ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য ‘ফুল এনার্জি’ আছে, টেস্টে নেই—বললেন ইমরুল

সংবাদ সম্মেলনে ইমরুল কায়েস। আজ মিরপুরেছবি: শামসুল হক

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের বিদায়ী ইনিংসে গতকাল ১ রানের বেশি করতে পারেননি। আজ দল হেরে যাওয়ায় বিদায়ী ম্যাচটাও সুখকর হলো না ইমরুল কায়েসের।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ম্যাচের তৃতীয় দিনে আজ ইমরুলের খুলনা বিভাগকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা বিভাগ। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার লাল বলের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচকে যে উপভোগ করতে চেয়েছিলেন, তা আরও স্পষ্ট বোঝা গেল খুলনার হার একরকম নিশ্চিত হওয়ার আগমুহূর্তে বল হাতে তুলে নেওয়ায়। ঢাকার জয়সূচক রান এসেছে তাঁর বোলিং থেকেই।

বিদায়ী ম্যাচ শেষেই সংবাদ সম্মেলনে এলেন ইমরুল। সাংবাদিকদের কাছে খোলাসা করলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছাড়ার কারণ। জানালেন ক্যারিয়ার নিয়ে নিজের তৃপ্তি-অতৃপ্তির কথাও। বাংলাদেশের হয়ে ৩৯ টেস্ট খেলা ব্যাটসম্যানের দাবি, এখন আর চার দিনের ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস তাঁর নেই। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য পূর্ণ শক্তি আছে। সে কারণেই দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেট আগে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

৩৭ বছর বয়সী ইমরুল বলেছেন, ‘আমার ফিটনেস এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারব এবং আরও কয়েক বছর খেলতে পারব। চার দিনের ম্যাচ খেলার জন্য যে পরিমাণ শক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকতে হয়, তা এখন আর নেই। আমার মনে হয়েছে, আমি যদি নিজেকে তরুণদের সঙ্গে তুলনা করি এবং ওদের মতো ছন্দে (গতিশীল) খেলতে না পারি, তাহলে নিজেকে ছোট মনে হয় এবং লজ্জা লাগে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে একদিনেই খেলা শেষ হয়ে যায়। এখানে ফুল এনার্জি দেওয়া সম্ভব।’

ক্যারিয়ার নিয়ে তৃপ্তি–অতৃপ্তি দুটোই আছে ইমরুল কায়েসের
ছবি: শামসুল হক

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবসরের সংস্কৃতি এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি। এনসিএলের এবারের মৌসুম অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রম। কদিন আগে ১৯ বছরের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগের ফরহাদ হোসেন। এ ম্যাচ ইমরুল ১৭ বছরের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। যদিও ইমরুলকে অনেকে বলেছিলেন, আরও ২ বছর লাল বলের ক্রিকেট চালিয়ে যেতে। কিন্তু ইমরুল নিজের সিদ্ধান্তেই অবিচল থেকেছেন।

কেন? সেটারও ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ইমরুল, ‘প্রথমত বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি যখন বিসিবিকে (অবসরের) সিদ্ধান্তের কথা জানাই, তারা ব্যাপারটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। আমাকে অনেকেই বলেছে, “ভাই, আপনি আরও ২ বছর খেলতে পারতেন।” কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, আরও ২ বছর খেললে তারাই প্রশ্ন করত “ভাই, আপনি কবে খেলা ছাড়বেন?” এই কথাগুলো শোনার চেয়ে নিজ থেকেই চলে যাওয়াটা ভালো মনে হয়েছে। সম্মান থাকা অবস্থাতেই সরে দাঁড়ানোর বোধশক্তি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৩১ ম্যাচ খেলা ইমরুলের চোখে সাকিব আল হাসান সেরা অধিনায়ক। আর সেরা উদ্বোধনী সঙ্গী তামিম ইকবাল। গত মাসে ছাঁটাই হওয়া চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশের দলের সঙ্গে তাঁর প্রথম অধ্যায়ে (২০১৪ থেকে ২০১৭) কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন ইমরুল। সে সময় হাথুরুসিংহের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানান ইমরুল।

বিদায়ী ম্যাচ ছেড়ে ইমরুল কায়েসকে কাঁধে তুলে নেন খুলনা দলের সতীর্থরা
ছবি: বিসিবি

ইমরুলের পরিবার এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তিনিও বছরের বেশির ভাগ সময় অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান। সেখানে একটি ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলারও ইচ্ছে আছে তাঁর। ক্রিকেট-জ্ঞান বাড়াতে কাজ করতে চান অস্ট্রেলিয়ার কোচদের সঙ্গেও। এই সুযোগে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের হয়ে কাজ করার ইচ্ছের কথাও জানিয়ে রাখলেন ইমরুল।