চব্বিশেই চার ভাগের এক ভাগ তাসকিনের
তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ারকে পরিষ্কার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ২০১৮ সালের আগে ও পরে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক। এর চার বছর পর, ২০১৮ সালটাই সম্ভবত তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বছর।
এরপর তাসকিনের ক্যারিয়ারে কেটে গেছে আরও চারটি বছর—২০২১, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪। এই চার বছরই এই পেসারের পারফরম্যান্স কমবেশি ভালো বলতে হবে। কোন বছর বেশি ভালো, কোন বছর কম—এ নিয়ে তর্ক হতেই পারে। তবে একটা বিষয় তর্কাতীত। ২০২৪ সালেই পরিপূর্ণ মহিমায় দেখা দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। সংখ্যায় প্রমাণ চান? একটু অবিশ্বাস্যই শোনাতে পারে, তাসকিন ক্যারিয়ারের এক-চতুর্থাংশ উইকেটই পেয়েছেন এই ২০২৪ সালে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাসকিন উইকেট নিয়েছেন ২৪০টি, এর ৬৩টিই এ বছর। ২০২৪ সালেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে সবচেয়ে বেশি ৩০টি ম্যাচ খেলেছেন। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেললে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেতেই পারেন, ভাবছেন তো? ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তিন বছরে এবারের চেয়ে মাত্র ৩টি ম্যাচই কম খেলেছিলেন। তবে ২৭টি করে ম্যাচ খেলেও উইকেট পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ ৪৬টি (বাকি দুই বছর ৩৩ ও ৩৪)।
তা এ বছর কোন সংস্করণে সবচেয়ে ভালো করেছেন? আলাদা করা যাচ্ছে না। টেস্ট বেশি খেলেননি, ৪টি। তাতেই ১৯ উইকেট। ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ উইকেট পেয়েছেন সদ্য সমাপ্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। টেস্টে সিরিজ সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন এবারই প্রথম। ওয়ানডেতে ৭ ম্যাচে উইকেট সাত দুগুণে ১৪।
এ বছর তাসকিনের নেওয়া উইকেটের প্রায় অর্ধেকই টি-টোয়েন্টিতে। ১৯ ম্যাচে নিয়েছেন ৩০ উইকেট, যেখানে গত দুই বছর মিলিয়েই টি-টোয়েন্টিতে তাঁর উইকেট ছিল ২৯টি। এ বছর যে ১৯টি টি–টোয়েন্টি খেলেছেন, এর মাত্র দুটিতেই কোনো উইকেট পাননি।
সবচেয়ে ভালোর কথা বলা হলো, এবার এর উল্টো পিঠ। ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করে ২০২৪–কেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন তাসকিন। তবে আপাতত চলে যাওয়া বছরটাই তাঁর সবচেয়ে সুখস্মৃতি। আর বিস্মরণযোগ্য এর ছয় বছর আগের ২০১৮। সে বছর উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ২টি। বাদ পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। এর জের চলেছে আরও বেশ কিছুদিন। ২০১৯ বিশ্বকাপে সুযোগ না পেয়ে কান্নার কথাটা হয়তো মনেই আছে আপনার। হতাশার সেই সাগরে সাঁতার কেটে তাসকিনের কূলে ফেরা ২০২১ সালে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা করতে হলে বাংলাদেশ মান ও আন্তর্জাতিক মানের তফাতটাও প্রসঙ্গক্রমে আনতে হয়। বলে রাখা ভালো, তাসকিনের চলতি বছরের পারফরম্যান্স বিশ্বমানেরই। পরিসংখ্যানও সেই সাক্ষ্য দেবে। চলতি বছরে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় এখন পর্যন্ত শুধু একজনই তাসকিনের ওপরে আছেন। তবে তাঁর সঙ্গে আর কারও তুলনা না করাই ভালো। কারণ, সেই বোলারের নাম যশপ্রীত বুমরা।
সর্বোচ্চ ৭৭ উইকেট নেওয়া বুমরা যদি সবচেয়ে বেশি উইকেট না–ও পেতেন, তারপরও বছর শেষে তিনিই সেরা কি না, তা নিয়ে আলোচনা হতো। বুমরার পরই যে তাসকিনের নাম, এটাই আসলে তাসকিনের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের প্রমাণ। তাসকিনের সমান ৬৩ উইকেট আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি জোসেফের। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা সবাই তাসকিনের পেছনে। চলতি বছরে বাংলাদেশের হয়ে তাসকিনের পর বেশি উইকেট নিয়েছেন স্পিনার রিশাদ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের উইকেট ৪০টি করে।
আরেকটি তালিকায়ও তাসকিন দ্বিতীয়। এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি সাকিব আল হাসানের। ২০১০ সালে এই বাঁহাতি স্পিনার ৭৭টি উইকেট নিয়েছিলেন। সাকিব নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন না, এটা বলায় কোনো ঝুঁকি নেই। তাসকিন তাই এই রেকর্ডটাকে পাখির চোখ করতেই পারেন। বয়স তো মাত্র ২৯।