আজই সিরিজ জয়ের আশা বাংলাদেশের
রানআপ দেখে মনে হতে পারে অফ স্পিনার। তবে ট্রাউজারে বল ঘষার ধরনটা পেসারদের মতোই। খেলোয়াড়ি জীবনে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ছিলেন মিডিয়াম পেসার। গতকাল নাজমুল হোসেনের নেটে সেই সত্তাই যেন ফিরে এল বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কান কোচের। ছোট রানআপে মিডিয়াম পেসই করছিলেন।
গতকাল নেটে যেন হাথুরুসিংহের বাড়তি মনোযোগই পেলেন নাজমুল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে কমবেশি অবদান রেখেছিলেন সবাই। তার মধ্যেও উজ্জ্বল ছিলেন ঝোড়ো ফিফটি করে ম্যাচসেরা হওয়া নাজমুল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিই যখন বাংলাদেশকে দিচ্ছে সিরিজ জয়ের হাতছানি, তখন ইংলিশদের কিছুটা বাড়তি নজর তো পাবেনই এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
চট্টগ্রামে প্রথম টি–টোয়েন্টিটা ৬ উইকেটে জিতে বাংলাদেশ এখন ১–০–তে এগিয়ে। মিরপুরে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি জিতে গেলে তো সিরিজ জেতা হয়ে যাবে আজই, না জিতলে বাড়বে অপেক্ষা। ১৪ মার্চ শেষ ম্যাচে সিরিজ জয়ের আরেকটি সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের।
এই দুই সুযোগের যেকোনো একটি কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতে গেলে সেটি হবে এ সংস্করণে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অর্জন। আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ দুটিতে ঘরের মাঠের সুবিধা বাংলাদেশ একটু বেশিই পেয়েছিল। সে তুলনায় চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডকে হারানোটা বেশি তৃপ্তির কারণ, কন্ডিশনের সহায়তায় নয়, বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্সেই এসেছে জয়টা।
ইংল্যান্ড সিরিজের আগে হওয়া বিপিএলে মিরপুরে বেশ ব্যাটিং–সহায়ক উইকেটই ছিল। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেও হয়েছে এ মাঠে। প্রথম ম্যাচের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ কঠিন হলেও দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেট ছিল তুলনামূলক সহজ। সে সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডও তুলেছিল ৩০০ পেরোনো রান। অবশ্য আজও ভালো উইকেটই আশা করছে বাংলাদেশ। দলের পেসার হাসান মাহমুদের কথায় সেটিই বোঝা গেছে গতকাল, ‘খেলা যেহেতু মিরপুরে, উইকেট ভালোই হবে। এখন পর্যন্ত আমরা খুব ভালো খেলেছি। ওদের চট্টগ্রামে হারিয়েছি, চেষ্টা থাকবে এখানেও হারানোর।’
মিরপুরে এখন পর্যন্ত আগে ব্যাটিং করা দল জিতেছে ২৯টি ম্যাচ, রান তাড়া করা দল ৩০ ম্যাচ। তবে ৫৯টি ম্যাচের মধ্যে টসে জিতে ৩৩ বারই অধিনায়কেরা আগে ব্যাটিং নিয়েছেন। এই সিরিজে অবশ্য টি–টোয়েন্টি শুরুই হচ্ছে বেলা ৩টায়। টসটা তাই অত গুরুত্বপূর্ণও নয়। তবু ইংল্যান্ড বারবার যেন নিজেদেরই মনে করাচ্ছে, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। এক ম্যাচ হেরেও ওয়ানডে সিরিজ জয়টাকে তাই বড় অর্জনই মনে করছে সফরকারীরা।
কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচ হেরে শুরুতেই চাপে পড়ে গেছে সাদা বলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তা ছাড়া সিরিজ শুরুর আগেই স্বীকৃত দুই ব্যাটসম্যান উইল জ্যাকস ও টম অ্যাবেলকে হারাতে হয়েছে চোটের কারণে। তাঁদের বদলি হিসেবেও কাউকে ডাকা হয়নি। একাদশটা তাই কার্যত বেছে নিতে হচ্ছে ১৩ জনের দল থেকে। প্রথম ম্যাচে দলে ছিলেন মাত্র চারজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান, আজও সে কম্বিনেশন বদলানোর কথা নয়।
ঐচ্ছিক অনুশীলন হলেও গতকাল ইংল্যান্ড দলের সবাইকেই দেখা গেছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। জস বাটলার, বেন ডাকেট, ডেভিড ম্যালান, ফিল সল্টদের সঙ্গে ব্যাটিং অনুশীলনে বেশ মনোযোগী দেখা গেল ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ আর টি–টোয়েন্টি অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা রেহান আহমেদকেও।
পেস বোলিং কোচ ডেভিড সেকারের সঙ্গে স্পট বোলিং অনুশীলন করেছেন মার্ক উড, জর্ডান, স্যাম কারেনরা। সঙ্গে ছিলেন এ সফরে এখনো মাঠে না নামা পেসার রিস টপলিও। প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মোক্ষম জবাবই যেন অনুশীলনে খুঁজে নিতে চাইলেন তাঁরা।
গত অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সেখানেই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড, তার আগে পাকিস্তানে জিতেছিল ৭ ম্যাচের সিরিজ। কিন্তু প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ভিন্ন বার্তাই দিল তাঁদের। ২০২৪ সালের পরের বিশ্বকাপের অভিযানে প্রথম সিরিজেই তাই অন্য রকম এক চ্যালেঞ্জের সামনে বাটলারের দল।
অন্যদিকে বিশ্বকাপের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ বাদ দিলে বাংলাদেশ সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে ২০২১ সালে, দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। হাসানের কথায় আত্মবিশ্বাস এবারও সে রকম কিছুই করে দেখানোর, ‘মোমেন্টাম যেহেতু আমাদের দিকে আছে, ইনশা আল্লাহ ভালো কিছু হবে। অধিনায়কও আমাদের সাহস দিচ্ছেন।’
মিরপুরে কাল নেট অনুশীলন না করলেও মাঝ উইকেটে বড় শটের অনুশীলন করেছেন সাকিব। অবশ্য নেটের দিকে গেছেন অন্য ব্যাটসম্যানদের সাহস জোগাতে। দলের মধ্যে এরই মধ্য অধিনায়ক এই বার্তাটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন যে টি–টোয়েন্টিতে এই দলটাই সেরা। হাসানও সে বিশ্বাসের বাইরে নন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের যে টি-টোয়েন্টি দলটা আছে, আমি মনে করি তারাই সেরা। সবাই প্রাণশক্তিতে ভরপুর, শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। এটা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে পারলে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি—যেকোনো সংস্করণেই আমরা এগিয়ে থাকব।’
প্রথম ম্যাচে তিন পেসারের সঙ্গে দুই বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। উইকেট পেয়েছিলেন সব বোলারই। অবশ্য ইংল্যান্ড দলে বাঁহাতিদের উপস্থিতি মিরপুরে একজন অফ স্পিনার খেলানোর চিন্তা আনতেই পারে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টর মস্তিষ্কে। সে ক্ষেত্রে মেহেদী হাসান মিরাজের আজ খেলার সুযোগ হলেও হতে পারে।