দক্ষিণ আফ্রিকা-নেপালের ম্যাচে প্রোটিয়াদের জয়ে বাংলাদেশ দলের সুপার এইটে ওঠার সমীকরণ সহজ হয়ে গেল। একসময় মনে হচ্ছিল, নেপালের জয় মোটামুটি নিশ্চিত। সেটি হলে বাংলাদেশকে সুপার এইটে যেতে নেপালকে আগামীকালের ম্যাচে হারাতেই হতো।
তবে এখন নেট রান রেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে নেপালের বিপক্ষে হারলেও নাজমুলদের সুপার এইটে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে। রান রেটের প্রসঙ্গটা আনলাম একাডেমিক কারণে। কোনোভাবেই চাইব না, বাংলাদেশ দলের চিন্তাভাবনায় রান রেটের ব্যাপারটা আসুক। আমার বিশ্বাস, নেপালকে হারিয়ে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই পরবর্তী রাউন্ডে যেতে চাইবে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে যে কটি সহযোগী সদস্যদেশের ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ হওয়ার সম্ভাবনা দেখেছিলাম, তাদের মধ্যে নেপাল অন্যতম। মাঠের খেলায়ও তারা সেই ছাপ রাখতে পেরেছে। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটা তার আরেকটি প্রমাণ। এখন পর্যন্ত যতগুলো ম্যাচ দলটা খেলেছে, এর মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই।
তবে বাংলাদেশ যদি গতকালের ম্যাচে নেপালের পারফরম্যান্স দেখে পরিকল্পনা সাজায়, তাহলে হয়তো ভুল হবে। নেপাল ভালো ক্রিকেট খেলেছে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকা যে মোটেও তাদের মান অনুযায়ী খেলেনি, সেটিও সত্যি। কথাটা এ কারণেই বলা, গতকাল ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিপদে ফেলা নেপালের কুশল ভুরতেল মূলত একজন ওপেনার ও অনিয়মিত বোলার। আগের ম্যাচগুলোতে তিনি এক ওভারও বল করেননি। তাঁর কাছে ৪ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকারই ব্যর্থতা।
সে জন্যই বাংলাদেশ দল নেপালের পারফরম্যান্স দেখে ছক আঁকলে ভুল করবে। আমি নিশ্চিত, তারা সে পথে যাবেও না। কারণ, বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দল যে মানসিক অবস্থানে ছিল, সে জায়গা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে এখন। বাংলাদেশ এখন একটা সংগঠিত দল। যে দলের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে যথেষ্ট শক্তি আছে। এখনো হয়তো অনেকে টপ অর্ডার নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। কিন্তু একজন ব্যর্থ হলে আরেকজন দায়িত্ব নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থানে দলটা চলে এসেছে। নেদারল্যান্ডসের ম্যাচের কথাই যদি বলি, আগের দুই ম্যাচে ভালো খেলা হৃদয় সেদিন ব্যর্থ হলেও সাকিব কিন্তু ঠিকই দাঁড়িয়ে গেছে।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা আগে থেকেই। তবে মাহমুদউল্লাহকে ব্যবহারে অধিনায়ক হয়তো আরও উদার হতে পারে। ব্যাটিংয়েও ক্রমে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া লাগছে। নেপালের ম্যাচে যদি লিটন–নাজমুলও রান পেয়ে যায়, তাহলে একটা পূর্ণতার অনুভূতি নিয়ে সুপার এইটে যাবে বাংলাদেশ। দুজনের জন্যই ফর্মে ফেরার সুযোগ এটি। সন্দ্বীপ লামিচানে ছাড়া নেপালের বোলিংকে সেই অর্থে খুব বড় হুমকি মনে করার কোনো কারণ নেই।
সেন্ট ভিনসেন্টের মাঠে খেলা যেহেতু, উইকেট, আউটফিল্ড ইত্যাদি নিয়ে দুই দলেরই ধারণা থাকবে। তবে নেপাল এ মাঠে রাতে ম্যাচ খেলেছে, বাংলাদেশ খেলেছে সকালে। বাংলাদেশকে রাতের কন্ডিশনের ধাঁধার সমাধান করতে হবে। আর দল যে ছন্দে আছে, তাতে মনে হয় না আগের ম্যাচের একাদশে পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। আশা করি, ম্যাচের ফলেও কোনো পরিবর্তন আসবে না।
লেখক: কোচ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক।