নাহিদ রানার বোলিং দেখে যা বলেছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি
আগের দিন রাতে ইসলামাবাদ থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। কাল সকালের ফ্লাইটেই রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজের বাড়িতে পৌঁছেছেন নাহিদ রানা। হাতে সময় কম। দুই দিন বাড়িতে কাটিয়ে আবার ৮ সেপ্টেম্বর থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারত সফরের জন্য প্রস্তুতি ক্যাম্পে যোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান জয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে দুই টেস্টেই নাহিদ রানার গতির ঝড় তোলা। দুই দল মিলিয়েই সবচেয়ে গতিময় বোলার ছিলেন বাংলাদেশের ফাস্ট বোলার। যেটি ক্রিকেট–বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে।
২১ বছর বয়সী এই তরুণ অবশ্য কী ঘটিয়ে ফেলেছেন, তা যেন উপলব্ধিই করতে পারছেন না! এসব শোনার পর কাল মুঠোফোনের ওপাশ থেকে তাঁর হাসিই তা বলে দিচ্ছিল, ‘আমার এমন মনে হচ্ছে না। সব কিছু থেকে একটু দূরে আছি এখনো।’
বাংলাদেশ দল দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলতে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের বিমান ধরবে। পাকিস্তান সফরকে পেছনে ফেলে নাহিদ রানা এখনই তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন, ‘সামনে খেলা আছে। বড় সিরিজ আছে। আমি রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করছি।’
ভারত সিরিজের আবহে ঢুকে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের মাটিতে ইতিহাস গড়া টেস্ট সিরিজ জয়ের রোমাঞ্চটাও উপভোগ করতে চান নাহিদ। দুই টেস্টে নাহিদের শিকার ৬ উইকেট। এর মধ্যে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানে ৪ উইকেট তাঁর ক্যারিয়ার–সেরা বোলিং। তবে সিরিজ জুড়ে নাহিদের পারফরম্যান্সকে শুধু সংখ্যায় প্রকাশ করা যাবে না। বাংলাদেশের বোলিংয়ে এক্স–ফ্যাক্টর যোগ করেছে তাঁর গতি। যখন বোলিংয়ে এসেছেন, দর্শকদের একটা চোখ থেকেছে স্পিডোমিটারে।
নাহিদ গতি দিয়ে এমন আলোড়নই তুলতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি দলের জয়ে অবদান রাখতে পারার সন্তুষ্টি তো আছেই, ‘ব্যক্তিগত লক্ষ্য ছিল, যদি একাদশে সুযোগ পাই, তাহলে যেভাবেই হোক, দলের জয়ে যেন কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারি। সেটা করতে পেরেছি। সেদিক থেকে সন্তুষ্টি আছে।’
পাকিস্তানের পেসারদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। প্রশংসা পেয়েছেন তাঁদেরও, ‘ওদের খেলোয়াড় সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। শাহিন শাহ আফ্রিদি বলছিল, মাশাল্লাহ, তোমার পেস অনেক ভালো। নিজেকে মেনটেইন কর।’
বাংলাদেশ দলও নাহিদের কাছে ওই গতিটাই চায়। ছোট স্পেলে যত জোরে সম্ভব বোলিং করবেন। কাঁপন তুলবেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের শিরদাঁড়ায়। পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দলের একই পরিকল্পনা ছিল। বাবর ক্রিজে এলেই নাহিদের হাতে বল তুলে দিয়েছেন অধিনায়ক। নাহিদ রানাও প্রতিদান দিয়েছেন সেই আস্থার। ৪ ইনিংসে ২ বার ফিরিয়ে দিয়েছেন বাবরকে।
প্রতিপক্ষ দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য অবশ্য বিশেষ কোনো কৌশল কাজে লাগাননি। তাঁর মুখেই শুনুন, ‘বাবর তো বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ওই মানের একজনকে বোলিং করলে নিজের সামর্থ্যটা বোঝা যায়। আমি বেশি কিছু চিন্তা করিনি। একটা চিন্তা করেছি, আমি ওকে একেবারে সামনেও দেব না, একেবারে পেছনেও দেব না। মানে হাফ ভলিও না, শর্টও না। মানে একদম সহজ পরিকল্পনা ছিল। আমাকে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে, এসব ভাবিনি। আমাকে শান্ত ভাই বলেছে, তুই তোর মন মতো বল কর। বেশি চিন্তা করতে হবে না।’
অধিনায়ক নাজমুলের সঙ্গে নাহিদের বোঝাপড়াটা খুব ভালো। দুজনই রাজশাহীর। নাহিদের প্রথম শ্রেণির অভিষেকে জাতীয় লিগে রাজশাহী বিভাগ দলের অধিনায়কও ছিলেন নাজমুল। নাহিদই তা মনে করিয়ে দিলেন, ‘ওনার সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা অনেক ভালো। আমাকে শুরু থেকে দেখেছেন। বোলিংয়ের ক্ষেত্রে আমার আর তাঁর ভাবনা প্রায় একই।’
টেস্ট ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। গত মার্চে সিলেটে টেস্ট অভিষেকের পর পাকিস্তানেই আবার নেমেছেন মাঠে। বিখ্যাত অনেক ফাস্ট বোলারের জন্মভূমিতে যে প্রতিশ্রুতির ছাপ রেখেছেন, তা পূরণ করার পূর্বশর্ত বোধ হয় একটাই। শাহিন শাহ আফ্রিদির ভাষায়, ’নিজেকে মেনটেইন করা’।