স্টয়নিসের বিতর্কিত আউটের ব্যাখ্যা চাইবে অস্ট্রেলিয়া
মার্কাস স্টয়নিসের বিতর্কিত আউট নিয়ে বিশ্বকাপ অফিশিয়ালদের কাছে অস্ট্রেলিয়া দল ব্যাখ্যা চাইবে বলে জানিয়েছেন মারনাস লাবুশেন। লক্ষ্মৌতে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৩৪ রানে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। এ ম্যাচে স্টিভেন স্মিথ ও স্টয়নিসের আউট নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৩১১ রান তাড়া করতে নেমে ১৮তম ওভারে স্টয়নিসকে হারানোর মধ্য দিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারতে হয়। ১৭.২ ওভারে কাগিসো রাবাদার বলটি লেগে খেলার চেষ্টা করেছিলেন স্টয়নিস। কট বিহাইন্ডের আবেদন করেছিল প্রোটিয়ারা। মাঠের আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আউট দেননি। রিভিউ নেয় প্রোটিয়ারা। তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো স্টয়নিসকে আউট ঘোষণা করেন আর এ সিদ্ধান্ত নিয়েই চলছে তুমুল বিতর্ক।
আউটটি ২০০৫ অ্যাশেজে এজবাস্টন টেস্টে মাইকেল কাসপ্রোউইচের সেই আউটকে মনে করিয়ে দিতে পারে। স্টয়নিসের ডান হাতের গ্লাভসে বল লেগেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বল তাঁর গ্লাভসে লাগার সময় ডান হাত দিয়ে ব্যাট ধরে রেখেছিলেন কি না? ভিডিও রিপ্লেতে দেখে মনে হয়েছে, তখন স্টয়নিসের ডান হাতের সঙ্গে ব্যাটের সংস্পর্শ হয়নি। অর্থাৎ ডান হাত তখন (বল গ্লাভসে লাগার সময়) যেহেতু ব্যাটের অংশ ছিল না, তাই ওটা আউটও নয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘এবিসি’ জানিয়েছে, কেটেলবরো তবু আউট দিয়েছেন এবং এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ‘ওই হাতটা (ডান) তো অন্য হাতেরই (বাঁ হাত যেটা দিয়ে ব্যাটের হাতলে ওপরের অংশ ধরে ছিলেন স্টয়নিস) অংশ আর সেটা (বাঁ হাত) দিয়ে ব্যাটটা ধরে রেখেছিলেন।’
তবে ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল স্টয়নিসের ডান হাতের গ্লাভস ছোঁয়ার সময় বাঁ হাতের সঙ্গে ব্যবধান ছিল। এক হাতের গ্লাভস আরেক হাতের সংস্পর্শে ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ধারাভাষ্যে বলেছেন, ‘বটম হ্যান্ড (ডান হাত) টপ হ্যান্ড (বাঁ হাত) থেকে অনেক দূরে ছিল।’ বিস্মিত স্টয়নিস মাঠ ছাড়ার আগে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথাও বলেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। তখন উইকেটের অন্য প্রান্তে ছিলেন মারনাস লাবুশেন।
ম্যাচ শেষে লাবুশেন বলেছেন, ‘তারা (আম্পায়ার) যেটা দেখার দেখেছে। তবে দেখে মনে হয়েছে বল গ্লাভস ছোঁয়ার সময় ব্যাটে তার হাতটা ছিল না। ক্যামেরা কিন্তু সাইডের অ্যাঙ্গেল থেকে ধরা হয়নি। মার্কাস (স্টয়নিস) ও আমি জানতে চেয়েছিলাম ওই অ্যাঙ্গেল থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে কি না। তারা “স্পাইকটা”(বল গ্লাভসে লাগার দাগ) দেখেছে সামনে থেকে। কিন্তু পাশ থেকে জুম করে দেখা হয়নি। তবে দুটি গ্লাভসের মধ্যে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার ব্যবধান ছিল। আমি তৃতীয় আম্পায়ারের কক্ষে গিয়েছিলাম আর সেখানে স্ক্রিনও অনেক বড় ছিল।’
লাবুশেন এরপর বলেছেন, ‘ব্যাপারটা আসলেই বিভ্রান্তিকর এবং আমি নিশ্চিত এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে কিংবা আমরা ব্যাখ্যা চাইব। এটা তো বিশ্বকাপ, এমন টুর্নামেন্টে আমরা চাই না ছোটখাটো সিদ্ধান্তগুলোর জন্য ম্যাচের ফল পাল্টে যাবে, যেটা (সিদ্ধান্ত) এড়ানো যেত। এটাও ঠিক, আমরা তখন যে পরিস্থিতিতে ছিলাম তাতে সিদ্ধান্তটা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, তা বলা কঠিন। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমরা সিদ্ধান্তগুলো ঠিক করতে চাই।’
স্টয়নিসের আউটের আগে আরও একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেটি স্টিভেন স্মিথের উইকেট। ১০ম ওভারে রাবাদার বলে এলবিডব্লুর আবেদন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বল লেগ সাইড দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল, এটা ভেবে আউট দেননি মাঠের আম্পায়ার। কিন্তু ডিআরএসে দেখা যায়, বল লেগ স্টাম্পের মাথায় আঘাত হেনেছে। লাবুশেন তখন উইকেটের অন্য প্রান্তে এবং তিনি জানিয়েছেন, আউট না দেওয়ায় মাঠের আম্পায়ার জোয়েল উইলসনকে তিনি ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন। কিন্তু বল ট্র্যাকিং সিস্টেমে দেখা যায়, বল লেগ স্টাম্পের মাথায় আঘাত হেনেছে, যা প্রায় সবাইকে বিস্মিত করেছে। লাবুশেন জানিয়েছেন, তাঁর দেখে মনে হয়েছে বল লেগ স্টাম্পেও ছিল না তবে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে তিনি প্রশ্ন তুলতে চান না। রাবাদা নিজেই বলেছেন, স্মিথের আউটের আবেদনে তিনি ‘আম্পায়ার্স কল’-এর অপেক্ষায় ছিলেন। ‘প্রযুক্তি আজ আমাদের পাশে ছিল’—এমন মন্তব্যও করেছেন রাবাদা।