যেভাবে ২৩ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পিচ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে এক মাসের একটু বেশি সময় বাকি। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। তাতে যে বড় দুশ্চিন্তার কারণ আছে, তা নয়। এখন পর্যন্ত সব হচ্ছে পরিকল্পনামতোই।
সে পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ১০টি পিচ নেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে। ফলে সে পিচগুলো বিশ্বকাপের অংশ হতে পাড়ি দিচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার মাইল (প্রায় ২২ হাজার ৫৩০ কিলোমিটার)। অ্যাডিলেড থেকে জাহাজে করে ফ্লোরিডা, এরপর সেখান থেকে সড়কপথে সেগুলোর গন্তব্য নিউইয়র্ক।
যুক্তরাষ্ট্রে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইসিসির বড় কোনো টুর্নামেন্ট। নিউইয়র্কের এ স্টেডিয়াম ছাড়াও টেক্সাস ও ফ্লোরিডার দুটি ভেন্যুতে হবে বিশ্বকাপের যুক্তরাষ্ট্র-অংশের ম্যাচগুলো। সব মিলিয়ে ১৬টি ম্যাচ হবে সেখানে, ৩৯টি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। নিউইয়র্কের মাঠটিতে হবে ৮টি ম্যাচ।
এর মধ্যে নিউইয়র্কের নাসাউ স্টেডিয়ামকে বলা হচ্ছে ক্রিকেটের প্রথম ‘অস্থায়ী’ স্টেডিয়াম। এ প্রযুক্তিতে স্টেডিয়ামটির বেশির ভাগ অংশই বানানো হচ্ছে অস্থায়ীভাবে, যেগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। গ্যালারির একটা অংশ যেমন ফর্মুলা ওয়ানে গত বছরের লাস ভেগাস গ্রাঁ প্রিঁ ব্যবহার করা হয়েছিল।
ড্রপ-ইন পিচগুলো তৈরির দায়িত্বে থাকা অ্যাডিলেড ওভালের কিউরেটর ড্যামিয়েন হোউ সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গতি ও সমান বাউন্স থাকবে, এমন পিচ তৈরি করা। যেখানে খেলোয়াড়রা শট খেলতে পারবেন। আমরা বিনোদনদায়ী ক্রিকেট চাই, কিন্তু চ্যালেঞ্জ আছে।’
গত অক্টোবরে হোউ ১০টি ড্রপ-ইন পিচ তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে এগুলো ট্রেতে বসানো হয়। প্রতিটি পিচকে ভাগ করা হয়েছে দুটি ট্রেতে। সব মিলিয়ে ম্যাচ খেলার মতো ৪টি ও অনুশীলনের জন্য আরও ৬টি পিচ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বেসবলের ভেন্যুগুলোতে যেমন দেখা যায়, তেমন মাটি ব্যবহার করা হয়েছে পিচগুলো তৈরিতে। সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট ধরনের ঘাসও আছে, যেটি উষ্ণ আবহাওয়া এবং রোলিং ও ভারী ব্যবহারের উপযোগী।
পিচগুলো যে ট্রেতে স্থাপিত, সেগুলো কনটেইনারে ভরে জাহাজে করে অ্যাডিলেড থেকে ফ্লোরিডা নিয়ে যাওয়া হয়েছে গত জানুয়ারিতে। এর পর থেকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ আবহাওয়ায় রেখে দেওয়া হয়েছে, কারণ, নিউইয়র্কে তখন আবহাওয়া ছিল বেশ শীতল। ফ্লোরিডা থেকে সড়কপথে চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছাবে পিচগুলো। রাস্তায় যাতে বেশিক্ষণ না থাকতে হয়, সে কারণে বহনকারী প্রতিটি ট্রাকে থাকবেন দুজন করে চালক। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর নির্দিষ্ট স্থানে পিচগুলো বসাতে হোউ ও তাঁর দলের লাগবে প্রায় ১২ ঘণ্টা।
পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে হোউয়ের অনুভূতি এ রকম, ‘আমার আসলে মিশ্র অনুভূতি। সত্যিই রোমাঞ্চিত, কিন্তু একই সঙ্গে একটু চিন্তাও হচ্ছে। কিছু ব্যাপার এখনো অজানা। বেশ লম্বা একটা প্রক্রিয়া। আমরা যা জানি, নিজেদের সেরাটি দিয়েছি। সম্ভাব্য সব রকমের ফলই আমরা বিস্তারিত ভেবে রেখেছি, সামনে কী কী হতে পারে। আশা করছি, এগুলো বেশ ভালো ক্রিকেট পিচই হবে।’
আগামী ১ জুন ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ। নিউইয়র্কে প্রথম ম্যাচটি ৩ জুন, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার। ১০ জুন এ মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।