ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম টেস্ট জিতে সিরিজ ড্র করল ভারত
এ ম্যাচের আগে ডিন এলগার বলেছিলেন, তাঁর কাছে টেস্ট ক্রিকেটই বিশ্বকাপের মতো। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কখনোই সেভাবে না খেলা এলগারের সেটি মনে হতেই পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়ী অধিনায়ক অবশ্য ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে ‘বর্ধিত’ এক ওয়ানডের স্বাদই পেলেন। কেপটাউনে ৬৪২ বলের (১০৭ ওভার) মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট, যাতে ৭ উইকেটে জিতে সিরিজ ড্র করেছে ভারত। বলের হিসাবে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম টেস্ট এখন এটিই (যেগুলোতে ফল এসেছে)। তাতে ভেঙেছে ৯২ বছরের রেকর্ড—১৯৩২ সালে মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছিল ইনিংস ও ৭২ রানে, সে টেস্ট স্থায়ী হয়েছিল ৬৫৬ বল।
গতকাল ২৩ উইকেটের দিনের পর আজ দ্বিতীয় দিনও ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা সহজ ছিল না নিউল্যান্ডসের উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য কোনো ব্যাটসম্যান যেখানে ১২ রানের বেশিই করতে পারেননি, এইডেন মার্করাম সেখানে খেলেছেন ১০৩ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তবে মার্করামের ওই শতকের পরও দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭৬ রানে থেমে ভারতকে লক্ষ্য দিতে পারে ৭৯ রানের। সেটি সফরকারীরা পেরিয়ে যায় ১২ ওভারেই।
এ পিচে ১০০-এর ওপর স্কোর নিয়েও হয়তো লড়াই করতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা, তবে ৭৯ রানের লক্ষ্যে যশস্বী জয়সোয়ালের ৬ চারে ২৩ বলে ২৮ রানের ইনিংসই বড় ক্ষতি করে তাদের। নান্দ্রে বার্গারের বলে জয়সোয়াল আউট হওয়ার সময় ভারত তুলে ফেলে ৪৪ রান। শুবমান গিলও ইতিবাচক ছিলেন রাবাদার নিচু হওয়া বলে বোল্ড হওয়ার আগে। লেংথ থেকে রাবাদার বলটি হাঁটুর বেশ নিচেই থেকেছে—নিউল্যান্ডসের পিচের অসম বাউন্সের যেটি আরেকটি প্রমাণ।
কোহলির সঙ্গে রাবাদার দ্বৈরথে এরপর নজর ছিল সবার। রাবাদা যদিও রোহিতের উইকেট প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুললেও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন টনি ডি জর্জি। কোহলি অবশ্য থামেন মার্কো ইয়ানসেনের লেগ সাইডের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে, জয় থেকে ৪ রান দূরে দাঁড়িয়ে। শ্রেয়াস আইয়ার নেমে চার মেরে নিশ্চিত করেন ভারতের জয়।
এর আগে ৩৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল সকালে মোহাম্মদ সিরাজের তোপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবার পড়ে যশপ্রীত বুমরার সামনে। ডেভিড বেডিংহাম, কাইল ভেরেইনা, মার্কো ইয়ানসেনের পর কেশব মহারাজও বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মার্করামকে। সপ্তম উইকেট পড়ার সময়ও দক্ষিণ আফ্রিকার লিড ছিল মাত্র ১৩ রান।
মার্করাম দায়িত্বটা তুলে নেন এরপর নিজের হাতে। কাগিসো রাবাদাকে নিয়ে ৩৮ বলেই যোগ করেন ৫১ রান, যাতে রাবাদার অবদান মাত্র ২। সকাল থেকে সিরাজকে আনেননি রোহিত, গতকালের সেরা বোলার এসে মার্করামকে ফেরাতে সময় নেননি। সিরিজে এ নিয়ে তৃতীয়বার মার্করামকে আউট করলেন সিরাজ। তাঁর হার্ড লেংথের বলে পুল করতে গিয়ে লং অফে রোহিতের হাতে ধরা পড়েন মার্করাম, সে ক্যাচ নিয়ে একটু হতাশাই প্রকাশ করেন ভারত অধিনায়ক। এতক্ষণ সিরাজকে কেন আনেননি, সেটিই হয়তো হতাশার কারণ ছিল তাঁর।
এমন ইনিংসের পর মার্করামের অবশ্য তৃপ্ত হওয়ার অনেক কারণই আছে। ক্রিকভিজের ডেটা অনুযায়ী, বল ট্র্যাকিং পদ্ধতি আসার পর মার্করামের এ শতকই সবচেয়ে ‘কঠিন’। তাদের মডেল অনুযায়ী, এ পিচে প্রতি ব্যাটসম্যানের প্রত্যাশিত গড় স্কোর ১৬.৬ রান, মার্করাম সেখানে ১০৩ বলে করেন ১০৬ রান। সে ইনিংসে ১৭টি চারের সঙ্গে ছিল দুটি ছক্কা। ভাগ্যের সহায়তাও অবশ্য পান তিনি, ৭৪ রানে দাঁড়িয়ে বুমরার বলে রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়েও বাঁচেন তিনি। মার্করামের পর দক্ষিণ আফ্রিকাও টেকেনি বেশিক্ষণ। ১৪ রানের মধ্যে শেষ ৩ উইকেট হারায় তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫৫ ও ৩৬.৫ ওভারে ১৭৬ (মার্করাম ১০৬, এলগার ১২; বুমরা ৬/৬১, মুকেশ ২/৫৬) ভারত: ১৫৩ ও ১২ ওভারে ৮০/৩ (জয়সোয়াল ২৮, রোহিত ১৬*; ইয়ানসেন ১/১৫, বার্গার ১/২৯)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী