‘দল হিসেবে বাংলাদেশ কেমন, তার একটা নমুনা পেলাম’
যেকোনো খেলার পর বিশ্লেষণ করা খুবই সোজা। যাঁরা দলের সদস্য, তাঁরা নিশ্চয়ই আরও পরিষ্কার ধারণা রাখেন। কিন্তু কাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাজেভাবে হারের পর মনে হচ্ছে, আমরা বড় কিছু কৌশলগত ভুল করেছি। যার মধ্যে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়াটা সবার আগে আলোচনায় আসবে। কোচ ও অধিনায়ক হয়তো কন্ডিশনে এমন কিছু দেখেছেন, যে কারণে তাঁরা আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সে কারণটা আমার বোধগম্য নয়। টসে জিতে আগে ব্যাটিং করায় খুবই বিস্মিত হয়েছি।
উইকেট প্রাণবন্ত ছিল না, তা ঠিক। অধিনায়ক হয়তো ভেবেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট আরও খারাপ হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে কন্ডিশন যেমনই হোক, বাংলাদেশ যে ব্যাটিং করেছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। ওপেনাররা যখন ব্যর্থ হলো, তখন মনে হচ্ছিল ব্যাটিং কঠিন হবে। সে সময় সাকিব আল হাসানের আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলা উচিত ছিল। মুশফিকুর রহিমের কথাও বলব। আমরা ২০ ওভারের নয়, ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলছিলাম, সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল। অনেক বল বাকি ছিল, সাকিব ঝুঁকিটা আরও পরে নিতে পারতেন।
তাওহিদ হৃদয়ের কথাও এখানে আসবে। যাঁর ফর্মের ওপর আমরা অনেক ভরসা করছিলাম, তাঁর উইকেটটা যখন আমরা হারাই, তখন আমাদের ৫০ ওভার খেলার চেষ্টা করা উচিত ছিল। নাজমুল হাসান খুব ভালো খেলছিলেন এক প্রান্তে। তাঁর সঙ্গে যদি মুশফিক ও লোয়ার অর্ডারের বাকিরা টিকে থাকতেন, তাহলে ইনিংসের শেষে আমরা এমন একটা জায়গায় থাকতাম, যেখান থেকে ২২০-২৩০ রান করা সম্ভব হতো।
কিন্তু তা হয়নি আগেই মুশফিক-মিরাজ আউট হওয়ায়। ওই সময় আমাদের ব্যাটিং পরিকল্পনাটা একদমই ম্যাচের পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই ছিল না। মিরাজের ওই রানআউটটা আসলে খুবই দৃষ্টিকটু ছিল। নাজমুলের সঙ্গে ওই ভুল–বোঝাবুঝিটা খুবই আত্মঘাতী ছিল।
শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ বোলাররা না থাকলেও পাতিরানা ও তিকশানাকে আগেই ভয়ংকর মনে হয়েছে। আজ এই দুই তরুণ বোলারকেই সবচেয়ে ভালো করতে দেখে অবাক হইনি। তবে ৪২ ওভারে আউট হয়ে যাওয়াটা অপরিণত মনে হয়েছে, একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশের ওয়ানডে দল খেলছে, তেমন মনে হয়নি। পরিকল্পনাটাই খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়েছি। পাতিরানা ও তিকশানার স্পেল তো একসময় শেষ হতো, আমরা সে জন্য অপেক্ষা না করে আগেই আক্রমণাত্মক হওয়ার ভুল পথটা বেছে নিয়েছি। হিসাবি ব্যাটিংটা ছিল না বললেই চলে। সেটা যা একটু দেখেছি নাজমুলের কাছ থেকে।
তিনি ১০০–এর বেশি বল খেলেছেন, ৮৯ রান করেছেন। এখন মনে হচ্ছে, তিনি যদি এতটা সময় ক্রিজে না থাকতেন, তাহলে কী লজ্জাই না আমাদের পেতে হতো। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই তিনি বেশ ধারাবাহিক। সেটা এশিয়া কাপেও ধরে রাখতে দেখে অবাক হইনি। তবে বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউ একজন টিকে গেলে নাজমুলেরও ভালো হতো, দলেরও ভালো হতো। হয়তো সেঞ্চুরি করে ইনিংসটাকে তিনি আরও লম্বা করতে পারতেন। বাংলাদেশের রানটা ২০০–এর ওপরে যায়নি সে কারণেই। আর সেটা হলে হয়তো বোলিং দিয়ে ম্যাচটা জমিয়ে তুলতে পারত বাংলাদেশ দল।
শ্রীলঙ্কা রান তাড়ার কোনো পর্যায়েই চাপে ছিল না। কারণ, রান রেট সব সময়ই তাদের নাগালে ছিল। দ্রুত কিছু উইকেট হারালেও তাদের তড়িঘড়ি করতে হয়নি এ কারণেই। শ্রীলঙ্কাও ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলেছে স্বাচ্ছন্দ্যে। আমাদের এই ম্যাচ জিততে হলে নিয়মিত উইকেট নিতেই হতো। এ ছাড়া আর উপায় ছিল না। এখন আমাদের বোলারদের বোলিং বিশ্লেষণ দেখে হয়তো আক্ষেপ করবেন, কিন্তু আসলে বোলারদের ভদ্রস্থ ইকোনমি এই ম্যাচটা জেতাতে পারত না, দরকার ছিল উইকেটের।
যেহেতু সামনে বিশ্বকাপ, পুরো বিশ্ব কিন্তু আমাদের দেখছে। সেই পরীক্ষায় আমরা খুব খারাপ করলাম। একটা খেলার ওপর মন্তব্য করা ঠিক নয়। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচই কিছু না কিছু বার্তা দেয়। দল হিসেবে আমরা কেমন, তার একটা নমুনা এই ম্যাচে পেলাম। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তো সব সময়ই থাকে। আমাদের এশিয়া কাপ শেষ হয়ে যায়নি। আমরা খুব হালকাভাবে এই ম্যাচটা খেলেছি। সেটা আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমাদের পরের ম্যাচে দেখতে চাই না। সেখানে অন্য বাংলাদেশকে দেখতে চাইব।
গাজী আশরাফ হোসেন, সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল