এশিয়া কাপ
‘পর্যটক’ বাংলাদেশের চোখ ভারতে
শ্রীলঙ্কার কাছে হারের মূল কারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারা। তবু শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বড় কিছু করার আশাটা থাকছে।
টুর্নামেন্ট শেষ হতে এখনো দিন সাতেক বাকি। অথচ সুপার ফোরের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যাওয়া বাংলাদেশ দল কলম্বো শহরে এখন অনেকটা পর্যটকের ভূমিকায়!
১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ, তার আগে ছয় দিনের বিরতি। এর প্রথম তিন দিন মাঠের অনুশীলন থেকে ছুটি। শ্রীলঙ্কার মতো নয়নাভিরাম একটা দেশে এ রকম ছুটি পাওয়া মানে ঘুরে বেড়ানোর দারুণ সুযোগ। কলম্বো এবং তার আশপাশেই তো প্রকৃতিকে উপভোগ করার কত হাতছানি! তিন দিনের ছুটিতে বাংলাদেশ দল চাইলে সেসব দেখতে একটা গাইডেড ট্যুরও নিয়ে নিতে পারত।
তবে দলের মধ্যে সে রকম কোনো চিন্তা আছে বলে শোনা যায়নি। যাঁদের টুকটাক চোট-আঘাত আছে, তাঁদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজ চলবে। কিছু ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যাঁর যাঁর মতো জিম আর সুইমিং পুলে যাওয়া-আসাটা তো বলার মতো কিছু নয়। যেটা বলার মতো, সেটাও এরই মধ্যে সবার জানা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম কাল ভোরে ঢাকায় ফিরে গেছেন।
মুশফিক গেছেন দ্বিতীয় সন্তানের আগমনের সময়টায় স্ত্রীর পাশে থাকতে। সাকিবও নাকি ‘ব্যক্তিগত’ কারণেই গেছেন, যেটা দল থেকে বলা হচ্ছে না। তবে ঢাকা থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যায় দুই দিনের সফরে বাংলাদেশ সফরে আসা ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এমানুয়েল মাখোঁর সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আজ ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিনিধি হিসেবে সাকিবও আমন্ত্রিত হয়েছেন। হতে পারে, সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই তিনি এখন ঢাকায়। এ ব্যাপারে সাকিবের কাছে জানতে চাইলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। কারণটা যা–ই হোক, ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষ নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে সাকিব, মুশফিক দুজনেরই কলম্বোয় ফিরে আসার কথা ১৩ সেপ্টেম্বর।
দলের বাকিরা এই তিন দিন কলম্বোয় থাকলেও সত্যি সত্যি পর্যটকের ভূমিকায় নেমে পড়ার মতো মনের অবস্থা আসলে কারোরই নেই। এশিয়া কাপে যদিও সুপার ফোরে ওঠাটাই একপর্যায়ে বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেটি নিশ্চিত হওয়ায় প্রত্যাশা জাগে, এই পর্বে অন্তত একটা ম্যাচ জিততে হবে। সেই জয় মনে মনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই আশা করছিল বাংলাদেশ।
অথচ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই হতাশা উপহার দিয়ে পরশু রাতে বাংলাদেশ হেরে গেছে ২১ রানে। কলম্বোয় দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসের কণ্ঠে এ নিয়ে হতাশা, ‘আমরা আশা করেছিলাম এবং আত্মবিশ্বাসীও ছিলাম যে কালকের (পরশুর) ম্যাচটি জিতব। এমনকি শ্রীলঙ্কানদেরও বলতে শুনেছি, এই ম্যাচে বাংলাদেশই ফেবারিট। ফলটা যখন সে রকম হলো না, মন তো খারাপ হবেই।’
