আইপিএলে কোহলি ‘আমির’, কোহলি ‘ফকির’
একবার, দুবার নয়, ১৬ বার!
আইপিএলে ১৬ বার চেষ্টা করেও বিরাট কোহলি শিরোপা জিততে পারেননি। আইপিএলে ব্যক্তিগত অর্জনের ডালিটা তাঁর কানায় কানায় পূর্ণই বলা যায়। শো–কেসে থরে থরে সাজানো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কারণে জেতা অসংখ্য ট্রফি। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন দলীয় অর্জনের, কোহলির ডালিটা রিক্ত। ১৬টি আইপিএলে খেলে একবারও বেঙ্গালুরুকে শিরোপার স্বাদ এনে দিতে পারেননি তিনি।
কোহলি এখন নিজেকেই প্রশ্ন করতে পারেন—আমি আর কী করতে পারি? আইপিএলে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৭টি সেঞ্চুরি তাঁর। করেছেন ফিফটির ফিফটি।
টুর্নামেন্টটির সর্বোচ্চ সংগ্রাহকও ভারতীয় এই ব্যাটসম্যানই (৭২৮৩ রান)। এসবই তো ওই একটা জার্সির পরেই। সত্যিই তো, এরপরও বেঙ্গালুরুর দলীয় অর্জনের খেরো খাতাটায় কিছু যোগ না হলে কোহলি আর কী–ই বা করতে পারেন!
এবারের আইপিএলের দিকেই তাকান না! ১৪ ম্যাচে ৫৩ গড়ে রান করেছেন ৬৩৯। শেষ দুই ম্যাচেই করেছেন সেঞ্চুরি। কী হলো তাতে! বেঙ্গালুরু তো প্লে-অফেই উঠতে পারল না। আইপিএলে কোহলির দুঃখগাথা তুলে ধরতে টানতে হবে ২০১৬ মৌসুমকেই। সেই মৌসুমে একাই করেছিলেন ৯৭৩ রান, দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। তবে ট্রফি আর ছুঁতে পারেননি।
এক আসরে ১৫০–এর বেশি স্ট্রাইক রেট আর ৮১ গড়ে ৯৭৩ রান—একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষে এর চেয়ে বেশি আর কী–ই বা করার আছে! কোহলি এই প্রশ্ন করলে তার উত্তর কী দিতে পারবেন বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরা? অনেকের মুখেই শোনা যেত, অধিনায়ক কোহলিই নাকি বেঙ্গালুরুর সমস্যা। সেই অধিনায়কত্বও তো ছেড়েছেন দুই বছর হলো। কই, ভাগ্য তো বদলাল না!
আইপিএলে প্রতিবছরই নতুন নতুন সমস্যা নিয়ে হাজির হয় বেঙ্গালুরু। কখনো তাদের ভাবনার কারণ বোলিং বিভাগ, কখনো টপ অর্ডার কিংবা কখনো মিডল অর্ডার। এবারের আসরে যেমন কোহলিদের বিদায়ে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে বেঙ্গালুরুর মিডল অর্ডারকে। এই আসরে বেঙ্গালুরুর হয়ে কোহলির চেয়ে বেশি রান করেছেন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। ১৫৩ স্ট্রাইক রেটে ডু প্লেসি করেছেন ৭৩০ রান।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের জন্য এই আসর দারুণ কেটেছে। অস্ট্রেলিয়ান এই ব্যাটসম্যান ১৮৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৪০০ রান। বেঙ্গালুরুর মোট ২৫০২ রানের মধ্যে ১৭৬৯ রানই এসেছে এই তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে। বাকি সবাই মিলে করেছেন ৭৩৩ রান।
দীনেশ কার্তিক, অনুজ রাওয়াতরা সবাই ব্যাট হাতে ছিলেন ব্যর্থ। অধিনায়ক ডু প্লেসিও সোজাসাপটাই বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের কথা যদি বলি, আমার ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম চারজন অনেক অবদান রেখেছে। ম্যাক্সওয়েল অবিশ্বাস্য খেলেছে। কোহলি আর আমার ভালো মৌসুমে কেটেছে। কিন্তু মিডল অর্ডার জ্বলে উঠতে পারেনি। মৌসুমজুড়েই মিডল অর্ডার থেকে রান কম পেয়েছি, বিশেষ করে ইনিংসের শেষ দিকে।’
গত আসরে ব্যর্থতার দায়টা বেশি ছিল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ঘাড়ে। আর বোলিং তো বেঙ্গালুরুর সব সময়ের আলোচনার বিষয়। তাই ১৬ আসরে বেঙ্গালুরু যে সমস্যা কাটাতে পারেনি, আগামী মৌসুমে কি কাটাতে পারবে? নাকি তর্ক সাপেক্ষে আইপিএলের সেরা ব্যাটসম্যান কোহলির কখনো ট্রফি ছুঁয়ে দেখাই হবে না? শিরোপা জিততে তাহলে কোহলি কী করতে পারেন?
সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন অবশ্য কোহলিকে একটা পরামর্শ দিয়ে রেখেছেন। পিটারসেনের মতে, কোহলির বেঙ্গালুরু ছাড়া উচিত। কোহলি কি সেটা করবেন? নাকি এর পেছনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে ১৬ বছরের সম্পর্ক, সমর্থক আর কোহলিকে দলে নেওয়ার সেই গল্প?
দিল্লির ছেলে কোহলি কীভাবে বেঙ্গালুরুর হলেন, সেই গল্প আরেকবার মনে করে দেখা যাক। ১৫ বছর আগের কথা। তখন কোহলি খেলছেন ভারতের অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে। সে বছরই শুরু হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএল। আইপিএল নিলামের নিয়ম অনুসারে, অনূর্ধ্ব–১৯ দলের দুই ক্রিকেটারকে দলে নিতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে। সেই নিলামে প্রথম ডাকের সুযোগ আসে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের।
একে তো কোহলি দিল্লির ঘরের ছেলে, সঙ্গে কোহলি তখন অনূর্ধ্ব–১৯ দলের অধিনায়ক, সদ্যই ভারতকে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই সবাই ভেবেছিলেন, দিল্লি প্রথম সুযোগে কোহলিকেই দলে নেবে।
কোহলির নিজের প্রত্যাশাও বোধ হয় এমনই ছিল। তবে সেটা হয়নি। কোহলিকে নয়, দিল্লির প্রথম পছন্দ ছিল পেসার প্রদীপ সাংওয়ান। দিল্লির না নেওয়া সেই ঘরের ছেলেকে দলে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। এরপর আইপিএলে কোহলি আর বেঙ্গালুরুর গল্পটা তো সবারই জানা। দিল্লিতে বেড়ে ওঠা কোহলি হয়ে গেছেন বেঙ্গালুরুর ঘরের ছেলে।
সেই ঘরের ছেলে কি ঘর ছাড়বেন? নাকি কোহলি-বেঙ্গালুরুর গল্পটা এভাবেই চলতে থাকবে...ব্যক্তিগত অর্জনে ‘আমির’ কোহলি দলগত সাফল্য বিবেচনায় থেকে যাবেন আইপিএলের ‘ফকির’ হয়ে!