জয়াবর্ধনে কি বাংলাদেশকে খোঁচা দিলেন
মাহেলা জয়াবর্ধনের টুইটটি তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের ‘লেট কাট’-এর মতো। ধারাভাষ্যকাররা যা বলতেন, সেটি বাংলাং ‘নিপুণ স্পর্শ’—এতটা দেরিতে এবং এত মসৃণভাবে খেলতেন যে, দেখে মনে হতো বলে ব্যাটের রেশমি স্পর্শ। আসলে খোঁচা–ই তো!
শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি শটটি খেলতেন স্লিপে ফিল্ডার দেখলে, ব্যাটের সামান্য স্পর্শেই বলটা থার্ডম্যান বাউন্ডারি সীমানা পেরিয়ে বোলারের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাত।
এশিয়া কাপে কাল বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ২ উইকেটে জয়ের পর জয়াবর্ধনে তাঁর সেই ‘ডেফট টাচ’-এর মতোই এমন এক মন্তব্য করেন, যা পড়ে বোঝা যায় কথাটার মধ্যে বাংলাদেশ দলের প্রতি পরোক্ষ এক খোঁচা আছে। অনেকটাই তাঁর ‘লেট কাট’ শটের মতোই, খেলতেন চার মারার জন্য, কিন্তু শুধু শটটি দেখে বোঝা যেতে না যতক্ষণ না বল সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে দুই দলের মাঝে হয়েছে কথার লড়াই। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা বলেছিলেন, আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষ। সাকিব আল হাসান আর মোস্তাফিজ ছাড়া বাংলাদেশ দলে বিশ্বমানের আর কোনো বোলারই নেই। এই মন্তব্য শোনার পর জবাব দেন বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ, ‘আমি তো শ্রীলঙ্কার কোনো বোলারই দেখি না। আমাদের তবু দুজন বোলার আছে। তাদের সাকিব আর মোস্তাফিজের মানেরও কোনো বোলার নেই।’
খালেদ মাহমুদের এই মন্তব্যের পর চুপ করে থাকেননি শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক জয়াবর্ধনে। টুইট করেন, ‘মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বোলারদের নিজেদের মান দেখানোর সময় এটা। আর ব্যাটসম্যানদের সময় এসেছে এটা দেখানোর যে মাঠে তারা কেমন...।’ বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার নুরুল হাসানও বলেন, এই ম্যাচে বাংলাদেশই ফেবারিট।
দুবাইয়ে কাল ম্যাচের আগে এই পর্যন্তই হয়েছে কথার লড়াই। শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে জিতে সুপার ফোরে ওঠার পর টুইটটি করেন জয়াবর্ধনে, ‘ভালো খেলেছ ছেলেরা! চাপের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত লড়াইয়ে তুলে নেওয়া জয়...পারফরম্যান্সটা যে বিশ্বমানের তা নিরাপদেই বলা যায়।’
জয়াবর্ধনের এই টুইটে দুটি শব্দ চোখে বিঁধতে পারে—বিশ্বমান ও নিরাপদ। ব্যাটিং ও বোলিং মিলিয়েই দাসুন শানাকার দলের পারফরম্যান্সকে বিশ্বমানের বলেছেন জয়াবর্ধনে। আর নিরাপদ শব্দটা ব্যবহার করেছেন কারণ, দুর্দান্ত এই জয়ের পর কেউ অন্তত পারফরম্যান্স নিয়ে পাল্টা যুক্তি দিতে আসবে না। তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে, শ্রীলঙ্কার বোলারদের পারফরম্যান্স কি আসলেই বিশ্বমানের ছিল?
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই যে দল (বাংলাদেশ) মাত্র ১২৭ রান তুলতে পেরেছে, সেই দলের বিপক্ষে বোলাররা ১৮৩ রান দিলে—তাকে আর যাই হোক বিশ্বমানের পারফরম্যান্স বলা যায় না। তারপরও বোলারদের পারফরম্যান্সকেও ‘বিশ্বমান’-এর ব্রাকেটবন্দী করেছেন সম্ভবত খালেদ মাহমুদের সেই মন্তব্যের সূত্র ধরে। শ্রীলঙ্কা দলে যে বিশ্বমানের বোলার নেই, সেটাই বুঝিয়েছিলেন মাহমুদ। টুইটে সম্ভবত তাঁর সেই মন্তব্যেরই বুদ্ধিদীপ্ত পরোক্ষ জবাব দিয়েছেন জয়াবর্ধনে।
আরও একটি বিষয় আছে। মাহমুদ বলেছিলেন, বাংলাদেশের তবু সাকিব-মোস্তাফিজের মানের বোলার আছে। কিন্তু এ দুজন বোলার নিয়েও ১৮৩ রানের পুঁজি জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।
সেটি যে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের বিশ্বমানের ব্যাটিংয়ের কারণে, ম্যাচটি যারা দেখেছেন সবাই তা স্বীকার করবেন। লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ছিল বিশ্বমানের, বোলারদের নয়। সাকিব ও মোস্তাফিজকে নিয়ে বাংলাদেশ দল যেহেতু তাঁদের আটকাতে পারেনি, তাই টুইটে সচেতনভাবেই নিরাপদ শব্দটা ব্যবহার করেছেন জয়াবর্ধনে।
লঙ্কান বোলাররা বেশি রান দিয়ে ফেললেও ব্যাটসম্যানরা যেহেতু শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিয়েছেন, তাই সবাইকে বিশ্বমানের পারফরম্যান্সের ব্রাকেটবন্দী করতে কার্পণ্য করেননি জয়াবর্ধনে। কারণ, সাকিব-মোস্তাফিজকে বিশ্বমানের বোলারের কাতারে ফেলে বড় পুঁজি নিয়েও যেখানে জয়ের দেখা মেলেনি, সেখানে লঙ্কান বোলাররা অন্তত তাঁদের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যের বাইরে, এমন কোনো লক্ষ্য এনে দেননি। আর দল যেহেতু জিতেছে তাই বোলারদের পারফরম্যান্সকে বিশ্বমানের কাতারে ফেললে কেউ অন্তত পাল্টা সমালোচনা করবে না।
কিন্তু মাহমুদ ম্যাচের আগেই বাংলাদেশের দুই বোলারকে বিশ্বমানের কাতারে ফেলে হার মানায়, কখন কোন কথাটা বলা নিরাপদ, টুইটে সেটাও হয়তো বুঝিয়েছেন জয়াবর্ধনে।