আফগানদের টুর্নামেন্ট-দর্শন: যে দেশে খেলা, সে দেশ থেকে ‘মেন্টর’
অজয় জাদেজা, ডোয়াইন ব্রাভো, ইউনিস খান—তিনজনের মধ্যে কি কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন?
রসিকতা করে কেউ হয়তো বলতে পারেন—তিনজনই সাবেক ক্রিকেটার, তিনজনই ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং তাঁদের জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। হ্যাঁ, এ ধরনের মিল তো অনেকের সঙ্গেই অনেকের আছে। কিন্তু আরেকটি দিক থেকে জাদেজা, ব্রাভো ও ইউনিসকে এক বিন্দুতে মিলিয়েছে আফগানিস্তান।
দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) গতকাল ইউনিসকে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তাদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এর আগে ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্রাভো ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে জাদেজা আফগানদের পরামশর্কের ভূমিকায় ছিলেন। সবচেয়ে বড় মিলটা এখানেই। তাঁরা তিনজনই আফগানিস্তান দলের মেন্টর বা পরামর্শক।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে—আফগানিস্তানের এত ঘন ঘন পরামর্শক বদলানোর কারণ কী? কিংবা টানা তিনটি বৈশ্বিক আসরে কেন ভিন্ন তিন পরামর্শককে নিয়োগ দিল আফগানিস্তান? এই বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার কারণে এসিবিকে দশে দশ দেওয়াই যায়।
অজয় জাদেজা একজন ভারতীয়, ডোয়াইন ব্রাভো ক্যারিবীয় আর ইউনিস খান পাকিস্তানি। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল জাদেজার দেশ ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করেছে ব্রাভোর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর হাইব্রিড মডেলে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন করবে ইউনিসের দেশ পাকিস্তান। অর্থাৎ, যে বছর যে দেশে বৈশ্বিক আসর বসছে, সেই দেশেরই সাবেক কোনো ক্রিকেটারকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চলেছে এসিবি।
যেখানেই মিষ্টি, সেখানেই পিঁপড়াদের বিচরণ—এসিবি যেন কথাটিকে নবরূপ দান করছে এভাবে: যে দেশে আইসিসির টুর্নামেন্ট, সেই দেশ থেকেই পরামর্শক নিয়োগ! এসিবি কেন এ পথে হাঁটছে, কারণটাও অনুমেয়। স্থানীয় পিচ ও কন্ডিশন সম্পর্কে রশিদ–নবী–গুরবাজরা যেন স্বচ্ছ ধারণা পান।
এসিবির এই দূরদর্শী ভাবনা দলের শুধু কাজেই আসেনি, তারা অনেকের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য পেয়েছে।
ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে জাদেজাকে পরামর্শক হিসেবে পেয়ে আফগানিস্তান হয়েছে ষষ্ঠ। ওই আসরে আফগানরা হারিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২০১ রানের অতিমানবীয় ইনিংসটি না খেললে সেমিফাইনালেও উঠে যেতে পারত তারা।
বিস্ময়কর হলেও সত্যি, সেই আসরে অজয় জাদেজা আফগানিস্তানকে দারুণ সাফল্য এনে দিতে সহায়তা করলেও এসিবির কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসেবে এক টাকাও নেননি!
অল্পের জন্য ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নপূরণ না হলেও বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি আফগানদের। গত বছর ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেন রশিদ–নবীরা। যে সাফল্যের অন্যতম কারিগর দলটির বোলিং পরামর্শকের ভূমিকায় থাকা ডোয়াইন ব্রাভো।
আসরের ১৬টি ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রে হলেও আফগানিস্তানের সব ম্যাচ পড়েছিল ব্রাভোর ওয়েস্ট ইন্ডিজে। গ্রুপ পর্বে রশিদ খানের দল হারিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে, সুপার এইট পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে। এরপর ‘অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল’ হয়ে ওঠা ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দলটি কোনো বৈশ্বিক আসরের শেষ চারে জায়গা করে নেয়।
এবার পাকিস্তানের ইউনিস খানকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিশ্চয় বড় কিছু উপহার দিতে চাইবে আফগানিস্তান। ৪৭ বছর বয়সী ইউনিসের সঙ্গে এসিবির সম্পর্কটাও পুরোনো। এর আগে ২০২২ সালে আবুধাবিতে আফগানদের একটি ট্রেনিং ক্যাম্পে কাজ করেছেন পাকিস্তানের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক।
হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শুধু ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলবে দুবাইয়ে। আফগানিস্তান ভারতের গ্রুপে না পড়ায় তাদের ম্যাচগুলো হবে পাকিস্তানেই।