ওয়ার্নারের টেস্ট ক্যারিয়ার কি শেষ

অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারএএফপি

যেভাবে সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন, সেটা দুর্ভাগ্যজনক।

দিল্লিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে কনুই এবং মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ‘কনকাশন’–এর ধাক্কা সামলে উঠলেও কনুইয়ের পরীক্ষা দিয়েছে দুঃসংবাদ। সিরিজে পরের দুই টেস্ট থেকে ছিটকে যান ওয়ার্নার। এরই মধ্যে ভারত ছেড়ে দেশে ফেরার বিমান ধরেছেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি এ ওপেনার।

সিরিজের মাঝপথে ওয়ার্নারের টেস্ট দল ছেড়ে যাওয়া অনেকের চোখে প্রতীকী ঘটনা। হতে পারে এটিই তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে সমাপ্তির ছবি। নানা সমীকরণ মিলিয়ে এমন আভাসই দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো।

আরও পড়ুন

সিডনি মর্নিং হেরাল্ড তো ওয়ার্নারের দেশে ফেরার খবর দিতে গিয়ে প্রথম বাক্যেই লিখেছে, ‘চোটের কারণে সিরিজ থেকে ছিটকে যাওয়া প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানটি শেষবারের মতো ব্যাগি গ্রিন পরলেন কি না।’ চ্যানেল নাইন, সেভেন নিউজ, ফক্স স্পোর্টসের সংবাদের মূল সুরও একই।

ভারতে তিন ইনিংস ব্যাট করে মোটে ২৬ রান করেছেন ওয়ার্নার
রয়টার্স

সংবাদমাধ্যমের এই আলোচনায় আজ অনুকূল বাতাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচক টনি ডোডেমেইড। এ বছরের জুন-জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ টেস্টের সিরিজটির পরিকল্পনায় ওয়ার্নার আছেন কি না, এমন জিজ্ঞাসায় সরাসরি জবাব দিতে দিতে চাননি ডোডেমেইড।

তবে যা বলেছেন, তা ওয়ার্নারের জন্য অনুকূল কিছু নয়, ‘আমরা আপাতত (চলতি সিরিজের) বাকি দুই টেস্ট নিয়ে ভাবছি। এখানেই সব মনোযোগ। অ্যাশেজ নিয়ে পরে ভাবব। তবে টেস্ট সিরিজের জন্য আমরা মানানসই ক্রিকেটারই বেছে নেব, বিশেষ করে অ্যাশেজের মতো বড় সিরিজে।’

আরও পড়ুন

‘ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজের জন্য মানানসই ক্রিকেটার’ মানদণ্ডে ওয়ার্নার কাটা পড়েন শুরুতেই। এখন পর্যন্ত ১৩টি টেস্ট খেলেছেন ইংল্যান্ডে, একটিতেও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ২০১৯ সালের সর্বশেষ সফর তো রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। সেই সফরে ৭ বারই স্টুয়ার্ট ব্রডের শিকার হয়েছিলেন তিনি।

শুধু অ্যাশেজ নয়, ওয়ার্নারের সাম্প্রতিক ফর্মও তাঁর পক্ষে কথা বলছে না। নিজের সর্বশেষ ২৪টি টেস্ট ইনিংসে গড় ২৬.৩৯ রান, পঞ্চাশ পার করতে পেরেছেন মাত্র ৩ বার। সর্বশেষ বক্সিং ডে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিশতক না করলে হয়তো ভারত সফরের টেস্ট দলেও জায়গা পেতেন না।

আরও পড়ুন

ভারতের মাটিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ব্যাটিং করেছেন তিন ইনিংস। নাগপুরে আউট হয়েছেন ১ ও ১০ রানে, দিল্লি টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৫ রানে। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক ফর্ম বা ইংল্যান্ডের মাটিতে পারফরম্যান্স—কোনোটিই ওয়ার্নারের পক্ষে নয়। এই অফ-ফর্মের কারণে যদি চলতি বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজটি থেকেই বাদ পড়ে যান, তাহলে ৩৬ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে নির্বাচকেরাও কি আর ভাববেন?

দিল্লি টেস্টে কনুইয়ে চোট পান ওয়ার্নার
রয়টার্স

১০৩ টেস্টে ২৫ সেঞ্চুরির মালিক অবশ্য নিজেও টেস্টে খেলা বেশি দিন চালিয়ে যাবেন বলে আশাবাদী নন। নতুন বছরের শুরুতে অবসরবিষয়ক এক প্রশ্নে ওয়ার্নার জানান, ২০২৩ সালেই এক বা একাধিক সংস্করণের খেলা ছেড়ে দেবেন। কোন সংস্করণে খেলা চালিয়ে যাবেন সেটাও স্পষ্ট করেছিলেন, ‘২০২৪ বিশ্বকাপের দিকে আমার দৃষ্টি আছে। আমেরিকার মাটিতে বড় জয় দিয়ে শেষ করতে পারাটা দারুণ ব্যাপার হবে।’

আরও পড়ুন

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি খেলা চালিয়ে যাবেন, আর এ বছরই ছেড়ে দেবেন টেস্ট বা ওয়ানডে, অথবা দুটোই। বছরের শেষ দিকে যেহেতু ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে, আর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বিবৃতিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ফেরার কথা বলা আছে—পঞ্চাশ ওভার ক্রিকেটে ওয়ার্নার ভালোমতোই টিকে আছেন এটা বলাই যায়।

বাকি থাকে তাহলে টেস্ট ক্রিকেট। আসন্ন অ্যাশেজে যদি না-ই খেলতে পারেন, ৩৬ বছর বয়সী ওয়ার্নার নিজেই কি টেস্ট ক্যারিয়ার আরও লম্বা করতে চাইবেন?

আরও পড়ুন