অ্যান্ডারসন-ব্রডের পর ইংল্যান্ডের পেস বোলিংয়ের হাল ধরবেন কারা
নটিংহামে আজ ইংল্যান্ড–ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট শুরুর সময় জিমি অ্যান্ডারসনকে ট্রেন্ট ব্রিজের প্যাভিলিয়নেই দেখা যাবে। থাকছেন স্টুয়ার্ট ব্রডও। ঘরের মাঠ ট্রেন্ট ব্রিজের সেই প্যাভিলিয়ন প্রান্তের নাম বদলে তাঁর নামেই রাখা হবে—দ্য স্টুয়ার্ট ব্রড এন্ড। এরপর ব্রড যোগ দেবেন স্কাই স্পোর্টসের ধারাভাষ্য দলে। অ্যান্ডারসন থেকে যাবেন ড্রেসিংরুমে।
গত বছর অ্যাশেজ শেষে অবসরে গেছেন ব্রড। অ্যান্ডারসন ইংল্যান্ডের জার্সি তুলে রেখেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই লর্ডস টেস্ট জয়ের পর। এখন থেকে তাঁকে দেখা যাবে ইংল্যান্ড দলের পেস বোলিং পরামর্শকের ভূমিকায়। অ্যান্ডারসন অথবা ব্রডকে ছাড়া ইংল্যান্ড প্রথমবার নিজেদের মাঠে টেস্ট খেলতে নামছে এক যুগ পর!
কাকতালীয়ভাবে দুই কিংবদন্তির অনুপস্থিতিতে ইংল্যান্ড সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। ২০১২ সালে বার্মিংহামের এজবাস্টনে হওয়া সেই টেস্টের ৩ দিন বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। অবধারিতভাবে ম্যাচের ফল হয়েছিল ড্র।
অ্যান্ডারসন–ব্রড পরবর্তী যুগে ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্টের ফল কী হবে, তা শিগগিরই জানা যাবে। তবে ৩৫৫ টেস্টে ১৩০৮টি টেস্ট উইকেট নেওয়া দুই কিংবদন্তির জায়গায় কারা ইংল্যান্ডের পেস বোলিংয়ের হাল ধরবেন; কারা গড়ে তুলবেন আরেকটি ‘অমর জুটি’, তা জানতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ইংল্যান্ডে এখন উঠতি পেস বোলারদের ছড়াছড়ি। গাস অ্যাটকিনসন এরই মধ্যে নিজের জাত চিনিয়েছেন। অ্যান্ডারসন–ব্রডের সঙ্গে খেলতে খেলতে ক্রিস ওকস–মার্ক উডরাও এখন বেশ অভিজ্ঞ। এটি হতে যাচ্ছে ওকসের ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট। নটিংহামে উড খেলতে নামছেন ৭ বছর পর।
অধিনায়ক বেন স্টোকস নিজেও পেস বোলিং করেন। তাঁর হাতে তাই ‘বিকল্প’ অনেক। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আগামী অ্যাশেজ সামনে রেখে এখন থেকেই যে পেস আক্রমণের ধার আরও বাড়াতে চান, তা বোঝা গেছে স্টোকসের কথায়।
নটিংহাম টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে স্টোকস বলেছেন, ‘জো রুট, স্টিভেন স্মিথ, মারনাস লাবুশেন—আপনি বিশ্বের যেকোনো ব্যাটসম্যানকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, তারা বলবে ভিন্ন কিছু করার ক্ষেত্রে গতি এক বিশাল অস্ত্র। এটা (পেস বোলিং) আপনাকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে। তবে গতির সঙ্গে আপনার দক্ষতাও থাকতে হবে। গাস (অ্যাটকিনসন) গত সপ্তাহে তা দেখিয়েছে। মার্ক উডও বেশ দক্ষ। তার মতো দ্রুত বোলিং করার পাশাপাশি বলকে নিয়ন্ত্রণ ও সুইং করানোর ক্ষমতা সবার নেই। এটা বিরল ব্যাপার।’
অক্টোবরে নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ করবে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। নতুন চুক্তিতে পেস বোলারের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে উন্নয়ন চুক্তিতে আছেন তিন পেসার—ম্যাথু ফিশার, সাকিব মাহমুদ ও জন টার্নার। ফিশার ও মাহমুদের ২০২২ সালে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। সে বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অ্যান্ডারসন–ব্রডকে বাদ দিয়ে ফিশার–মাহমুদকে সুযোগ দিয়েছিল ইসিবি। ৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা টার্নারও নির্বাচকদের সুনজরে আছেন।
ইংল্যান্ডের পেস বোলিংয়ের প্রসঙ্গ উঠলে আরেকজনের নাম চলে আসার কথা—জফরা আর্চার। দীর্ঘদিন চোটের সঙ্গে লড়াই করা আর্চার গত মে মাসে টি–টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছেন। ফেরার পর থেকে ভালোই ছন্দে আছেন। ১০ ম্যাচে ৭.২৮ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। ২০২১ সালে সর্বশেষ টেস্ট খেলা এই পেসারকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না দল। তাই তাঁকে ২০২৫ সালে টেস্টে ফেরানো হবে কি না, তা পুনর্বিবেচনা করে দেখবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
দেড় বছর কনুই ও পিঠের চোটে ভোগা আর্চারকে নিয়ে অধিনায়ক স্টোকস বলেছেন, ‘এ নিয়ে (আর্চারকে টেস্টে ফেরানো) আমরা মাথা ঘামাচ্ছি না। আগামী মৌসুমে ওকে না পেলেও সমস্যা নেই। উদাহরণস্বরূপ—আমরা হয়তো ওকে আরও এক বছর পাব না। তবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি (টেস্ট থেকে আরও কিছুদিন দূরে থাকলে), ওর ক্যারিয়ার আরও দু–তিন বছর দীর্ঘায়িত হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আমি নিজেও জফের (আর্চারের) অনেক বড় ভক্ত। ইংল্যান্ডের (টেস্ট) জার্সিতে ওকে আবারও খেলতে দেখা দারুণ ব্যাপার হবে। তবে আমরা তাড়াহুড়ো করতে চাই না।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আওতাধীন ৩ ম্যাচের এই সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে ইংল্যান্ড। আজ শুরু হতে চলা নটিংহাম টেস্ট জিতলেই সিরিজ নিজেদের করে নেবে স্টোকসের দল। বার্মিংহামে শেষ টেস্ট শুরু ২৬ জুলাই।