‘তাদের কিছু যায়–আসে না’, আইসিসি আর ভারতের মতো বোর্ডের সমালোচনায় ওয়াহ
নিউজিল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সারির দল পাঠানো টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যুর মুহূর্ত নির্ধারণী কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। আইসিসি এবং শীর্ষ ক্রিকেটখেলুড়ে দেশের বোর্ডগুলোর টেস্ট ক্রিকেটের এমন অবস্থায় কিছু যায়–আসে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এটি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতি অসম্মান বলেও মনে করেন ওয়াহ।
আগামী মাসে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ দুটি ম্যাচ খেলতে নিউজিল্যান্ডে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সে সময়ে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ এসএ–টোয়েন্টি। সেরা খেলোয়াড়দের সেখানে সুযোগ করে দিতে নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য ১৪ জনের দল ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে অধিনায়ক নিল ব্র্যান্ডসহ ৭ জন অভিষেকের অপেক্ষায়।
সেই স্কোয়াডের সদস্যদের একটি ছবি পোস্ট করে ওয়াহ ইনস্টাগ্রামে লেখেন, ‘এটিই কি টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যুর একটি নির্ধারণী মুহূর্ত? আইসিসির পাশাপাশি ভারত, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার অবশ্যই খেলার বিশুদ্ধতম এই সংস্করণ রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত।’ এরপর সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, ‘অবশ্যই তাদের কিছু যায়–আসে না।’
সামনের বছরগুলোতে বক্সিং ডে টেস্টের মতো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের অন্যতম বড় ইভেন্টের ওপরও প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন ওয়াহ, ‘নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের দেশে রেখে দেওয়া হবে—দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডে এটি যদি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত হয়, তাহলে এমনই ঘটবে। আমি যদি নিউজিল্যান্ড হতাম, তাহলে আমি এ সিরিজটি খেলতামই না। আমি জানি না, তারা কেন খেলছে। কেন খেলছেন আপনি, যখন এটি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতি সম্মানের ঘাটতি?’
সমস্যাটা কোথায়, সে ব্যাপারে ওয়াহ বলেছেন, ‘সমস্যা কী, সেটি মোটামুটি স্পষ্টই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের পূর্ণ শক্তির দল পাঠাচ্ছে না (অস্ট্রেলিয়ায়)। কয়েক বছর ধরেই তারা পূর্ণ শক্তির দল নির্বাচন করছে না। নিকোলাস পুরানের মতো একজন সত্যিকারের টেস্ট ব্যাটসম্যান যে টেস্ট ক্রিকেট খেলে না। জেসন হোল্ডার, হয়তো তাদের সেরা খেলোয়াড়—এখন খেলছে না। এমনকি পাকিস্তানও পূর্ণাঙ্গ দল পাঠায়নি (অস্ট্রেলিয়ায়)।’
দ্রুত এগিয়ে না এলে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সুবিধার নয়, ওয়াহর আশঙ্কা এমন, ‘যদি আইসিসি বা কেউ দ্রুত এগিয়ে না আসে, তাহলে টেস্ট ক্রিকেট আর টেস্ট ক্রিকেট থাকল না। কারণ, আপনি সেরা খেলোয়াড়দের বিপক্ষে নিজেকে “টেস্ট” (পরীক্ষা) করছেন না।’
ইনস্টাগ্রামের পোস্টেই ওয়াহ টেস্টে সবার জন্য সমান একটি ম্যাচ ফির কথা বলেছেন। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে সেটি আরেকটু ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝি, কেন খেলোয়াড়েরা আসছে না। তারা ঠিকঠাক টাকা পাচ্ছে না। আমি বুঝি না, আইসিসি বা শীর্ষ দেশগুলো—যারা অনেক টাকা কামাচ্ছে, তারা কেন টেস্ট ম্যাচের জন্য একটা ম্যাচ ফি নির্ধারণ করে দেয় না, যেটি দামি। যাতে লোকে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে উৎসাহিত হয়।’
সেটি না হলে টেস্টের প্রতি আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন ওয়াহ, ‘অন্যথায় তারা শুধু টি-টেন বা টি-টোয়েন্টি খেলবে। লোকে এতে ভুগবে, কারণ পূর্ণাঙ্গ দল না খেললে এটি টেস্ট ক্রিকেট নয়।’
এমনিতে আইসিসির লভ্যাংশের একটা বড় অংশ পায় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই (ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড)। ২০১৭ সালে আইসিসির টেলিভিশন স্বত্ত্বের ২২ শতাংশ (প্রায় ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার) পেত ভারত, ২০২৩ সালে এসে যেটির পরিমাণ প্রায় ৩৮ শতাংশ (৪.৫ বিলিয়ন) হয়। ওয়াহ তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিশ্চয়ই মূল্য আছে। আমরা যদি শুধু লভ্যাংশকেই মানদণ্ড ধরে নিই, তাহলে ব্র্যাডম্যান, গ্রেস, সোবার্সের লিগ্যাসি তাৎপর্যহীন হয়ে পড়বে।’