বোলিং দাপটের পর মিরপুরে ‘মানকাডিং’ নাটক
মেঘলা আকাশের নিচে পেস বোলিংয়ের দাপট দেখা যাবে। উইকেট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে স্পিনারদের। দুইয়ের মিশেলে নিউজিল্যান্ডকে অল্প রানের আটকে ফেলার আশা ছিল বাংলাদেশ দলের। ১৬৬ রানে ৬ উইকেট শিকার করে সে পথেই এগোচ্ছিল লিটন দাসের দল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রানটাকে নিয়ে যান ২৫৪-তে। বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ ও মেহেদী হাসান।
বাংলাদেশও কিছু রান উপহার দেওয়ার দায় এড়াতে পারবে না। ১৭ রানে ব্যাট করতে থাকা ইশ সোধিকে হাসান মাহমুদ ‘মানকাডিং’ করলেও তাঁকে ফিরিয়ে আনেন লিটন। সেই সোধির ব্যাট থেকে আসে আরও ১৮ রান, নিউজিল্যান্ড যোগ করে ৩০। কঠিন উইকেটে এই রানই হয়ে উঠতে পারে ম্যাচের ফল নির্ধারক।
শুরুটা হয় মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে। প্রথম ম্যাচের মতো আজও নতুন বলে দারুণ বোলিং করেছেন এই বাঁহাতি পেসার। বাড়তি বাউন্স পেয়েছেন, সঙ্গে বাঁহাতি অ্যাঙ্গেল তো ছিলই। তা কাজে লাগিয়ে চমকে দিয়েছেন আগের ম্যাচে ফিফটি করা নিউজিল্যান্ডের ওপেনার উইল ইয়ংকে।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজের করা শর্ট বল কিছুটা ভেতরে আসে, তাতে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইয়ং। ৮ বল খেলে কোনো রান না করেই আউট হন তিনি। আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। সপ্তম ওভারে মোস্তাফিজের ফুল লেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তোলেন অ্যালেন (১৫ বলে ১২ রান)। সেখানে দ্রুত গতিতে যাওয়া ক্যাচটা ধরেন সৌম্য সরকার।
তৃতীয় পেসার হিসেবে সুযোগ পাওয়া খালেদ আহমেদও তাঁর স্পেলের শুরুটা করেন উইকেট নিয়ে। নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম ওভারেই চ্যাড বসকে শর্ট বলের ফাঁদে ফেলেন খালেদ। মিড উইকেটের দিকে পুল করতে গিয়ে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন বস। ১৯ বলে ১৪ রান করে দারুণ শুরুর পরও ইনিংস লম্বা হয়নি তাঁর।
৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তখন বড় বিপদে। সেখান থেকে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল ও হেনরি নিকোলস শুরুর কঠিন সময়টা পার করেন। ভালো স্ট্রাইক রেটে রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখান। দুজনের যুগলবন্দীতে ফাটল ধরান দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে আসা খালেদ।
২৭তম ওভারে খালেদের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড হন নিকোলস। আউট হওয়ার আগে ৬১ বলে ৬টি চারের সৌজন্যে ৪৯ রান করেন এই বাঁহাতি। নিকোলস আউট হওয়ায় দুজনের ১১১ বলে ৯৫ রানের জুটি ভাঙে। মাঝের ওভারের ওই ধাক্কার পর আর কোনো বড় জুটি গড়তে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা।
চার ওভার পর রাচিন রবীন্দ্রকে আউট করে উইকেটের খাতা খোলেন মেহেদী। জোরের ওপর করা অফ স্পিন ব্যাক ফুট থেকে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন রবীন্দ্র (১৪ বলে ১০ রান)। উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদও। ৩৪তম ওভারে দারুণ এক ইয়র্কারে ব্লান্ডেলের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন হাসান। ৬৬ বল খেলে ৬৮ রান করা এই কিউই উইকেটকিপার তখন দারুণ খেলছিলেন, ৬টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল তাঁর ১০৩ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে।
নিউজিল্যান্ডের সর্বশেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানও ছিলেন রবীন্দ্র। তবে কোল ম্যাককোচি, ইশ সোধি, কাইল জেমিসনদের ছোট ছোট ইনিংস নিউজিল্যান্ডের রানটাকে নিয়ে যায় আড়াই শ’র ওপারে। তিন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল সোধির ইনিংসটি। বাংলাদেশ দলের পেসার হাসান ৪৫.৩ ওভারে ওভারে নন স্ট্রাইকে থাকা সোধিকে ‘মানকাডিং’ করেন। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে মানকাডিং করলেন এই ডানহাতি পেসার।
আউট হওয়ার পর হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়তে থাকেন সোধি। যাওয়ার পথে ব্যাটে চাপড় মেরে কোনো কিছু ইশারাও করছিলেন এই কিউই লেগ স্পিনার। তখনই অধিনায়ক লিটন দাসকে আম্পায়ার এরাসমাসের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এরপর আম্পায়ার সোধিকে ফিরে আসার সংকেত দেন। ক্রিজের কাছাকাছি এসেই সোধি এগিয়ে যান হাসানের দিকে। হাসতে হাসতে হাসানকে বুকে জড়িয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরে যান তিনি।
তখন ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন সোধি। খালেদের বলে তিনিই নিউজিল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ৩৯ বলে ৩৫ রান করে। তাঁর সৌজন্যে নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ৪৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান করে।