সিরিজ জয়ের পরও সেই পুরোনো প্রশ্ন
সাকিব আল হাসান আবার মাঠে নামলেন। খেলা শেষ হওয়ার পর মাঝে দুই দলের খেলোয়াড়দের হাত মেলানো, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আর মাঠকর্মীদের নেট দিয়ে উইকেট ঘিরতে যা কিছুটা সময় গেল। এরপর আর দেরি না করে সাকিব উইকেটে চলে গেলেন ব্যাট হাতে। প্যাড পরাই ছিলেন, সেই বেশেই দাঁড়ালেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১-এ জেতা সিরিজের ট্রফি নিয়ে গ্রুপ ছবি তুলতে।
সেই ছোট্ট উদ্যাপনের পরই শুরু সাকিবের মাঝ-উইকেট ব্যাটিং অনুশীলন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন লিটন দাসও। সিরিজ জয়ের পরপরই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ওই দৃশ্য যেন বলে দিচ্ছিল ওই কথাটাই—ব্যাটিংটা ঠিকঠাকমতো হচ্ছে না। সিরিজের প্রথম চার ম্যাচে তো তবু ও রকম ব্যাটিং করেও জিতে গেছে বাংলাদেশ। কাল আর সেটি হয়নি। বাংলাদেশ দলের ৬ উইকেটে করা ১৫৭ রান ৯ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখেই সান্ত্বনার জয় তুলে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
সিরিজজুড়েই বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ছিল অধারাবাহিক। চতুর্থ ম্যাচটি বাদ দিলে একবারও উদ্বোধনী জুটির রান ৫০ ছাড়ায়নি। আবার যেদিন টপ অর্ডার থেকে রান এসেছে, সেদিন মিডল অর্ডার পারেনি। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন—দুজনের সিরিজই কেটেছে রানের জন্য সংগ্রাম করে। তার মধ্যেই সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান সিরিজ-সর্বোচ্চ ১৬০ রান করা তানজিদ হাসান। অথচ এই সিরিজে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ দলের তৃতীয় ওপেনার! মিডল অর্ডারে খেলা তাওহিদ হৃদয় করেছেন ১৪০ রান। এই দুজন বাদে সব ম্যাচ মিলিয়ে কেউই এক শর বেশি রান করতে পারেননি।
ব্যাটিংয়ের এই দৈন্যদশা নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। যদিও অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কথায় এ নিয়ে চিন্তার ছাপ নেই। কাল ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক বলেছেন, ‘টপ অর্ডারে যদি আরেকটু ভালো ব্যাটিং করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় দলের জন্য ভালো হবে। মোমেন্টামটা দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে উইকেটে খেললাম, এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে সামনের জন্য চিন্তা করাই ভালো হবে। যদি আমরা ভালো শুরু এনে দিতে পারি, তাহলে দল আরেকটু এগিয়ে থাকবে।’
পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট সন্তোষজনক নয়। চট্টগ্রামের উইকেটকে ধরা হয় ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ। কিন্তু সেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং-স্বর্গেও সর্বোচ্চ দলীয় রান উঠেছে ১৬৫। নাজমুল অবশ্য এই সিরিজের উইকেটের সমালোচনাই করেছেন। চট্টগ্রামে নাকি নতুন বলের বিপক্ষে ব্যাটিং করা খুবই কঠিন ছিল। আর মিরপুরের উইকেট তো বরাবরই ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। স্ট্রাইক রেট নিয়ে এক প্রশ্নে নাজমুল পাল্টা দাবি তুললেন ভালো উইকেটের, ‘আমাদের দেশে স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক কথা হয়। এই জিনিসটাতে সময় দিতে হবে। আমরা যদি লম্বা সময় ধরে ভালো উইকেটে খেলা শুরু করি, ছয় মাস... এক বছর... দুই বছর, তারপর আপনি দেখবেন প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যান ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করছে।’
পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট সন্তোষজনক নয়।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে ইতিবাচক কিছু খুঁজতে হলে তাকাতে হবে স্পিনারদের দিকে। শুরু থেকেই শেখ মেহেদী হাসান ছিলেন ধারাবাহিক। ৩ ম্যাচ খেলে ৩ উইকেট নিলেও ইকনোমি ৬.১৯। তাঁকে দুই ম্যাচ বিশ্রাম দিয়ে আরেক স্পিনার তানভীর ইসলামকেও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল রিশাদ হোসেন। ৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৫ উইকেট, ইকোনমি ৮.৮। স্বাভাবিকভাবেই অধিনায়ক নাজমুল প্রশংসায় ভাসালেন স্পিনারদের, ‘স্পিনাররা খুব ভালো বল করেছে। বিশেষ করে রিশাদ, শেখ মেহেদিও ভালো করেছে। মাঝখানে ওকে ব্রেক দিয়ে তানভীরকে খেলানো হয়েছে, সেও ভালো করেছে।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রথম লক্ষ্য ছিল সিরিজটা জেতা। পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে যথেষ্ট। প্রথম তিন ম্যাচের দলে থাকা পেসার শরীফুল ইসলামকে শেষ দুই ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়। শেষ দুই ম্যাচে দলে ফেরেন আরেক বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ছুটি কাটিয়ে শেষ দুই ম্যাচ খেলেছেন সাকিবও। তবে এই সিরিজে সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তনের কথা বলতে গেলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের কথাই বলতে হবে। চার ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ফেরার সিরিজটা ভালোই রাঙিয়েছেন তিনি। মিডল অর্ডারে দারুণ ছন্দে থাকা মাহমুদউল্লাহকে মাঝে এক ম্যাচের জন্য বিশ্রাম দেওয়া হয়। বাকি চার ম্যাচের তিনটিতে ব্যাটিং করে অপরাজিত ছিলেন দুটিতে। গতকাল করেছেন ৪৪ বলে ৫৪ রান।
ছোট ছোট কিছু পরিবর্তনে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করতে চেয়েছে বাংলাদেশ দল, তার বেশির ভাগই নাকি সফলভাবে করতে পেরেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সিরিজ থেকে প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে নাজমুল বললেন সেটাই, ‘তৃপ্তির জায়গা এটা যে আমরা যে পরীক্ষাগুলো করেছিলাম, যা আমাদের দেখার দরকার ছিল… তার কাছাকাছি অন্তত যেতে পেরেছি।’
বাস্তবতা কি আসলে তাই বলে? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে চেয়েছিল বাংলাদেশ, সেগুলো কি আসলেই পাওয়া গেল? সিরিজের স্কোরলাইন ৪-১ হলেও দুই দলের পার্থক্য যে খুব বেশি ছিল না!