অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে নির্বাচকদের দরজায় কড়া নাড়ছেন সরফরাজের ভাই মুশিরও

দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন মুশিরবিসিসিআই

এক ভাইয়ের সেঞ্চুরিতে আরেক ভাই তো উদ্‌যাপন করবেনই। আর দুই ভাই যদি এক দলে খেলেন, তাহলে তো কথাই নেই।

মুশির খানের সেঞ্চুরিতে সরফরাজ খানের উদ্‌যাপনও তেমনই। তবে বিশেষ দিক হচ্ছে উদ্‌যাপনের মিলে। মাঠে তিন অঙ্ক ছোঁয়া মুশির আর ড্রেসিংরুমের ব্যালকনিতে থাকা সরফরাজ—দুজনই উদ্‌যাপন করার সময় ক্যামেরার সামনে ছুটে গেছেন। এরপর ব্যাট দিয়ে বাতাসে পাঞ্চ। পার্থক্য বলতে সরফরাজ পাঞ্চ করেন ডান হাতে, মুশির বাঁ হাতে। যদিও মুশিরও ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

যে উদ্‌যাপন নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি দুলীপ ট্রফির। ভারতের প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া টুর্নামেন্টটিতে সরফরাজ–মুশির খেলছেন ভারত ‘বি’ দলের হয়ে। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ শুবমান গিলের নেতৃত্বাধীন ভারত ‘এ’ দল।

চার দলের এ প্রতিযোগিতায় ভারত জাতীয় দলের বেশির ভাগ তারকা ক্রিকেটারই অংশ নিয়েছেন। লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়াল থেকে রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রিশভ পন্ত—সবাই খেলছেন দুলীপ ট্রফিতে।

ভারতের প্রথম সারির বেশির ভাগ ক্রিকেটারের অংশগ্রহণের কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজ। চলতি মাসে নিজেদের মাঠে নাজমুল হোসেনদের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ খেলবে রোহিত শর্মার দল। অজিত আগারকারের নেতৃত্বাধীন ভারতের নির্বাচক কমিটি এখনো দল ঘোষণা করেনি।

ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রোববার দুলীপ ট্রফির প্রথম রাউন্ড শেষে বাংলাদেশ সিরিজের দল ঘোষণা করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচকদের চোখ থাকা ম্যাচে পারফর্ম করতে মুখিয়ে থাকেন সবাই। ১৯ বছর বয়সী মুশির এমন এক ম্যাচে শুধু পারফর্মই করেননি, রীতিমতো প্রথম ইনিংসে ডুবতে থাকা ভারত ‘বি’ দলকে একা হাতেই টেনে তুলেছেন।

গতকাল ম্যাচের প্রথম দিনে মুশির উইকেটে আসেন ৩ নম্বরে, দলীয় রান তখন ৩৩। সেখান থেকে ৯৪ রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত ‘বি’ দল। যশস্বী জয়সোয়াল, পন্ত, সরফরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দর—বড় রান পাননি কেউই। পরীক্ষিতদের ব্যর্থতার মাঝে এক প্রান্তে আগলে দাঁড়ান মুশির। অষ্টম উইকেটে নবদ্বীপ সাইনির সঙ্গে গড়ে তোলেন দুই শর বেশি রানের জুটি। ২০৫ রানের জুটিটি ভাঙে মুশির ১৮১ রান করে কুলদীপ যাদবের বলে আউট হলে। শেষ পর্যন্ত তাঁর দল প্রথম ইনিংসে তোলে মোট ৩২১ রান।

১৮১ রানের ইনিংস খেলার পথে কয়েক দফা কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে মুশিরকে। একে তো অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যানের আসা–যাওয়া, অন্যদিকে প্রতিপক্ষ দলে থাকা পেসার খলিল আহমেদ, আকাশ দীপ, আভেশ খানদের একের পর এক বাউন্সার।

আরও পড়ুন

শুরুর দিকে কিছুটা রয়েসয়েই খেলেছেন, তবে পরের দিকে পাল্টা আক্রমণে পুল করেছেন, খেলেছেন র‌্যাম্প শটও। দাপট দেখিয়েছেন স্পিনারদের ওপরও। এমন একটি সেঞ্চুরি তো নির্বাচকদের চোখ এড়ানোর কথা নয়! নির্বাচকদের চোখে পড়া মানেই যে হুট করে দলে আসবেন, তা নয়। ভারতীয় ক্রিকেট দলে জায়গা পেতে নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

গত মার্চে সরফরাজের জাতীয় দলে অভিষেক হয়
এএফপি

সরফরাজ তো বছরের পর বছর পারফর্ম করে শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন এ বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৯ বছর বয়সী মুশিরের জন্য দৃষ্টান্ত তাঁর ঘরেই আছে। মুশির শুধু নিজের কাজটাই করে যেতে পারেন! আর সেটা তো করছেনও।

চলতি বছর অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে করেছেন দুটি সেঞ্চুরি। এরপর রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, সেমিফাইনালে ফিফটির পর ফাইনালে আবার করেছেন সেঞ্চুরি। এখন দেখা যাক মুশিরের জন্য কবে ভারতীয় দলের দরজা খোলা হয়।

আরও পড়ুন