তবু রানের পাহাড়েই উঠল ইংল্যান্ড
ম্যাচে তখন ৩৯তম ওভার শেষ। ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ২৯০ রান, উইকেট মাত্র ২টি। প্রায় সাড়ে ৭ রান রেটে ব্যাটিং করা ইংলিশরা শেষ ১০ ওভারে দলীয় রান ৪০০–এর কাছাকাছি নিয়ে যাবে—তখন এমন অনুমান করাই যায়।
কিন্তু দ্রুত রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে ইংল্যান্ড ইনিংসের শেষ ১১ ওভারে হারায় ৭ উইকেট। রানের গতি কিছুটা কমে আসে তাতে। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ইনিংস থেমেছে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানে। ডেভিড ম্যালানের ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ১৪০ রান, ৮২ রান করেন জো রুট। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান। শরীফুল ইসলামের শিকার ৩ উইকেট।
মোস্তাফিজুর রহমান নাকি শরীফুল ইসলাম? ‘পাওয়ারপ্লে’–তে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে নতুন বল কে ভাগাভাগি করবেন, এ নিয়ে নিশ্চয়ই দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুয়াহাটির প্রস্তুতি ম্যাচে মোস্তাফিজের বলে জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড ম্যালান—দুজনই আউট হয়েছিলেন। সাকিব সে ভাবনা থেকেই হয়তো বলটা তুলে দেন অভিজ্ঞ মোস্তাফিজের হাতে।
সুইংয়ে শরীফুলের মতো ওতটা ধারাবাহিক না হলেও আজ মোস্তাফিজের শুরুটা খারাপ হয়নি। ভালো লেংথের সঙ্গে বাউন্সার মিশিয়ে কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ডেভিড ম্যালান যখন ৪ রানে খেলছিলেন, তখন মোস্তাফিজের বাউন্সারে পুল শট খেলার চেষ্টা করেন।
কিন্তু ম্যালানের কাঁধে লেগে বল যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। বাংলাদেশ দলের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও সাকিব রিভিউ নেন। পরে দেখা যায় বল ম্যালানের ব্যাটে নয়, কাঁধ ছুঁয়ে গেছে। পরের ওভারে শরীফুলের ইনসুইংয়ে আরও একবার জোরালো আবেদন। কিন্তু জনি বেয়ারস্টোর ভাগ্য ভালো। ইনসুইংয়ে ভেতরে আসা বলটি লেগ স্টাম্পের কিছুটা বাইরে পিচ করে।
শরীফুলের করা ওই ষষ্ট ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান ছিল ৩১। বাংলাদেশের বোলিংয়ে ওটুকু সময়ই কিছুটা চাপে ছিল ইংল্যান্ড। এরপর দুই ইংলিশ ওপেনার আর পেছনে ফিরে তাকাননি। মোস্তাফিজ, শরীফুল, সাকিব ও শেখ মেহেদী হাসানের পাওয়ারপ্লের পরের ওভারগুলোতে হাত খুলে খেলে ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের রানটাকে নিয়ে যান ৬১ রানে।
উপায় না দেখে মিরাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাকিব, কিন্তু তা কাজে দেয়নি। প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি বের করেছেন দুই ইংলিশ ওপেনার। ফিফটি করে দুজনই এগোচ্ছিলেন বড় ইনিংসের পথে। ভাগ্য ভালো, সাকিব তাঁর প্রথম স্পেলের শেষে এসে বেয়ারস্টোকে আউট করেন। ১৮তম ওভারে ভালো লেংথ থেকে ভেতরে আসা বল ক্রিজ থেকে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ৫৯ বল খেলে ৮টি চারের সৌজন্যে ৫২ রান করে আউট হন বেয়ারস্টো।
ইংল্যান্ডের রান তখন ১ উইকেটে ১১৫। ইংল্যান্ডের জন্য এর চেয়ে আদর্শ মঞ্চ আর কী হতে পারে। একদিকে ম্যালান খেলছিলেন ১২০ স্ট্রাইক রেটে, তিনে নামা জো রুটও খেলছিলেন প্রায় একই গতিতে। ম্যালান ৯১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন। এটি তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, এ বছরে চতুর্থ। শেখ মেহেদীর বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগের ১৬ বলে আরও ৪০ রান যোগ করেন এই বাঁহাতি। ১০৭ বল খেলে ১৪০ রান করেন ম্যালান, ১৬টি চার ও ৬টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে।
৪৪ বলে ফিফটি করে তিন অঙ্কের দিকে এগোতে থাকেন রুটও। শরীফুল অবশ্য সেটি হতে দেননি। ম্যালানের বিদায়ে ক্রিজে আসা জস বাটলার ১০ বলে ২০ রান করে আউট হন শরীফুলের নাকল বল স্টাম্পে টেনে এনে। শরীফুলের নাকল বল বুঝতে পারেননি রুটও। পুল শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন। আউট হওয়ার আগে ৬৮ বলে ৮১ রান করেন ৮টি চার ও ১টি ছক্কায়। ৪২তম ওভারের ঠিক পরের বলেই অফ কাটারে লিয়াম লিভিংস্টোনের স্টাম্প ভেঙে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান।
গতির বৈচিত্র্য কাজে লাগিয়েছেন মেহেদীও। হ্যারি ব্রুককে ৪৫তম ওভারের প্রথম দুটি বল জোরের ওপর করে পরেরটি আস্তে করলে লং অফ বাউন্ডারিতে ক্যাচ তোলেন ব্রুক (২০)। মেহেদীর বলে লং অফে ক্যাচ তোলেন স্যাম কারেনও (১১)। এবার নাজমুল হোসেন ডাউভ দিয়ে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন। আদিল রশিদকেও মিড উইকেট বাউন্ডারিতে হৃদয় ও নাজমুলের রিলে ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।
দ্রুত উইকেট পড়ায় ইংল্যান্ডের রানের গতি কিছুটা কমে আসে। তিন শ পেরিয়ে যে গতিতে এগোচ্ছিল ইংলিশ ইনিংস, তাতে মনে হচ্ছিল চার শ রানও সম্ভব। কিন্তু সেটা হতে দেননি মেহেদী ও শরীফুল। মেহেদী ৮ ওভারে ৭১ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেন, শরীফুল ১০ ওভারে ৭৫ রানে শিকার করেন ৩ উইকেট। দুজনের সৌজন্যে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস। এই রানের জবাবে বাংলাদেশ কেমন করে, সেটাই দেখার বিষয়।