মিম–রাজ্যে ‘উধাও’ গিল, ফেরাল সারার চোখের পানি
নামগুলো আগেই লিখে রেখেছিলেন অনেকে। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ‘পাবলিশ’ বাটনে চাপ দেওয়া। বড়জোর এক-দুটি নাম, যা এদিক-সেদিক হওয়ার, বেশির ভাগ তো জানাই!
কিন্তু অজিত আগারকার-রোহিত শর্মার সংবাদ সম্মেলন থেকে যে নামগুলো টিভির পর্দায় ভেসে উঠল, তাতে বেশ চমকেই উঠলেন এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের খসড়া বানিয়ে রাখা সংবাদকর্মী-টুইটার ইনফ্লুয়েন্সাররা। শুবমান গিল নেই! নেই মানে এশিয়া কাপের ভারত দলে নেই। তিন মাস আগেও যাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটের আগামীর বিজ্ঞাপন বলে কথায়-লেখায় হাজারো শব্দ ব্যয় করা হয়েছে, সেই গিলই নেই এশিয়া কাপের দলে।
চট করে যাঁরা সমীকরণ মেলাতে পারেন, ক্ষণিকের মধ্যে জবাবও পেয়ে গেলেন তাঁরা। ২৩ বছর বয়সী এই ওপেনারের ব্যাট তো গেল কিছুদিন কথা বলেনি। এই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেললেন সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে। একটাতেই শুধু দুই অঙ্কে গেছেন, বাকি চারটায় ৩, ৭, ৬, ৯। এমন পারফরম্যান্সের পর তো বাদ পড়াই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমজনতার এত হিসাব মেলানোর সময় কোথায়? কি-বোর্ডের একেকটি চাপে রচিত হতে শুরু করল এমন সব ‘নেই’ এর গল্প। অবাক হওয়ার গল্প। মাথায় বজ্রপাতের গল্প! সুদর্শন গিলের সঙ্গে কুৎসিত এই ‘আচরণে’র প্রতিবাদে বিদ্রোহের বাণও ছোটাতে শুরু করলেন কেউ কেউ। গিল নেই যেন কিছু নেই!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঝড়ের ঝাপটা পড়ল স্টার স্পোর্টসের কার্যালয়ে। আরে, গিল গেল কই! গেল কয়েক মাসে লোকেশ রাহুল ছিলেন না, শ্রেয়াস আইয়ার ছিলেন না। তাঁরা ঠিকই ফিরে এলেন। কিন্তু ওপেনিংয়ে নিজের নাম খোদাই করে ফেলা গিলই কি না উধাও! স্টার স্পোর্টসের ১৭ জনের দলে নাম-ছবি তো ১৭টাই আছে। উত্তেজনার বশে ভুল করে সেখানে গিলকে না রাখলে টুপ করে ঢুকে পড়লেন কে?
কেউ একজন ভুল ভাঙালেন। সঞ্জু স্যামসনের তো ‘রিজার্ভ টিম’ নামের ‘শো পিসে’ থাকার কথা, সেখান থেকে মূল দলে এলেন কীভাবে?
ভুল বুঝতে পেরে কেউ জিভ কাটলেন, কেউ কাটা যাওয়া মুখের ভোঁতা হওয়া ঠেকাতে চাপলেন কি-বোর্ড। গ্রাফিকসে ফিরিয়ে আনা হলো গিলকে। বেলা ১টা ২৬-এ গিল ছাড়া ভারত, তাই ১টা ৩৪-এ গিলসহ ভারত!
ততক্ষণে ‘টেকটোনিক প্লেটে’ ক্ষণিকের নড়নচড়নে কম্পন যা ঘটার ঘটে গেছে। সামান্য দল ঘোষণা করতে গিয়ে এমন (অ)কাণ্ড! টুইটারে শুরু হলো লঙ্কাকাণ্ড। মুম্বাইয়ে বলিউড আছে, দু-চার-দশ মিনিটে মৃতকে জীবিত করা সেখানে আঙুলের খেল। দিল্লিতে বলিউড ধামাকা নেই, তো কী হয়েছে? আর বিসিসিআইয়ের লোকেরাও সিনেম্যাটিক ব্যাপার-স্যাপার জানে না কে বলেছে! গিলের না থাকা আর থাকাটা দিয়ে আসলে সিনেম্যাটিং ব্যাপারই ঘটানো হয়েছে।
কিন্তু নাহ, এ ঠিক মেলে না।
তাহলে মনে হয় ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আছে। কেমন? গিল খেললে অন্য কারও ‘সুপারস্টার’ হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সেটা থামাতেই ছুড়ে ফেলা হয়েছিল তাঁকে। খবরটা শুনে গিল যে-ই না বিসিসিআই অফিসের দিকে রওনা হয়েছেন, শুনে নামটা জুড়ে দিয়েছেন নির্বাচকেরা।
নাহ, কল্পনার ঘোড়ায় চড়ে এসব গল্প বানানোই যায়। গিল-কে গেরোয় আটকে কার গলায়ই–বা আর মালা পরাবেন আগারকাররা। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব সত্য নয়।
সত্য তাহলে কোনটা?
স্বজনপ্রীতি তত্ত্ব? সেটা কেমন?
গুঞ্জন আছে, শচীন টেন্ডুলকার-কন্যা সারার সঙ্গে গিলের ‘দহরম-মহরম’ আছে। ইদানীং সামনাসামনি দেখা সাক্ষাৎ কমই হয়। লোকে নানা গল্প ছড়ায়। কিন্তু লোকে বলাবলি করেন, দুজনের মনের মধ্যে তো ভালো লাগা আছে। একে অপরের ভালো-মন্দ অনুভূতি আছে।
গিলকে এশিয়া কাপের দলে না দেখে তাই ভীষণ খারাপ লেগেছে সারার। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেন বাবা শচীনের কাছে—বাবা, বাবা, এশিয়া কাপের দল দেখেছ? কন্যার চোখের কোণে খানিকটা কান্নার মেঘ দেখলেন শচীন। ঝর ঝর বাদলও দিনের ঘনঘটা! শচীন ফোন লাগালেন বন্ধু আগারকারকে। প্রধান নির্বাচকের চেয়ারে বসলে কী হবে, বন্ধুত্বের জয়গান তো জীবনেরই আস্বাদ। আগারকার দলে ঢুকিয়ে দিলেন গিলকে। ব্যস, সারার কান্না শেষ, ভারতও সুখ-শান্তির দেশ!
* সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মিম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে।