বাভুমার ঘুম, বাভুমার স্বপ্ন ও প্রজাতন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক

দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাছবি: এএফপি

১.
দুটি ছবি। একটা বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিনের ১০ অধিনায়ক নিয়ে ‘ক্যাপ্টেনস ডে’ অনুষ্ঠানের। আরেকটা সপ্তাহ দুয়েক পরের, ধর্মশালায় দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচের শেষ দিকের। প্রথম ছবিটা ঘুমের। সঞ্চালকের দুই পাশে অধিনায়কেরা সোফায় বসা। একজন করে বলছেন, বাকিরা শুনছেন। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাছে যখন মাইক, ছবিটা তখনকার। বাঁ দিকে মাথা হালকা কাত করে আছেন টেম্বা বাভুমা। চোখ দুটি বোজা। প্রথম দেখায় যে কারোর মনে হবে, বাভুমা ঘুমাচ্ছেন।

এই অনুষ্ঠানের সপ্তাহখানেক আগে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ভারতে পা রেখেছে। তবে পারিবারিক কারণে বাভুমাকে আবার দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল। ফিরে আসেন ক্যাপ্টেনস ডের কিছুক্ষণ আগে। কে জানে, ভ্রমণ ক্লান্তির কারণেই ঘুম বা তন্দ্রাভাব এসে গিয়েছিল কি না! সেদিন বাভুমার ওই ঘুমের ছবিটা ছিল ‘টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ’। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসাহাসি শুরু হলে বাভুমা জানিয়েছিলেন, তিনি ঘুমাচ্ছিলেন না। ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের কারণে এমনটা মনে হয়েছে।

পরের ছবিটা ড্রেসিংরুমে বসে থাকা বাভুমার। না, এবার ঘুমিয়ে নেই। চোখজোড়া খোলা। চেয়ারে বসে ছিলেন। মাথাও এদিক-ওদিক করা নেই, সোজা। ক্যামেরায় ভালোমতোই ধরা পড়ছেন। তখন মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ধুঁকছে।

নেদারল্যান্ডসের ২৪৫ রান তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়াদের স্কোর ৬ উইকেটে ১১০। আগের দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা ‘পুঁচকে’ ডাচদের কাছে হেরে যাচ্ছে, পরিস্থিতিটা এমনই অস্বস্তিকর (শেষ পর্যন্ত হেরেছেও)। দল যখন মাঠে হাঁসফাঁস করছে, অধিনায়ক বাভুমা ড্রেসিংরুমে সাদা টাওয়েল গায়ে জড়িয়ে বসে নির্নিমেষ সামনে চেয়ে। অনেকটা শীতের কাঁপাকাপিতে গায়ে চাদর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখার মতো। রাতের ধর্মশালায় সম্ভবত শীতও পড়ছিল ওই সময়। কিন্তু ছোটোখাটো গড়ন আর গোলগাল মুখের বাভুমাকে সাদা টাওয়েল গায়ে জড়িয়ে হতভম্বের মতো বসে থাকতে দেখার দৃশ্যটা মনে হচ্ছিল মাঠের দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দশায় পড়ার প্রতীকী ছবি।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে ‘ক্যাপ্টেনস ডে’–তে বাভুমার এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাস্যরসের উদ্রেক ঘটিয়েছিল
ছবি: এক্স

অনেকের চোখে এ ধরনের ছবি ‘মিম আইটেম’। যেমনটা ‘মিম’ হয়ে উঠেছিল তাঁর ক্যাপ্টেনস ডের ঘুমের ছবিটাও।

সাধারণত এসব হাসি-ঠাট্টার ছবি আড়ালে চলে যায়, যদি মানুষটা এর চেয়েও বড় কিছু করে দেখান। কিন্তু বাভুমার হাতে ভুলিয়ে দেওয়ার মতো কিছুই নেই এই মুহূর্তে। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮ আর পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩১১ রান তুলেছে। কিন্তু বাভুমার অবদান তাতে মাত্র ৮ ও ৩৫ রান। ডাচদের বিপক্ষে হেরে বসা ম্যাচটাতেও মাত্র ১৬।

আরও পড়ুন

ব্যাটে রান নেই, কিন্তু অদ্ভুতুড়ে সব দৃশ্যের জন্ম দিচ্ছেন—এসব ক্ষেত্রে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। সমালোচনার নিশানা হতে শুরু করেন বাভুমা। মানুষটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঘুমিয়ে পড়েন, মানুষটা ডুবতে বসা নৌকার মাঝি হয়ে হাল ছেড়ে ঠায় বসে থাকেন আর সবাই যখন দেদারছে রান তুলছে, মানুষটা হাত গুটিয়ে বসে থাকছেন। বিশ্বকাপে শরীরী ভাষার চলনে আর ব্যাটের বলনে যে দলটি ‘স্মার্ট’ হয়ে উঠেছে, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে কৃষ্ণবর্ণের খর্বকায় বাভুমা যেন অনাহুত কেউ!

সমালোচকদের কথায় মনে হতে পারে, বাভুমা শুধুই একজন ক্রিকেটার নন, এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারও নন। তাঁর পরিচয় কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার। কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলেই তা-ই?

