ক্রিকেটের আগে ইতিহাসের পাঠ নিচ্ছেন গোয়ালিয়রের মানুষ
গোয়ালিয়রে কয়েক দিন ধরে দুটি জিনিসের সবচেয়ে বেশি চাহিদা। এক, হোটেল রুম। দুই, বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি ম্যাচের টিকিট। আজ রোববার, ছুটির এ দিনটা সকালে গোয়ালিয়রের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন অনেকেই। আর সন্ধ্যায় ক্রিকেট। ছুটির দিন কাটানোর এর চেয়ে আদর্শ উপায় আর কী হতে পারে!
আজ গোয়ালিয়র শহরের আবহও ছিল ঠিক এমনই। সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় জার্সি বিক্রি হচ্ছে। ঘুরতে বের হওয়া পরিবার, ভ্রমণপিপাসু ছেলেমেয়ে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জার্সি কিনছেন। কারও পিঠে বিরাট, কেউ আবার রোহিত লেখা জার্সি কিনছেন। সে জার্সি পরেই যাচ্ছেন ঘুরতে।
জার্সি পরা দুজনকে খুঁজে পেলাম গোয়ালিয়রের অন্যতম দর্শনীয় স্থান জয় বিলাস প্রাসাদে, ভারতের গোয়ালিয়রে ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি প্রাসাদ এটি। ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ আমলে গোয়ালিয়রের মহারাজা জয়জিরাও সিন্ধিয়া এই প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন। প্রাসাদের প্রধান অংশটি এখন জাদুঘর হিসেবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ছুটির দিন সকাল সকাল এই জাদুঘর ঘুরে দেখলেই লোকজনের ভিড় লেগে যায়।
ভারতের জার্সি পরা সেই দুজনের একজনের সঙ্গে মিনিট দুয়েকের আলাপে যা বোঝা গেল, তাঁরা ম্যাচ দেখতে যাওয়ার আগে শহরটা ঘুরে নিতেই এখানে এসেছেন। একজন বললেন, ‘মাঠ তো অনেক দূর। তাই একবারেই বের হয়ে গেলাম। আজ সারাদিন গোয়ালিয়রের জন্য বরাদ্দ।’
জয় বিলাস প্রাসাদ থেকে ঘুরে দুজন গোয়ালিয়র দুর্গে যাবেন। এই শহরের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র এই দুর্গ। দূরে পাহাড়ের ওপর দুর্গ, রাজপ্রাসাদ দেখতে পাবেন। প্রাচীন নিদর্শন গোয়ালিয়র দুর্গ ঘুরে দুপুরের খাবার খেয়েই মাঠের পথ ধরবেন দুই বন্ধু।
সাংবাদিক পরিচয় শুনলেই স্থানীয়রা ম্যাচের টিকিট চাইছেন। কাল একজন আকুতি জানালেন, ‘কত বছর পর গোয়ালিয়রে ম্যাচ, দেখতে না পারলে খারাপ লাগবে। একটা টিকিট যদি দিতেন…!’
সবাই অবশ্য তাদের মতো ভাগ্যবান নন। ১৪ বছর পর গোয়ালিয়রে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হচ্ছে, আর তাঁরা সে ম্যাচের টিকিট পেয়েছেন—ভাগ্যবান তো বটেই! এই শহরের একটা প্রজন্ম তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কী জিনিস, সেটাই জানে না! ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ম্যাচটি এখনকার নতুন ক্রিকেটাদের জন্য শুধুই স্মৃতি।
সেদিন বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে বোলিং করতে আসা স্থানীয় এক ক্রিকেটারকে টেন্ডুলকারের সেই ইতিহাস গড়া ইনিংসের কথা জিজ্ঞাসা করতে একটু লজ্জার হাসি দিলেন। বললেন, ‘আমরা ছোট ছিলাম। ওই ম্যাচের কথা মনে নেই তেমন। এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমরা পাইনি বললেই চলে।’
অবশেষে যখন শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে শহরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে, স্বাভাবিকভাবেই এই শহরের সবখানে এখন টিকিটের জন্য হাহাকার। মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের নতুন এ মাঠে ৩০ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারেন। কিন্তু টিকিট নাকি বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার।
সাংবাদিক পরিচয় শুনলেই স্থানীয়রা ম্যাচের টিকিট চাইছেন। কাল একজন আকুতি জানালেন, ‘কত বছর পর গোয়ালিয়রে ম্যাচ, দেখতে না পারলে খারাপ লাগবে। একটা টিকিট যদি দিতেন…!’ এমন অনুনয়ের পরও তাঁকে হতাশ হতে হলো। সফররত সাংবাদিকদের জন্য তো আর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) টিকিট বরাদ্ধ রাখে না। কিন্তু সেটা স্থানীয়দের কে বোঝাবে? এমন অবস্থা, বিসিসিআইয়ের ফিতা ঝোলানো কার্ড দেখলেই টিকিট চেয়ে বসছেন লোকজন।
অথচ কানপুর টেস্টের মতো এই ম্যাচটি হিন্দু মহাসভা বয়কটের দাবি করেছিল। তাই মাঠের আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গোয়ালিয়রের ট্যাক্সি ড্রাইভার গৌরবের মনে অন্য ভয় কাজ করছে। টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ির ভয়, ‘দেখুন, এই ম্যাচ নিয়ে তো অনেক নিরাপত্তার কথা হচ্ছে। টিকিটপাগল লোকজন থেকে কীভাবে নিরাপত্তা পাবেন, সেটা দেখুন। ম্যাচের আগে যে কী হবে, কল্পনাও করতে পারবেন না।’
পুরো উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে খেলা দেখতে আসা লোকজন গোয়ালিয়রে অকল্পনীয় একটা দিনের প্রত্যাশাই করছে!