দলের আত্মবিশ্লেষণে হারের মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারা। হাথুরুসিংহে নিজে শ্রীলঙ্কান, স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথও এই দেশেরই মানুষ। ড্রেসিংরুমে এ রকম দুজন শ্রীলঙ্কান থাকা মানে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার আগে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া। জালাল ইউনুসও সেটাই বলছিলেন, ‘আমাদের কোচ জানেন এখানকার কন্ডিশন কেমন। রঙ্গনা হেরাথও জানেন। সব পরিকল্পনা তাঁরা নিজেদের জানাশোনা থেকেই সাজিয়েছিলেন।’
এখন পর্যন্ত দলের যা পারফরম্যান্স, তাতে সন্তুষ্ট নন হাথুরুসিংহেও। পরশু ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে তাঁর বার্তার সারমর্ম অনেকটা এ রকম—এই পর্যায়ের ক্রিকেটে এমন পারফরম্যান্স মেনে নেওয়া যায় না। ভালো করার জন্য নিজেদের চেষ্টা থাকতে হবে। তিনি সেটাই নাকি দেখতে পাচ্ছেন না অনেকের মধ্যে।
শ্রীলঙ্কার ২৫৭ রানের জবাবে বিনা উইকেটে ৫৫ রান করার মতো শুরুটা যেমন পরে ধরে রাখা যায়নি, বোলিং-ফিল্ডিংয়েও অন্তত ২০-২৫ রান বেশি দিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচগুলোয় ভালো বোলিং করা পেসাররাও এদিন শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ২২০-২৩০ রানই যখন এ মাঠে জেতার জন্য যথেষ্ট, শ্রীলঙ্কা কিনা করে ফেলে ২৫৭!
ভারত বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপটা ছিল বাংলাদেশের জন্য নিজেদের সামর্থ্য দেখার সুযোগ। তাতে পাস মার্কও না পাওয়ায় এখন উল্টো দুশ্চিন্তা, এই ফলাফল না আবার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে! তার আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আছে। জয়ের মধ্যে না থাকলে টানা খেলার ক্লান্তিটাও তো বেশি অনুভূত হবে বিশ্বকাপে।
সাকিব অবশ্য পরশু দিনই বলেছেন, বিশ্বকাপে যাঁরা নিশ্চিত থাকবেন, নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাঁদের অনেককে বিশ্রাম দেওয়ার পক্ষে তিনি। কাল জালাল ইউনুসের কথায়ও পরিষ্কার, সে রকম চিন্তাভাবনা আছে বোর্ডের, ‘এ রকম একটা আলাপ-আলোচনা আছে, তবে কে খেলবে বা না খেলবে, সেসব চূড়ান্ত হয়নি। সাকিব বোলারদের বিশ্রামের কথা বলেছে। কীভাবে বিশ্রামে রাখা যায়, সেটি আমরা দেখব। দু-একজন ব্যাটসম্যান আছে, যাদের মাংসপেশিতে টান পড়েছে। তারা যেন সেসব কাটিয়ে উঠতে পারে, সেটাও দেখা হবে।’
এবারের এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচ খেলে মাত্র একটি জয় বাংলাদেশের। শেষ ম্যাচে ভারতকে হারানোটাকে তো মনে হচ্ছে অসাধ্যসাধনের কল্পনা। আবার প্রতিপক্ষ ভারত বলেই ওই ম্যাচ জিতলে সব হারিয়েও অনেক কিছু পাওয়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের। জালাল ইউনুস জানান, খেলোয়াড়দের মধ্যে নাকি সেই তাগিদ তিনি দেখেছেনও, ‘ভারতকে হারানো কঠিন কিছু নয়। ওরা ম্যাচটা জেতার জন্যই খেলবে। সবাই সেভাবেই ভাবছে এবং এটিকে সম্ভব মনে করছে। আর ভারতকে তো আমরা আগেও হারিয়েছি।’
তা ভারতকে হারালে কি শেষ দুইয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের? থাকলেও তার আগে মিলতে হবে অনেক জটিল অঙ্ক, যেসব আসলে বাংলাদেশের ভারতকে হারানোর চেয়ে বেশি কঠিন।