শেফালি-মান্ধানা দেখালেন ভারতের ব্যাটিং-শক্তি, সিরিজ হারল বাংলাদেশ
রিদুই উদ্বোধনী ব্যাটার শেফালি বর্মার ৩৮ বলে ৫১ ও স্মৃতি মান্ধানার ৪২ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে সিলেটে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দেওয়া ১১৮ রানের লক্ষ্য ৭ উইকেট ও ৯ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে ভারত। শেষ দিকে ভারতকে একটু চেপে ধরেছিলেন বাংলাদেশ বোলাররা, কিন্তু সেটি পার্থক্য গড়তে পারেনি। এ জয়ে ২ ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নিল সফরকারীরা।
মারুফা আক্তারের করা প্রথম ওভারের শেষ বলে চার মেরে শুরু করেছিলেন স্মৃতি, দুই ওপেনার থামেননি শিগগির। পাওয়ার প্লেতেই ওঠে ৫৯ রান, এরপরও গতি কমেনি। ৩৬ বলে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি পূর্ণ করেন গত ম্যাচে কোনো রান না করেই আউট হওয়া শেফালি। ১০ উইকেটের জয়ের পথেই এগোচ্ছিল ভারত, ১৩তম ওভারে ডান দিকে ডাইভ দিয়ে শেফালির ফিরতি ক্যাচ নিয়ে সেটি হতে দেননি রিতু মনি। ৯১ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
ম্যাচ শেষ করে না আসতে পারলেও একটা রেকর্ড হয়ে গেছে মান্ধানা-শেফালির। অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি ও বেথ মুনির পর দ্বিতীয় ওপেনিং জুটি হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তাঁরা।
মান্ধানা এরপর হারিয়েছেন ফিফটির সুযোগ, নাহিদার লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ফাহিমার হাতে ক্যাচ দেন তিনি ৩ রান দূরে থাকতেই। ফাহিমা সে ক্যাচ নেন দুবারের চেষ্টায়। এর আগে একবার রানআউটের হাত থেকে বেঁচেছিলেন মান্ধানা।
আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় দয়ালান হেমলতার উইকেট এরপর পেয়েছে বাংলাদেশ, কিন্তু হারমানপ্রীত কৌর ছিলেন শেষ পর্যন্ত। মাঝে ৩৩ বল কোনো বাউন্ডারি আসেনি, সে খরা কাটানোর সঙ্গে ভারতের জয়ও নিশ্চিত করেন রিচা ঘোষ।
এর আগে বাংলাদেশের ইনিংস ছিল কার্যত দুই ভাগের-১৪তম ওভারে ৮৫/২ থেকে ২০ ওভার শেষে তারা পরিণত হয় ৮ উইকেটে ১১৭ রানে। দিলারা আক্তারের ২৭ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে শুরুটা দারুণ হলেও পরের দিকের ব্যাটাররা সেটি কাজে লাগাতে পারেননি, তিনজন হয়েছেন রানআউট।
আগের দুই ম্যাচে টসে জেতা দল ব্যাটিং নিলেও এবার মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশনে সে ধারা ভাঙেন ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। গত ম্যাচের মতো এবারও দিলারার শট খেলার মনোভাব ফুটে ওঠে শুরু থেকেই। ভাগ্যের সহায়তায় ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন, পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৪৪ রান।
দিলারাকে সঙ্গ দেওয়ার কাজটিই করছিলেন মুর্শিদা, সপ্তম ওভারে তাঁর রানআউটে ভাঙে ৪৬ রানের ওপেনিং জুটি। গত ২৮ ইনিংসের মধ্যে প্রথম উইকেটে যেটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ১৬ বলে ৯ রান করা মুর্শিদা টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ফ্রি হিটে রানআউট হন। রাধা যাদবের বলে কাভারে ক্যাচ তোলার পথে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়েছিলেন, ফেরার কথা যেন শুরুতে মনেই ছিল না তাঁর।
অন্যদিকে অবশ্য ২৭ থেকে ৩১ রানের মধ্যে তিন বার বাঁচেন দিলারা-দুবার পড়ে ক্যাচ, একবার বাঁচেন প্রায় নিশ্চিত রানআউট থেকে। শেষ পর্যন্ত রেনুকার লেগ সাইডের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে থামেন, তার আগে গড়েন গত জুলাইয়ের পর থেকে মুর্শিদা ছাড়া অন্য কোনো ওপেনারের সর্বোচ্চ স্কোর।
নিগার সুলতানা ও সোবহানা মোস্তারি জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন এরপর, কিন্তু সে সময় ভারতের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ঠিক স্বস্তিতে ছিলেন না তাঁরা। ১৪তম ওভারে পরপর ২ বলে সোবহানা ও ফাহিমার উইকেট হারিয়ে সে চাপ আরও বাড়ে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম বলেই এলবিডব্লু হয়ে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ চারবার ‘গোল্ডেন ডাক’-এর রেকর্ড গড়েন ফাহিমা খাতুন।
১৮তম ওভারে ৩৮ বলের বাউন্ডারি-খরা কাটিয়ে স্কোরটা ১৩০-এর ওপরে নিয়ে যাওয়ার আশা দিয়েছিলেন নিগার, কিন্তু আম্পায়ারের বিতর্কিত এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তে ফিরতে হয় তাঁকে। ক্রিজের বাইরে এসে খেলেছিলেন, বল লেগেছিল তাঁর প্যাডের বেশ ওপরে। বাংলাদেশ এরপর যেতে পারেনি বেশি দূর।