নতি এনে আবার জাতীয় দলে ফেরানোর জন্য আছে কোচ ও অ্যানালিস্টের কৌশলগত জ্ঞান। এই সুযোগ-সুবিধা পেতে ক্রিকেটারকে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হতে হয় না। জাতীয় দলের পাইপলাইনে থাকা খেলোয়াড়দের সবাইকেই এনসিএর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল এখানকার ক্রিকেটটাকে কাছ থেকে দেখা। ভারতের ক্রিকেটকে এর আগেও দেখা হয়েছে, তবে সেটা খুব কাছ থেকে নয়। যাদের সঙ্গে এবার মিশলাম, তাদের সঙ্গে আগে মেশার সুযোগ হয়নি। আমার আসার মূল উদ্দেশ্য মূলত সেটাই।নাজমূল আবেদীন, বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট কোচ
ভারতীয় ক্রিকেটের ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’; এই এনসিএ নিয়ে এত কথার একটা কারণ আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক নাজমূল আবেদীন চেন্নাই টেস্ট দেখতে এসে বেঙ্গালুরুর এনসিএ ঘুরে এসেছেন। সেখানে কীভাবে কাজ হয়, তা জেনে–বুঝে সে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ ক্রিকেটে কাজে লাগাতে চান এই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ‘আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল এখানকার ক্রিকেটটাকে কাছ থেকে দেখা। ভারতের ক্রিকেটকে এর আগেও দেখা হয়েছে, তবে সেটা খুব কাছ থেকে নয়। যাদের সঙ্গে এবার মিশলাম, তাদের সঙ্গে আগে মেশার সুযোগ হয়নি। আমার আসার মূল উদ্দেশ্য মূলত সেটাই।’
ভারতে এর আগে আরও যাওয়া হলেও তখন তিনি বিসিবির পরিচালক ছিলেন না। এবার নতুন পরিচয়ে ভারতে আসায় তৃণমূল ক্রিকেট থেকে রাজ্যগুলোর ক্রিকেট কাঠামোর বিভিন্ন তথ্য জমা হচ্ছে নাজমূল আবেদীনের নোটবুকে। নাজমূল আবেদীনের এনসিএ ঘুরে আসার অভিজ্ঞতাটা তাঁর মুখ থেকেই শুনুন, ‘বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছিল। এখন নতুন করে আরও একটি বিশাল একাডেমি হচ্ছে, যা এ মাসেই উদ্বোধন হবে। যা দেখলাম, সেখানকার পুরো একাডেমিটা ফাইভ স্টার হোটেলের মতো করে সাজানো। সবকিছু আছে সেখানে। একজন ক্রিকেটারের যা দরকার সব।’
নাজমূল আবেদীন যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন চোখের সামনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনের ছবিটা মাথায় এল। যেখানে খেলোয়াড়েরা থাকেন মেস কিংবা ব্যাচেলর বাসার আবহে। বিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তার অফিসও একাডেমি ভবন। আর ভারতের এনসিএ? উত্তরটা নাজমূল আবেদীনই দিলেন, ‘তাঁরা নিজেদের আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চায়, তাই ক্রমাগত উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছে এনসিএ। অফিস, জিম, সুইমিং…সেখানে ৮০টির বেশি উইকেট আছে। সব কটি এত সুন্দর করে সাজানো, ঘাস ট্রিম করা, একদম অভাবনীয়, মনে হয় স্টেট অব আর্ট।’
ভারতীয় ক্রিকেটের এমন কর্মযজ্ঞের পেছনে লক্ষ্য একটাই, খেলোয়াড়দের উন্নতি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কথায়–কথায় তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের উদাহরণ দিলেন নাজমূল আবেদীন। কাল খেলা শেষে তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পি অশোক সিগামানির সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। দুজনের কী কথা হয়েছে, সেটি জানালেন নাজমূল, ‘এই যে স্টেডিয়ামটা, এটাকে ওরা কীভাবে পরিচালনা করে, স্টেডিয়ামের ভেতর দেখলাম, কী চমৎকার একটা ইনডোর আছে, জিম আছে। ইংল্যান্ডের একজন এখানকার জিম পরিচালনা করেন। ওদের ক্রিকেট ট্রেনিং যে ফ্যাসিলিটিজ আছে, নেট, উইকেট…বোঝা যায় যে ক্রিকেটাররাই ওদের সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে। কী করলে ক্রিকেটাররা আরও ভালো করবে, সেভাবেই সব গোছানো।’
এর আগে দেশের বাইরে খেলা দেখতে গিয়ে বিসিবির অনেক পরিচালকেরই অন্য দেশের ক্রিকেট কাঠামো দেখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এবার পরিচালকের ভূমিকায় নাজমূল আবেদীন এসেছেন বলেই আশাবাদী হওয়া যায়।
ভবিষ্যতে তামিলনাড়ু অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বিসিবির ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের’ আলাপও করেছেন তিনি, ‘আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বললাম, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ব্যাপারে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, মেয়েদের দল…এ ধরনের যদি প্রোগ্রাম করা যায়…। ওই ভদ্রলোক খুবই আগ্রহ দেখালেন। উনি নিজেই যোগাযোগ করার কথা বললেন। আশা করছি ভবিষ্যতে এখানে যদি কোনো কোচিং প্রোগ্রাম কিংবা কোনো দল পাঠানো…এসব নিয়ে কাজ করা যাবে। ’
আইসিসি অনুমোদিত বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা করার ল্যাব শ্রী রামচন্দ্র হাসপাতালও ঘুরে দেখার ইচ্ছা নাজমূল আবেদীনের। ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের’ আলাপ করতে চান তাদের সঙ্গেও, ‘শ্রী রামচন্দ্র হাসপাতালে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে বায়োমেকানিক্যাল–সংক্রান্ত। দেখি ওদের সঙ্গেও কোনো অ্যাগ্রিমেন্টে আসতে পারি কি না। আমাদের খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করার ব্যাপারে ওদের কোনো সাহায্য নেওয়া, আমাদের লোকজনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটা দেখতে চাইব। আমাদের দেশে রামচন্দ্রের মতো কিছু করা যায় কি না, এ ব্যাপারেও ওদের সাহায্য নিতে চাইব।’
এর আগে দেশের বাইরে খেলা দেখতে গিয়ে বিসিবির অনেক পরিচালকেরই অন্য দেশের ক্রিকেট কাঠামো দেখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এবার পরিচালকের ভূমিকায় নাজমূল আবেদীন এসেছেন বলেই আশাবাদী হওয়া যায়।