ওপরের কারও বড় ইনিংস খেলতেই হবে
গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, ইংল্যান্ডের এমন পারফরম্যান্সের কারণ কী। হয়তো আমরাও সেটি থেকে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছি। তাদের মতো চ্যাম্পিয়ন দলের এমন অবস্থার পেছনে কারণ থাকলে বাংলাদেশ দলেরও হয়তো কিছু হয়েছে।
হ্যাঁ, ইংল্যান্ড তাদের সামর্থ্যের ধারেকাছেও খেলতে পারছে না, দায়িত্ববোধের অভাব লক্ষ করছি। হয়তো বেশি ক্রিকেট খেলা বা সাফল্যের আত্মতুষ্টিও কারণ হতে পারে। কিন্তু আমরা জানি, এ মুহূর্তে খারাপ করলেও তারা নিশ্চিতভাবেই ঘুরে দাঁড়াবে। এটি তাদের সঙ্গে আমাদের একটা মৌলিক পার্থক্য।
আজকের ম্যাচে জয়-পরাজয়ের চেয়েও মাথার মধ্যে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের দলগতভাবে খেলতে না পারা। অধিনায়ক নিজেও এতটা বিচলিত যে সমস্যার সমাধান খুঁজতে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। বাকিদেরও সমস্যা এমনই। এ টুর্নামেন্টে একক নৈপুণ্যে সান্ত্বনা থাকলেও দলীয় প্রাপ্তি মিলছে না। সাকিব আল হাসান ঢাকা থেকে হয়তো বাড়তি একটু চাপই নিয়ে গেলেন এবার। দলকে জেতানো এখন প্রধান কাজ, তবে একক নৈপুণ্যে কিছু করা কঠিন।
সৌরভ গাঙ্গুলীর একটা সাক্ষাৎকার দেখছিলাম, কলকাতার উইকেটটা ভালো, আউটফিল্ড ফাস্ট হবে। ফর্মহীনতায় থাকা ব্যাটসম্যান যেটি সব সময়ই চায়। যে দলই আজ জিতুক, মূল ভূমিকা থাকবে ব্যাটসম্যানদেরই। স্বাভাবিকভাবেই ফাস্ট আউটফিল্ডে ফিল্ডিং গুরুত্বপূর্ণ, বোলারদেরও অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। তবে জয়ের মূল চাবিকাঠি ব্যাটসম্যানদের হাতেই থাকবে।
ব্যাটিং লাইনআপে খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। বিকল্প ওপেনারও নেই হাতে। সব মিলিয়ে সর্বশেষ ম্যাচের একাদশ থেকে একটিই পরিবর্তন আসতে পারে। তাসকিন আহমেদ সত্যিই পুরো ফিট হয়ে থাকলে তিনি আসতে পারেন, না হলে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে তানজিম হাসানকে। নাসুম আহমেদের খেলা উচিত। তবে আবারও বলছি, ওপরের দিকে বড় ইনিংস না হলে শেষ দিকে সেঞ্চুরি করেও লাভ নেই। ম্যাচ জিততে গেলে ওপরের কারও বড় ইনিংস খেলতেই হবে।
পয়েন্ট তালিকায় হয়তো নেদারল্যান্ডস সবার নিচে, কিন্তু তাদের বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান ক্রিজে সময় কাটিয়েছেন। স্কট এডওয়ার্ডস, কলিন অ্যাকারম্যানরা উইকেট ধরে রাখতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের অভিজ্ঞতাও আছে।
বাস ডি লিডি আগের ম্যাচে অনেক রান দিলেও যথেষ্ট ভালো অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের মতো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও তেজা নিদামানুরু কার্যকর হতে পারেন। আর তাদের দেখে মনে হয় সব সময় দল হিসেবে খেলে, উৎফুল্ল লাগে, চাঙা লাগে। ম্যাচের ফল যা-ই হোক না কেন, প্রাণশক্তিতে ভরপুর দলটি। এখন তাদের হারানোরও কিছু নেই তেমন।
এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লক্ষ্যগুলোর একটি ছিল নেদারল্যান্ডসকে সহজে হারানো। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের যা অবস্থা, তাতে তাদের হারাতে গেলে বেশ ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এগিয়ে থাকলেও সতর্ক থাকতে হবে। প্রথম ১০ ওভারে উইকেট পড়ে গেলে কিন্তু ইনিংস গঠন করতে হবে। কুইন্টন ডি কক, বিরাট কোহলিরা দেখিয়েছেন, মাঝের ওভারগুলোতে কীভাবে ইনিংস গড়তে হয়।
আমার মনে হয়, টসে জিতলে দুই দলই আগে ব্যাটিং করতে চাইবে। ব্যাটসম্যানরা ফর্মে নেই বলে অনেক কিছুই ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ মাঠে সম্প্রতি ওয়ানডে বেশি হয়নি, ফলে পিচ দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বরাবরের মতোই নিজেদের শক্তির ওপরই ভরসা করা উচিত।
বাকি যে ম্যাচগুলো আছে, সেগুলোতে নিজেদের ধরনের ওয়ানডে খেলার চেষ্টাই করা উচিত। যে ধাঁচে খেলে বাংলাদেশ নিজেদের মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত করেছে ওয়ানডেতে। নেদারল্যান্ডস এ বিশ্বকাপে সবচেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ, ফলে তাদের বিপক্ষে এ কাজ শুরু করাটা সহজ। কিন্তু এ ম্যাচে সুস্পষ্ট ব্যবধানে জয়ের বিকল্প নেই।
✍️গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক