ইশ্, ব্যাট–বলে দুর্দান্ত এই নারাইনকে যদি পেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ!
এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশি ছক্কা কার? উত্তর হলো, সুনীল নারাইনের। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা কলকাতা নাইট রাইডার্সের সবচেয়ে বেশি উইকেট? এটাও সুনীল নারাইনের।
৩৫ বছর বয়সী নারাইন ব্যাটে–বলে রীতিমতো জ্বলে উঠেছেন এবারের আইপিএলে। কাল রাতেই যেমন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে ৩৯ বলে খেলেছেন ৮১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। পরে বল হাতে ৪ ওভারে নিয়েছেন ১ উইকেট।
অথচ আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা যাবে না নারাইনকে। ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ছন্দে থাকা খেলোয়াড়টিকে ছাড়াই নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ খেলতে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নারাইন আইপিএল খেলছেন ২০১২ সাল থেকে। এখন পর্যন্ত একটা দলেই—কলকাতা নাইট রাইডার্স। শুরুর দিকে খেলতেন শুধুই বোলার হিসেবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বের করে এনেছেন নিজের ব্যাটিং–সত্তাও। ওপেনিং করছেন নিয়মিত। তবে টপঅর্ডারে নিয়মিত খেললেও সেঞ্চুরি ছিল না এত দিন। এবারের আসরে সেই শূন্যতা ঘোচান কলকাতায় রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ১০৯ রানের ইনিংস খেলে। দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটির সম্ভাবনা জাগিয়েছেন কাল, যখন লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে ২৭ বলে ফিফটি করে ছুটছিলেন দুরন্ত গতিতে। শেষ পর্যন্ত ৭ ছক্কা আর ৬ চারে ৮১ রান করে থামতে হয়েছে রবি বিষ্ণয়ের বলে।
সেঞ্চুরি না পেলেও রানে আইপিএলের অনেক বড় তারকাকেই পেছনে ফেলে দিয়েছেন নারাইন। তাঁর ১১ ম্যাচে ৪৬১ রান এই মুহূর্তের টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ। সামনে শুধু বিরাট কোহলি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ছক্কার সংখ্যায় অবশ্য নারাইনের ওপরে কেউ নেই। এখন পর্যন্ত ৩২টি ছয় এসেছে নারাইনের ব্যাট থেকে, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হাইনরিখ ক্লাসেন ৩১ ছয় নিয়ে দুইয়ে।
বাঁহাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ‘রহস্য স্পিনে’ও দারুণ সফল নারাইন। এখন পর্যন্ত ১১ ইনিংসে নিয়েছেন ১৪ উইকেট, যা উইকেটশিকারিদের মধ্যে ষষ্ঠ। তবে ইকোনমির দিক থেকে ছয়জনের মধ্যে নারাইনই দ্বিতীয় (৬.৬১)। সেরা ইকোনমি ১৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে থাকা যশপ্রীত বুমরার (৬.২৫)।
নারাইনের এই সাফল্যই গত দুই আসরে প্লে–অফে খেলতে না পারা কলকাতাকে এবার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে তুলতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন টম মুডি। হায়দরাবাদের ২০১৬ আইপিএলজয়ী কোচ ইএসপিএনক্রিকইনফোর টাইমআউট অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘নারাইন যা করছে, সেটা কলকাতার জন্য সত্যিকারের বোনাস। সে যা–ই করে, দ্রুততার সঙ্গে করে। যে কারণে ম্যাচে তাঁর ব্যাপক প্রভাব থাকে। যখন কিছু করতে পারে না, তখনো সময় নষ্ট করে না।’
নারাইনের ফর্ম বিবেচনায় তাঁকেই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি দরকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে সেই দলে নেই তিনি নিজের ইচ্ছাতেই। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন নারাইন। আইপিএলে নারাইনের পারফরম্যান্স দেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তাঁকে বিশ্বকাপে খেলতে অনুরোধ করেছিলেন অধিনায়ক রোভমান পাওয়েল। তবে সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন নারাইন। লিখেছেন, ‘আমার পারফরম্যান্স দেখে অনেকেই অবসর ভেঙে আমাকে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা খেলার কথা বলেছেন। এতে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল আছি। কখনো কাউকে হতাশ করতে না চাইলেও বলছি (জাতীয় দলের ফেরার) দরজাটা বন্ধই আছে।’
অবসর ভেঙে মোহাম্মদ আমির, ইমাদ ওয়াসিমের মতো অনেকে ফিরলেও নারাইন কেন ফিরবেন না, সেটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যারা গত কয়েক মাস পরিশ্রম করেছে, বিশ্বকাপ দলে থাকা তাদেরই প্রাপ্য।’
পারফরম্যান্স বলছে, নারাইনেরও বিশ্বকাপ দলে থাকাটা প্রাপ্য। কিন্তু নিজেই তিনি থাকছেন না। আইপিএলে নারাইনের একেকটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমর্থকদের আক্ষেপই হয়তো বাড়াবে! হয়তো মনে মনে তাঁরা বলে উঠবেন—ইশ্, ব্যাট–বলে দুর্দান্ত এই নারাইনকে যদি পেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ!