বাংলাদেশের অনুশীলন দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন নওশের
তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের একজন সদস্য। তবে ১৭ বছর যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশেরও। তিনি গোলাম নওশের, বাংলাদেশের ক্রিকেটে যিনি প্রিন্স নামেই বেশি পরিচিত।
বাংলাদেশ দলের সাবেক এই পেস বোলার খেলোয়াড়ি জীবন শেষে বিসিবির নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে সেই চাকরি ছেড়ে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। হিউস্টনে থিতু হয়ে একসময় জড়িয়ে পড়েন সেখানকার ক্রিকেটের সঙ্গেও। যুক্তরাষ্ট্রে ‘কোচ গোলাম’ নামেই বেশি পরিচিত প্রিন্স তাঁর শহর হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে থেকেই দেখেছেন বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র তিন টি–টোয়েন্টির সিরিজ, যেটি তাঁকে দুই রকম অনুভূতিই দিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের একজন হিসেবে গোলাম নওশের অবশ্যই আনন্দিত যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ জেতায়। একই সঙ্গে আছে দীর্ঘশ্বাসও। ‘বাংলাদেশ হারলে তো খারাপ লাগেই। আমি ধারণা করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্র দল হয়তো একটা অঘটন ঘটাবে, একটা ম্যাচ তারা জিতবে। কিন্তু সিরিজ জিতে যাবে, এতটা ভাবিনি’,—হিউস্টন থেকে কাল মুঠোফোনে বলছিলেন তিনি।
তাসকিন আহমেদকে ডাক্তার দেখানো নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা তাঁর দেখা হয়নি। তবে দেখেছেন প্রথম দুই ম্যাচের হার, মাঠে ছিলেন বাংলাদেশের অনুশীলনের দিনগুলোতেও। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই গোলাম নওশের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং–ব্যর্থতার একটা গুরুতর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন।
প্রেইরি ভিউ স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠের উইকেটে যে বল একটু থেমে আসে, সেই ধারণা বাংলাদেশ দলের হয়ে গিয়েছিল ১৯ মে, হিউস্টনে গিয়ে প্রথম দিনের অনুশীলনেই। গোলাম নওশের বলেন, ‘আমি দেখলাম, ওদের (বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের) টাইমিং ভালো হচ্ছে না। বল ক্লিয়ার করতে পারছিল না। নতুন মাঠ, নতুন উইকেট এটা হতেই পারে। কিন্তু এরপর তো তারা সাবধান হবে!’
হিউস্টনের উইকেটে অনভ্যস্ততার কারণে প্রথম দিনের অনুশীলনে ব্যাটিং ভালো না–ই হতে পারে। ২১ মে সিরিজ শুরু, তার আগে আরেকটা দিন তো হবে অনুশীলন। গোলাম নওশের ভেবেছিলেন, দ্বিতীয় দিনের অনুশীলনে হয়তো উইকেটটাকে আরেকটু বুঝতে পারবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু পরদিন ২০ মে মাঠে গিয়ে বিস্মিতই নাকি হয়েছেন তিনি, ‘আগের দিন কোচ, খেলোয়াড়েরা যখন দেখলেন বল এখানে থেমে আসছে, আমি ভেবেছিলাম পরদিন আরও বেশি অনুশীলন করে তারা উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করবে। অথচ পরদিন মাঠে গিয়ে দেখি, অনেক ক্রিকেটারই অনুশীলনে আসেনি, কোচকেও চোখে পড়েনি আমার। সেদিন নাকি অনুশীলনটা ঐচ্ছিক করে দিয়েছিলেন কোচ।’
নিজের বিস্ময় গোপন না করে গোলাম নওশের বলেন, ‘আমি অবাকই হয়েছি তাতে। বাংলাদেশ দল এখানে আগে এসেছে তো অনুশীলন করে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের আয়োজনও সে জন্য। অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সিরিজ শুরুর আগের দিন দলের সবাই অনুশীলন করল না! যার প্রভাব আমি ম্যাচেও দেখেছি। শেষ ম্যাচের আগেও ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রস্তুতির উদ্দেশ্যেই যেহেতু এখানে আগে আসা, সেই সুযোগ ক্রিকেটারদের পুরোপুরি কাজে লাগানো উচিত ছিল। কোচের উচিত ছিল সেভাবেই সবকিছু ঠিক করা।’
গোলাম নওশেরের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের হতাশা বাংলাদেশ বিশ্বকাপে কাটিয়ে উঠবে। তবে সে জন্য কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখেন তিনি, ‘আমি ভুলও হতে পারি, কাউকে দোষও দিচ্ছি না। তবে এই কদিনে দলটাকে আমার একটু বিচ্ছিন্নই মনে হয়েছে। বিশেষ করে কোচ যেন একটু আলাদা...। তাঁর বোধ হয় আরেকটু সক্রিয় হওয়া উচিত।’
বিশ্বকাপের আগে আগামীকাল ডালাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচও ডালাসে। এই দুই ম্যাচ নিয়ে আশার কথা শোনালেন গোলাম নওশের, ‘ডালাসের উইকেটে বল অনেক ভালো ব্যাটে আসবে। আশা করি, হিউস্টনের মতো সমস্যা ওখানে হবে না।’ সঙ্গে অবশ্য আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের খারাপ খেলা নতুন কিছু নয়। তবে এই উপলব্ধিটা কোচ–ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেন সিরিজ হারল, আগে সেটার উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।’