টেস্ট ক্রিকেটই আসল, মনে করিয়ে দিলেন হাথুরুসিংহে
‘আপনি তো আপনার দেশের হয়ে খেলছেন, তাই না?’ পাল্টা প্রশ্নে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যেন মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, বিশ্ব ক্রিকেটের রং যতই বদলাক, তাতে কিছু সত্য মুছে যায়নি। শুধু দেশের হয়ে খেলাটাই এখনো বড় গৌরব। টেস্ট ক্রিকেটই এখনো আসল ক্রিকেট।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আর বিশ্বকাপ সুপার লিগের এই যুগে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো একটা ম্যাচ বা একটা সিরিজ এখন আর বিশেষ কোনো অর্থ বহন করে না। আপনি একটা সিরিজ জিতলেন বা হারলেন, তার রেশ বা জের যা-ই বলুন, সেটাই আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে পরের সিরিজে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আর বিশ্বকাপ সুপার লিগের সুতা একটার সঙ্গে আরেকটা বাঁধা।
ক্রিকেটের এমন বর্তমানে থেকে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান একমাত্র টেস্ট, যার কোনো প্রভাবই থাকবে না আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে, এমন টেস্টের কী মানে? কী অনুপ্রেরণা নিয়ে এ ধরনের টেস্ট খেলতে নামবেন ক্রিকেটাররা?
আজ সকালে মিরপুরে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অনেকটা এভাবেই উঠল প্রসঙ্গটা। আর তখনই বাংলাদেশ কোচ মনে করিয়ে দিলেন ক্রিকেটের মৌলিক সেই কথা—টেস্ট ক্রিকেটই আসল ক্রিকেট, তা সেটা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হোক বা না হোক।
‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কথা ভুলে যান, সেটা তো চার বছর আগে এসেছে। এর আগে যখন আপনার বয়স ৯ কিংবা ১০ বছর, তখন দেশের হয়ে টেস্ট খেলাটাই ছিল স্বপ্ন। শুধু দেশের হয়ে খেলাতে যদি কারও সমস্যা থেকে থাকে, বুঝতে হবে, সে ঠিক জায়গায় নেই’, বলেছেন হাথুরুসিংহে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই বছরের সমীকরণের চেয়ে হাথুরুসিংহের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশের হয়ে খেলা এবং দেশকে জেতানো, ‘দেশের হয়ে জেতাটাই আমার এবং খেলোয়াড়দের কাছে যথেষ্ট। এটাই মূল অনুপ্রেরণা। টাইগারদের হয়ে খেলাটাই একটা সম্মান।’
তার ওপর সেটা যদি হয় টেস্ট ক্রিকেট, হাথুরুসিংহের কাছে তা শীর্ষ চূড়ায় থাকার মতোই ব্যাপার, ‘আমার মত যদি জানতে চান, টেস্ট ক্রিকেটই সবার ওপরে। একজন বোলার, ব্যাটসম্যান বা ফিল্ডার হিসেবে ক্রিকেটীয় সামর্থ্যের পরীক্ষাটা টেস্ট ক্রিকেটেই হয়। মানসিক শক্তি আর সহনশীলতার পরীক্ষাও এখানেই বেশি হয়। কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে গৌরবান্বিত হতে চায়, তার জন্য টেস্ট ক্রিকেটের চেয়ে সেরা আর কিছু নেই।’
তাই বলে বিষয়টা এমন নয় যে কাল থেকে শুরু টেস্টটা বাংলাদেশের জন্য নামলাম, খেললাম, চলে এলাম-জাতীয় কোনো ব্যাপার। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাস্তবতা যেহেতু অস্বীকার করার উপায় নেই, বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এ-জাতীয় টেস্টকেও কাজে লাগানোর উপায় আছে হাথুরুসিংহের কাছে।
‘বিচ্ছিন্ন দ্বীপ’ হলেও আফগানিস্তান টেস্টটা তাঁর চোখে উর্বর এক বীজতলা, যেখানে কিছু চাষাবাদ গবেষণা করে দেখবে বাংলাদেশ। প্রথমত, এই টেস্ট হাথুরুসিংহের কাছে ঘরের মাঠে নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ। মিরপুর টেস্টের জন্য বানানো যে সবুজ উইকেট নিয়ে এত আলোচনা, তার পেছনের কারণও বলতে পারেন এটাকেই। আর শুধু এই টেস্ট কেন, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তো উইকেট শুরুতে সবুজই ছিল! আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিল না সেটিও।
এ রকম দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সবুজ উইকেটে টেস্ট খেলার চিন্তাটা মূলত পেস বোলারদের সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ করে দিতেই। একই সঙ্গে ব্যাটসম্যানদেরও একটা পরীক্ষা হয়ে যায়। সবুজ উইকেটের এমন উদ্দেশ্য হাথুরুসিংহের কথায়ও পরিষ্কার, ‘আমাদের ফাস্ট বোলাররা আছে, তাদের ঘরের মাঠেও এমন কন্ডিশনে খেলতে দিতে হবে, যেন তারা অভ্যস্ত হতে পারে।’
অবশ্য উইকেট শুরুতে সবুজ থাকলেও গরম বেশি পড়লে পরের দিকে সেই সবুজটা আর থাকে না। উইকেট ভাঙলে তখন আবার সেটা স্পিনারদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই হাথুরুসিংহের কাছে মিরপুরের এই উইকেট স্পোর্টিং উইকেটই, ‘আমি তো বলব, এটা খুব ভালো স্পোর্টিং উইকেট, যেখানে ব্যাটসম্যান, ফাস্ট বোলার ও স্পিনারদের জন্যও কিছু না কিছু থাকবে। আমি খুব ভালো একটা প্রতিযোগিতা দেখতে চাই।’
এ সফরে প্রথমে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টেস্টই খেলার কথা ছিল আফগানদের। পরে সূচি বদলে কমানো হয় একটি টেস্ট। সেটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয় তো কী হয়েছে, হাথুরুসিংহের পরীক্ষাগুলো সফল হলে এই একমাত্র টেস্টের একটা অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে।