বিশ্বকাপে নেপালের আশা ‘টাইগার’ নামের পুলিশ সদস্য ঐরী
পেশায় তিনি পুলিশ সদস্য। ডাকনাম ‘টাইগার’। তবে বিশ্বকাপে দীপেন্দ্র সিং ঐরীর দায়িত্ব হতে যাচ্ছে প্রতিপক্ষের বোলারদের হাতে হাতকড়া পরানো। এ টুর্নামেন্টে নেপালের অন্যতম ভরসা হতে যাচ্ছেন ২৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার।
গত সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির রেকর্ড ২৭৩ রানের ব্যবধানে জিতেছিল নেপাল। তাতে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েছিলেন ঐরী। তাঁর লেগেছিল মাত্র ৯ বল। গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ওভারে ছয় ছক্কা মারার রেকর্ডও গড়েন। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল কাতার।
শুধু ব্যাটিং বা বোলিং নয়, ফিল্ডিংয়েও ঐরীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। দুর্দান্ত ক্যাচ আর রানআউটে সিদ্ধহস্ত। ঐরীর আশা, দেশকে গর্বিত করতে পারবেন তিনি। নেপালের কান্তিপুর টেলিভিশনকে সম্প্রতি বলেছেন, ‘দলকে জয়ী করতে যাতে অবদান রাখতে পারি, সে ক্ষেত্রে নিজের সেরাটিই দেব। সবার কাছ থেকে যে সমর্থন পাই, সেটিই আমাকে উজ্জীবিত করে।’
‘টাইগার’ নামটাও ঐরীর জন্য বাড়তি প্রেরণার, ‘তারা আমাকে “টাইগার” নামে ডাকে। এটি আমাকে আরও উজ্জীবিত করে। যতটা সম্ভব করার প্রেরণা দেয়। যাতে আমি নিজের ১১০ ভাগ দিতে পারি।’
তারা আমাকে “টাইগার” নামে ডাকে। এটি আমাকে আরও উজ্জীবিত করে। যতটা সম্ভব করার প্রেরণা দেয়। যাতে আমি নিজের ১১০ ভাগ দিতে পারি।দীপেন্দ্র সিং ঐরী
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ একটি বাজারে লাগানো বড় পর্দায় দেখেছিলেন ঐরী। এবার যখন বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করল নেপাল, তখনকার অনুভূতি মনে করে তিনি বলেন, ‘আমি কাঁদছিলাম, যে কান্না ছিল হৃদয় নিংড়ানো।’
বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘ডি’-তে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আছে নেপাল। তাদের আইসিসি র্যাঙ্কিং ১৭। কিন্তু নেপালের প্রধান নির্বাচক দীপেন্দ্র চৌধুরীর আশা, ঐরীই গড়ে দেবেন পার্থক্য। তাঁর অফ স্পিন সবচেয়ে ভালোদের কাতারে। তাঁর ফিটনেস, ওয়ার্ক এথিক, দলের চেতনা বহন করার ব্যাপারগুলো চোখে পড়ার মতো। আমার বিশ্বাস, অনেক দিন পর পেছনে ফিরে তাঁকে নেপালের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
দীপেন্দ্র আরও বলেন, ‘সে অনেক মেধাবী আর পরিশ্রমী। সে ক্যারিয়ার শুরু করেছিল মিডিয়াম পেসার হিসেবে। এরপর পালাবদলে ব্যাটসম্যান হয়েছে, এখন অলরাউন্ডার হিসেবে কাজ করছে।’
২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেপালের হয়ে প্রথম খেলেন ঐরী। দীপেন্দ্র বলেন, ‘তার ঘষামাজা দরকার ছিল, কিন্তু সে অসাধারণ মেধাবী ছিল। কম বয়সেই তার ওপর নজর পড়ে। সে অনেক বিনয়ী, কথাও বলে খুব কম। নিজের কাজের ব্যাপারে সে নীতিমান, মাঠেই বেশির ভাগ সময় কাটায়।’
বিশ্বকাপে নেপালের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে ঐরী বাস্তববাদী, ‘আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি, তবে সত্যি বলতে অন্য দলগুলো আমাদের চেয়ে ভালো। তবে এটা তো খেলা আর আমরা আশা করি ভালো ম্যাচ ও ভালো পারফরম্যান্সের।’
সে প্রস্তুতি অবশ্য কিছুটা আড়ালে চলে গেছে বিতর্কিত তারকা সন্দীপ লামিচানেকে দলে নেওয়ার চেষ্টার আলোচনায়। ধর্ষণের মামলা থেকে খালাস পাওয়া সাবেক এই অধিনায়কের ভিসার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ম্যাচ জেতা-হারা পরে, সবকিছুর আগে নেপালের লক্ষ্য ভালো ক্রিকেট খেলা। দীপেন্দ্রর মতে, ‘জেতা–হারার চেয়েও আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার প্রস্তুতি বেশি নিয়েছি। ভবিষ্যতে এটি আমাদের সহায়তা করবে বড় দলগুলোকে নিজেদের মাটিতে আনতে। বা তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানাবে। এটিই হবে সবচেয়ে বড় জয়।’
তাতে নেপালের অন্যতম ভরসার নাম দীপেন্দ্র সিং ঐরী।