নাজমুল–নাফীসদের সঙ্গে খেলে হুইলচেয়ার ক্রিকেটারদের স্বপ্নপূরণ
সালমান ইবনে হাসান ইয়ামিন। বয়স ১৭–১৮ হবে। সাভারের একটি কলেজের ছাত্র। ধ্যানজ্ঞান তাঁর ক্রিকেট। খেতে ক্রিকেট, শুতে ক্রিকেট, ঘুমাতে ক্রিকেট যাকে বলে আর কি! ইয়ামিন স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি পরে মাঠে নেমেছেন। নাজমুল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন দাসরা তাঁর সতীর্থ। ইয়ামিন ব্যাট হাতে দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জিতিয়ে ফিরছেন, বাহবা কুড়াচ্ছেন সতীর্থদের, গোটা দেশের। পত্রিকার পাতায় তাঁকে নিয়ে খবর হচ্ছে, ছবি ছাপা হচ্ছে।
কিন্তু ইয়ামিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার উপায় নেই। ভাগ্য তাঁর জন্য সেই উপায় রাখেনি। ক্রিকেট নিয়েই যাঁর সব ভাবনা, যে কল্পনা করে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন, তাঁর যে হাঁটাচলারই ক্ষমতা নেই! ইয়ামিন পৃথিবীতে এসেছেই স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা ছাড়া। কোমরের নিচের অংশটা নেই। ইয়ামিনের মতো এমন আরও অনেকেই আছেন। কেউ হয়তো সুস্থ–স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে করতেই কোনো দুর্ঘটনায় চলৎশক্তি হারিয়েছেন। এখন হুইলচেয়ারই ভরসা। তবে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা তাঁদের পুরোমাত্রায়ই আছে।
এমন কিছু মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট (বিডব্লুসি)। তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সহযোগিতাও পাচ্ছে তারা। আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে ধানমন্ডির ৪ নম্বর মাঠে হুইলচেয়ার ক্রিকেটাররা খেলতে নেমেছিলেন। হুইলচেয়ারে জীবন যাপন করা মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন ও তাঁদের ক্ষমতায়ন, উন্নয়ন ও সংকট মোকাবিলার লক্ষ্য নিয়েই জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থা ইউএনডিপি আয়োজন করেছিল ম্যাচটির। আর সে ম্যাচ খেলতে এসে ইয়ামিনরা দেখা পেলেন তাঁদের স্বপ্নের তারকাদের।
আজ এই আয়োজনে হাজির ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন, সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস, জাভেদ ওমর, সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক হান্নান সরকার। আরও ছিলেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আম্পায়ার মাসুদুর রহমান।
তাঁরাও হুইলচেয়ারে বসেই খেলেছেন হুইলচেয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে। নাজমুল পরে আবেগময় কণ্ঠে বলেছেন, ‘একজন হুইলচেয়ারে বসে ক্রিকেট খেলছে, এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার। কতটা আবেগ থাকলে হুইলচেয়ারে বসে ক্রিকেট খেলা যায়! হুইলচেয়ার ক্রিকেটারদের দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত হচ্ছি। আমাদের সবারই উচিত তাদের অধিকার নিশ্চিতে যার যার জায়গা থেকে কাজ করা। এই মানুষগুলো যেন সমাজে নিজেদের পূর্ণ অধিকার নিয়ে চলতে পারে, এটা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব।’
এ উপলক্ষে ধানমন্ডি ৪ নম্বর মাঠে আরও ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত দূত মাইকেল মিলার, বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ঢাকার অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি অ্যানা পিটারসেন ও মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা আশা বে। হুইলচেয়ারে বসে তাঁরাও অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অনুভূতিকে।