ড্রেসিংরুমে বাভুমার টাওয়েল গায়ে জড়িয়ে বসে থাকার এই দৃশ্য নিয়েও হাসিঠাট্টা হয়েছে
ছবি: এক্স

২.
‘ঘটনাটা ২০১৬ সালের জানুয়ারির। নিউল্যান্ডসের এসএসি জুনিয়র স্কুলে বছরের প্রথম টার্মের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের জন্য একটা লেখা নিয়ে এলেন প্রধান শিক্ষক। লেখা এই স্কুলের পুরোনো এক ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া। ২০০১ সালের গ্রেড সিক্সের শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছিল ১৫ বছর পর তুমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাও, লিখ। একটি ছেলে লিখেছে, পনেরো বছর পর আমি নিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে দেখি, এ জন্য মিস্টার এমবেকির (দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে করমর্দন করছি।’
দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখা সেই ছেলেটার নাম টেম্বা বাভুমা। প্রধান শিক্ষক যখন শিশু-কিশোরদের ওই লেখাটা পাঠ করে শোনাচ্ছিলেন, তার চার-পাঁচ দিন আগে নিউল্যান্ডসের ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স ক্রিকেট ক্লাব মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রানের ইনিংস খেলে গেছেন বাভুমা। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানের টেস্ট শতক এটিই প্রথম।

বাভুমার স্বপ্নপূরণ আর ইতিহাস গড়ার গৌরব সে দিন এসএসি জুনিয়র স্কুলের ১০ থেকে ১১ বছর বয়সীদের জন্য হয়ে উঠেছিল বড় অনুপ্রেরণাে!

শৈশব থেকেই বড় স্বপ্ন দেখেছেন বাভুমা। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অনুশীলনে
ছবি: এএফপি

২০১৬ থেকে ২০২৩। সাত বছর পেরিয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবহও বদলে গেছে। এই ২০২৩ সালে এসেও কি বাভুমা অনুপ্রেরণা হতে পারছেন? কোটার থাবায় দক্ষিণ আফ্রিকা আগেও ভুগেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপ যার জ্বলজ্বলে উদাহরণ।

সেমিফাইনালে কাইল অ্যাবোটকে বাদ দিয়ে ভারনন ফিলান্ডারকে নিতে হয়েছিল বোর্ড কর্তাদের চাপে। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা অস্বীকার করেছিলেন। এরপর তো ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়েই কোটা প্রথা প্রবর্তনের ঘোষণা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড সিএসএ। দলের মধ্যে ন্যূনতম ৫৪ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ রাখতে হবে, যার মধ্যে ১৮ শতাংশ হবে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান (এ নিয়ে পরে পর্যালোচনা হয়েছে)। বাভুমা কি এই কোটা ব্যবস্থারই সরাসরি সুবিধাভোগী? দীর্ঘসময় বর্ণবাদের সঙ্গে লড়া একটি দেশ একজন কৃষ্ণাঙ্গকে অধিনায়কত্বে রেখেছে কি অতীতের প্রায়শ্চিত্ত আর বর্তমানে উদার হয়ে ওঠার নিমিত্তে?

আরও পড়ুন

৩.
বাভুমা দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব পান ২০২১ সালের মার্চে (পরে টি-টোয়েন্টি ছেড়ে টেস্টের দায়িত্ব নেন)। তত দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাত বছর চললেও বাভুমা ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৬টি, টি-টোয়েন্টি ৮টি। ৩০ বছর বয়সী বাভুমাকে দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা বল ক্রিকেটের দায়িত্ব দেওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড (সিএসএ) বিবৃতিতে লিখেছিল, ‘সাম্প্রতিক সময়ে টেম্বা দলের ভেতরে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। প্রতিটি সংস্করণে নিজেকে সে নেতৃত্বের জন্য সুসংহত করেছে। তাঁর প্রতি খেলোয়াড় ও কোচদের আস্থা এবং সমর্থন আছে।’

বাভুমার অধিনায়কত্ব প্রাপ্তিতে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার ছিল আরেকটি ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া। যে দেশটি বর্ণবাদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য পরিচিত, ক্রিকেটেও নিষিদ্ধও ছিল বেশ কয়েক বছর, সেই দলটি একজন আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গকে অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয় এই প্রথম। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বাভুমা নিজেই বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে খুব বেশি পেছনে যেতে হবে না। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার গভীর তাৎপর্য আমি বুঝি।’ সেদিন খেলার দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে একজন ‘লিগ্যাসি তৈরি করা’ অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত করতে চাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন বাভুমা।
বাভুমাকে দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছিল তিনটা বিশ্বকাপ সামনে রেখে। ২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ।

টেম্বা বাভুমা: একজন নেতা
ছবি: এক্স

তিন বিশ্বকাপের প্রথমটিতেই ‘নেতা’ হিসেবে আবির্ভূত হন বাভুমা। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড নামের একজন আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশের হাতে মারা গেলে সারা বিশ্বে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন আলোড়ন তোলে। যার অন্যতম অংশ ছিল হাঁটু গেড়ে আন্দোলনকে সমর্থন। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে দলের প্রতি নির্দেশনা পাঠায়, সবাই যেন খেলা শুরুর আগে হাঁটু গেড়ে সমর্থন জানান।

বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হননি উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। নিজেকে তিনি ওই ম্যাচ থেকে সরিয়ে নেন। আন্দোলনটা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, বিশেষভাবে বললে, আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে। ডি কক এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান এমন সময়ে, যখন তাঁর দলের অধিনায়ক একজন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান। এ নিয়ে চারদিকে চরম কৌতূহল, বাভুমা বিষয়টা কীভাবে নিয়েছেন? অধিনায়ক হিসেবে তিনি কি আর ডি কককে দলে চাইবেন? ক্রিকেট বোর্ডই কি রাখবে?

আরও পড়ুন

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটি উঠে আসে। বাভুমাও জবাব দেন। সেদিন অনেকেই আবিষ্কার করেন, ৬২ ইঞ্চি উচ্চতার বাভুমা মননে-চিন্তার উৎকর্ষতায় অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন নিজেকে, ‘কুইন্টনের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতেই হবে, সেটা আপনি একমত হন বা না হন’, বলছিলেন বাভুমা। ডি কককে নিয়ে সিএসএ কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়ে বলেন, ‘দল থেকে কুইন্টনের যত সহায়তা, সবই আমরা করব।’

বোর্ডের নির্দেশনা না মানা নিয়ে পরে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন ডি কক। যেখানে একটা জায়গায় লিখেছিলেন, ‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই আমার অধিনায়ক টেম্বাকে। মানুষ চিনতে পারে না, কিন্তু তিনি পরম বিস্ময়কর নেতা।’

বাভুমার নেতৃত্ব নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সিএসএর বোর্ড চেয়ারম্যান লসন লাইডুসহ ক্রিকেট ও ক্রিকেটের বাইরের অনেকেই। রাতারাতি যেন প্রজাতন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকার আসল অধিনায়ক হয়ে ওঠেন বাভুমা।

ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে মাঝে মধ্যেই প্রশ্নের সন্মুখীন হন বাভুমা
ছবি: এএফপি

এর পরের বছরই অবশ্য বাভুমার নেতৃত্ব বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। আর সেটা ব্যাটিংয়ের কারণে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে রান পাচ্ছিলেন না বাভুমা। বরং তাঁর চোটের অনুপস্থিতিতে নেমে চারটি ফিফটি করে দৃষ্টি কাড়েন রিজা হেনড্রিকস। পরে বাভুমা রান পাননি বিশ্বকাপের মূল আসরেও। নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে প্রোটিয়ারা সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলে ম্যাচ শেষে ‘অধিনায়কত্ব ছাড়বেন কি না’ প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। তবে বাভুমা অধিনায়কত্ব ছাড়েননি। বলেছিলেন, যতক্ষণ সতীর্থদের সমর্থন আছে, ততক্ষণই দায়িত্বে থাকবেন।

আরও পড়ুন

এ বছরের প্রথম দিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়তে হয় তাঁকে, তবে এর বদলে পেয়ে যান টেস্টের দায়িত্ব। ব্যাট হাতে ছন্দে ফেরেন ওয়ানডে সংস্করণেও। শুধু ছন্দেই নয়, হয়ে ওঠেন ব্যাট হাতে দলের সেরা পারফরমারও। ২০২৩ সালের প্রথম দিন থেকে বিশ্বকাপ শুরুর আগপর্যন্ত খেলা ১০ ইনিংসে ৩টি শতক, ২টি ফিফটিসহ তোলেন ৬৩৭ রান, যা দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর সব দেশ মিলিয়ে এ সময়ে কমপক্ষে ৬০০ রান তোলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় (৭৯.৬২), সামনে শুধু কেইন উইলিয়ামসন (৯০.০০)।

যার অর্থ, বাভুমাও রানের মধ্যেই আছেন, হয়তো সাময়িক বিরতিই চলছে। উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যরা যেহেতু রান পাচ্ছেন, বাভুমারও আর পেতে কতক্ষণ!

আর সব কথার বড় কথা, এবারের বিশ্বকাপে রান যদিও না–ও পান, একটা সাফল্য তা আড়াল করে দিতে পারে। যে সাফল্যের পেছনে দক্ষিণ আফ্রিকা ছুটছে বছরের পর বছর।

জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাগবি। ২০১৯ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক সিয়া কোলিসির নেতৃত্বে রাগবি বিশ্বকাপ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা (এবারও ফাইনালে উঠে গেছে, ২৮ অক্টোবর শিরোপানির্ধারণী)। সেটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় ট্রফি। বাভুমার সামনে এখন ক্রিকেটে প্রথম ট্রফি এনে দেওয়ার হাতছানি। আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে সেটি যদি পারেন, তবে প্রজাতন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসগড়া অধিনায়ক হবেন তিনি, নিশ্চিতভাবে দেশে ফেরার পর তাঁর সঙ্গে করমর্দন করবেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্টও।