সাকিব-তামিমদের প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যেতে চিন্তায়-মানসিকতায় উন্নতি চান সালাউদ্দিন
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের প্রজন্ম একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু সেখান থেকে আরও ওপরে তুলতে না পারা মানে দেশের ক্রিকেটে এগোয়নি বলে মনে করেন জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ শুরু করতে যাওয়া এই কোচ বলেছেন, বাংলাদেশ দলের উন্নতির জন্য দরকার চিন্তা-ভাবনা ও মানসিকতায় পরিবর্তন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করে ৫ নভেম্বর। পরদিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাজও শুরু করেন তিনি। তবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেননি। শুক্রবার সকালে বিসিবির অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে (ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব) প্রচারিত একটি ভিডিওতে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে আসা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন সালাউদ্দিন।
সালাউদ্দিন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আগেও কাজ করেছেন। ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ ও সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করে আসা সালাউদিন সে সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, আগেও যখন পাঁচ বছর কাজ করেছি, তখন একটা প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছি। সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, মাশরাফিরা ছিল। ওই প্রজন্ম দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে। একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এখন পরবর্তী প্রজন্মকেও যদি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করতে পারি, সেটা দেশের জন্য ভালো হবে, সেই খেলোয়াড়ের জন্যও ভালো হবে।
জাতীয় দলের পাশাপাশি ২০১০-১১ সময়ে বিসিবি একাডেমির বিশেষজ্ঞ কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন সালাউদ্দিন। নিয়মিত কাজ করেছেন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। যে কারণে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটারদেরও বেশ ভালোভাবেই চেনা সালাউদ্দিনের।
তাঁর মতে এ সময়ের ক্রিকেটারদের পক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাকিব-তামিম প্রজন্ম থেকে এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে যথেষ্টই, ‘আমরা যারা বলি সাকিব, তামিম, মুশফিকেরা একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেছে, ওটা যদি না ভাঙতে পারি, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট এগোয়নি। (আমাদের কাজ) পরবর্তী প্রজন্ম যেন তাদের চেয়ে ভালো খেলোয়াড় হতে পারে, বড় হতে পারে। সেটা অসম্ভবও নয়। এখন খেলোয়াড়েরা মেন্টালি, ফিজিক্যালি ও আর্থিক দিক থেকে অনেক স্বাবলম্বী। যেটা হয়তো আগে ছিল না। এখন ভালো করার সুযোগ বেশি।’
এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের বড় লক্ষ্য নির্ধারণ এবং চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন আনার কাজটি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন সালাউদ্দিন। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হওয়া এই কোচ জাতীয় দলের কাছাকাছি থাকা খেলোয়াড়দের উদাহরণ টেনে বলেন, এইচপি বা অনূর্ধ্ব-১৯-এর খেলোয়াড়দের লক্ষ্য জিজ্ঞেস করলে বলবে জাতীয় দলে খেলতে চাই। স্বপ্নটা কিন্তু ওখানেই থেমে গেল। জাতীয় দলে খেললে এরপর কীভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে সেটা তাঁরা জানে না। যারা এতদিন খেলছি, তাদের আসলে কী ধরনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, মেন্টালিটি হওয়া উচিত, কীভাবে আরও বড় খেলোয়াড় হওয়ার জন্য নিজেকে মোটিভেট করা উচিত, এই ছোট ছোট কাজগুলো করে। বড় কাজ তা নয়। এই ছোট কাজগুলো যদি করা যায়, বিশেষ করে ড্রেসিংরুমে এবং ড্রেসিংরুমের বাইরে কীভাবে চিন্তা করবে, সেই চিন্তার জায়গাটা যদি আরও পরিষ্কার করে ধারণা দেওয়া যায়, তাদের আরও ভালো ভবিষ্যৎ সামনে আছে।
এক যুগের বেশি সময় পর জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে আসার পেছনে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বড় ভূমিকা ছিল বলে জানান সালাউদ্দিন।
পাশাপাশি দেশি কোচদের নিয়ে নিজের একটি লক্ষ্যও ছিল তাঁর, ‘অনেক দিন ধরেই শুনছি বোর্ড দেশি কোচদের একটা প্ল্যাটফর্ম করে দেবে। সেই জায়গায় আমি যদি পথটা দেখাতে পারি, সেটা যত দিনের জন্যই হোক, আমার দেশি কোচরাও হয়তো ভালো করবে। পরবর্তী সময়ে যে সব দেশি কোচ আসবে বোর্ডের বিশ্বাস বাড়বে, মানুষের বিশ্বাস বাড়বে, জনগণের বিশ্বাস বাড়বে। সেই সঙ্গে কোচের নিজেরও বিশ্বাস বাড়বে যে আমরাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে পারি। আমার মনে হয় এই বিশ্বাস টা কারও না কারও নেওয়া উচিত ছিল। সেই বিশ্বাসটা যদি আমি রাখতে পারি, পরের কোচদের জন্য বড় পথ খোলা হয়ে যাবে। একজন কোচ হিসেবে কোচ-সমাজে পথ দেখানোর একটা বড় দায়িত্ব আমার পড়ে গেছে। সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’
চলতি মাসে শুরু হতে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি করে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ দল। সফর শুরু হবে ২২ নভেম্বর অ্যান্টিগা টেস্ট দিয়ে।