স্যামসন–তিলকের ব্যাটে ‘মহাপ্রলয়’, সিরিজ ভারতের
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর শুধু দেখার ছিল, ভারত আসলে ‘কয়শ’ রানে জেতে। পঞ্চম উইকেটে ট্রিস্টান স্টাবস ও ডেভিড মিলারের ৮৬ রানের জুটিও দক্ষিণ আফ্রিকাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। স্বাগতিকদের ১৪৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে ভারত ম্যাচটা জিতেছে ১৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে; সঙ্গে ৪ ম্যাচের সিরিজও ৩–১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতল ভারত। প্রথমবার জিতেছিল ২০১৮ সালে, রোহিত শর্মা–বিরাট কোহলির যৌথ নেতৃত্বে। এবার জিতল সূর্যকুমার যাদবের অধিনায়কত্বে।
নিজেদের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে রানের হিসেবে এটাই প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বড় হার। এর আগে বেশি ব্যবধানে হারটা ছিল ১১১ রানে, গত বছর আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
ডারবান, গেবেহা, সেঞ্চুরিয়ন—আগের ৩ ম্যাচে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। তবে আজ জোহানেসবার্গে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব টস জিতে নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নেমেছেন।
সূর্যকুমারের সিদ্ধান্ত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঠিক প্রমাণ করেন অভিষেক শর্মা, সঞ্জু স্যামসন ও তিলক বর্মা। অভিষেক ১৮ বলে ৩৬ রান করে আউট হলেও পাওয়ারপ্লেতেই ৭৩ রান তুলে ফেলে ভারত।
পরের গল্পটা শুধুই স্যামসন–তিলক জুটির। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে দুজনই তুলে নেন সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের দুই ব্যাটসম্যানের একই ইনিংসে সেঞ্চুরির ঘটনা এটাই প্রথম। স্যামসন–তিলক গড়েন ২১০ রানের অবিছিন্ন জুটি, যা স্বীকৃতি টি–টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ।
স্যামসন ও তিলক মিলে মারেন ১৯টি ছক্কা, এর আগে অভিষেক মারেন ৪টি। মোট ২৩ ছক্কায় বাংলাদেশকে একটি ব্রিবতকর রেকর্ড থেকে মুক্তি দিয়েছে ভারত। গত অক্টোবরে হায়দরাবাদে সিরিজের শেষ টি–টোয়েন্টির রাতে ২৯৭ রান করার পথে ২২টি ছক্কা মেরেছিল ভারত, যা কোনো দলের বিপক্ষে ছিল তাদের সর্বোচ্চ।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের এমন বেধড়ক পিটুনির দিনে প্রোটিয়া বোলারদের কী হাল হয়েছে, তা বল হাতে একেকজনের ‘দানবীর’ হয়ে ওঠা দেখেই বোঝা যায়। ম্যাচে নিজেসহ ৭ বোলার ব্যবহার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক মার্করাম; শুধু মার্কো ইয়ানসেন (১০.৫০) ছাড়া প্রত্যেকের ইকোনমি রেট ১৪–এর ওপরে!
জোহানেসবার্গের যে পিচ স্যামসন–তিলকের কাছে মনে হয়েছে ব্যাটিং–স্বর্গ, মিলার–ক্লাসেনদের কাছে সেটাই যেন হয়ে উঠেছে বোলিং সহায়ক। ভারতের ৬ বোলারের সবাই উইকেট পেয়েছেন। ২০ রানে ৩ উইকেট নেওয়া পেসার অর্শদীপ সিং ম্যাচেরই সেরা বোলার। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও বরুণ চক্রবর্তী। ১টি করে শিকার হার্দিক পান্ডিয়া, রমনদীপ সিং ও রবি বিষ্ণইয়ের।
তিনে ‘প্রোমোশন’ পেয়ে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি, সিরিজে করেছেন সর্বোচ্চ ২৮০ রান। ম্যাচসেরার সঙ্গে সিরিজসেরার পুরস্কারটা তাই তিলকেরই প্রাপ্য ছিল।
জোহানেসবার্গ থেকে প্রাপ্তির খাতায়ও ভারতের অর্জন আরও বাড়ল। ২০০৬ সালে নিজেদের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ম্যাচেই তারা জয় পেয়েছিল জোহানেসবার্গেই। পরের বছর প্রথম টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল এ মাঠেই। ব্যাটে–বলে ঝলমলে দিন কাটিয়ে পয়মন্ত ভেন্যু জোহানেসবার্গ থেকে এবারও সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরছে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ২০ ওভারে ২৮৩/১
(তিলক ১২০*, স্যামসন ১০৯*, অভিষেক ৩৮; সিপামলা ১/৫৮)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৮.২ ওভারে ১৪৮ অলআউট
(স্টাবস ৪৩, মিলার ৩৬, ইয়ানসেন ২৯*; অর্শদীপ ৩/২০, অক্ষর ২/৬, বরুণ ২/৪২)।
ফল: ভারত ১৩৫ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৪ ম্যাচের সিরিজ ভারত ৩–১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তিলক বর্মা।
ম্যান অব দ্য সিরিজ: তিলক বর্মা।