জাম্পার পর মার্শ-ইংলিসে অস্ট্রেলিয়ার স্বস্তির জয়
দুই দলই এসেছিল তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের খোঁজে। লক্ষ্ণৌয়ে আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কা ইনিংসের লম্বা একটা সময় ছিল দারুণ অবস্থানে। কিন্তু নাটকীয় ধসে ৮৪ রান তুলতে ১০ উইকেট হারিয়ে ২০৯ রানেই থামা শ্রীলঙ্কা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। রান তাড়ায় দিলশান মাদুশঙ্কার এক ওভারে ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথকে হারিয়ে চাপে পড়লেও মিচেল মার্শ, জশ ইংলিসের ফিফটিতে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে স্বস্তির এ জয়ে পয়েন্ট তালিকার তলানি থেকে উঠে এসেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপে এ নিয়ে টান সপ্তম ম্যাচে হারাল তারা।
মাঝের ওভারে ধস-এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ের সময় দলগুলোর জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠতে শুরু করেছে এটি। ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য ধসের পর আফগানিস্তানও পথ হারাতে শুরু করেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (যদিও শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম অঘটনের জন্ম দিয়েছে আফগানরা)। এবার সেটিরই শিকার শ্রীলঙ্কা। ২২ তম ওভারে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ব্রেকথ্রু এনে দেওয়ার পর আরেক পেসার মিচেল স্টার্ক ও লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাদের কাছে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে লঙ্কানরা।
ইনিংসের শুরুর দিকে লম্বা একটা সময় কিছুই পক্ষে যায়নি অস্ট্রেলিয়ার। ক্যাচ পড়েছে, রিভিউ ব্যর্থ হয়েছে, আবার রিভিউ নিয়ে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। এত কিছুর মাঝে পাতুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শ্রীলঙ্কাকে এনে দেয় শক্ত এক ভিত। প্রথম ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কা তোলে ৫১ রান, ১৮ তম ওভারে পেরিয়ে যায় ১০০। দুই ওপেনারই পান ফিফটি-৫৭ বলে পেরেরা, ৫৮ বলে নিশাঙ্কা। ২১.৩ ওভারে ১২৫/০, শ্রীলঙ্কা হতাশ করে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে।
৬৭ বলে ৬১ রান করা নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে সে জুটি ভাঙেন কামিন্স, মিডউইকেট থেকে ছুটে গিয়ে যেটি দারুণভাবে নেন ডেভিড ওয়ার্নার। নিশাঙ্কা ফিরলেও শ্রীলঙ্কা অবশ্য গতি কমানোর ইঙ্গিত দেয়নি, ওই উইকেটের পরের ৪ ওভারে আসে ২৯ রান। কিন্তু কামিন্সের সিমে পড়ে ভেতরের দিকে ঢোকা দারুণ এক বলে বোল্ড হন ৮২ বলে ১২ চারে ৭৮ রান করা পেরেরা, শ্রীলঙ্কার পথ হারানোর শুরুটাও বলা যায় সেখান থেকেই।
অস্ট্রেলিয়া এরপর আঘাত করতে থাকে নিয়মিত, ক্রিজে কোনো ব্যাটসম্যানই থিতু হতে পারেননি সেভাবে। মিডল অর্ডারে কোনো জুটি দাঁড়াতেই পারেনি। অবশ্য এতে অস্ট্রেলিয়ানদের যেমন কৃতিত্ব আছে, শ্রীলঙ্কানদের পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ের দায়ও কম নয়। আগের দুই ম্যাচে ১৯৮ রান করা কুশল মেন্ডিস অ্যাডাম জাম্পার বলে ক্যাচ তোলেন ওয়াইড লং অনে, আবার ভালো একটি ক্যাচ নেন ওয়ার্নার। সাদিরা সামারাবিক্রমা হন এলবিডব্লু। বৃষ্টিতে এরপর ২৫ মিনিটের মতো বন্ধ ছিল খেলা, কিন্তু এরপরও থামেনি শ্রীলঙ্কার উইকেট পড়া। একদিকে চারিত আসালাঙ্কা টিকে ছিলেন, কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দিতে পারেননি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, দুনিত ভেল্লালাগেরা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আসালঙ্কা আউট হয়েছেন ২৫ রান করে। ওপেনারদের পর একমাত্র তিনিই ছুঁয়েছেন দুই অঙ্ক।
এমন সম্বল নিয়ে দ্রুত উইকেট দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার, চতুর্থ ওভারেই জোড়া আঘাত করেন মাদুশঙ্কা। এরপর মারনাস লাবুশেনকেও আম্পায়ার কট-বিহাইন্ড দিয়েছিলেন, কিন্তু রিভিউ নিয়ে তিনি বেঁচে যান। তবে এমন রান তাড়ায় একটি বড় জুটিই অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেত। মার্শের সঙ্গে ৫৬ রানের পর ইংলিসের সঙ্গে লাবুশেনের ৭৭ রানের জুটি নিশ্চিত করে, অস্ট্রেলিয়া পা হড়কাচ্ছে না।
৫১ বলে ৫২ রানের ইনিংসে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন আগের দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৭ রান করা মার্শ। অন্যদিকে অ্যালেক্স ক্যারির জায়গায় এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ রান করেই থামা ইংলিসও পেয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি-৫৯ বলে ৫৮ রান তাঁর। তাঁদের পর ৬০ বলে ৪০ রান করা লাবুশেন ফিরলেও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ২১ বলে ৩১ ও মার্কাস স্টয়নিসের ১০ বলে ২০ রানের ক্যামিও ইনিংস ৮৮ বল বাকি থাকতেই অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করে।