বাঘ, গুইসাপ, মৌমাছির পর এবার পোকামাকড়ে বন্ধ হলো ক্রিকেট ম্যাচ
‘অজানা উড়ন্ত বস্তু’—মহীনের ঘোড়াগুলোর বিখ্যাত এক গান। তেমনই অজানা উড়ন্ত বস্তুর দেখা মিলল গতকাল ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে। অযাচিতভাবে ঢুকে পড়া এই ‘অতিথি’দের জন্য ম্যাচও বন্ধ রাখতে হয়েছে ১৮ মিনিট। উড়ন্ত হলেও এই ‘বস্তু’ অবশ্য অজানা নয়, সেগুলো ছিল আসলে একঝাঁক পোকামাকড়।
সেঞ্চুরিয়নে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের সময় ঘটেছে এ ঘটনা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে অনেকগুলো পোকা একসঙ্গে উড়তে থাকায় মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় খেলোয়াড়দের। এ সময় কাউকে জামা নেড়ে এবং কাউকে মাথার ক্যাপের সাহায্যে পোকার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে দেখা যায়। পরে অবশ্য পোকার আক্রমণ থামিয়ে খেলা ঠিকই শুরু হয়। ম্যাচে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছে ১১ রানে। ভারতের ২২০ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেমে যায় ২০৮ রানে।
অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে ম্যাচ থেমে যাওয়ার এটাই অবশ্য একমাত্র দৃষ্টান্ত নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় অদ্ভুত সব কারণে বন্ধ রাখতে হয়েছিল ম্যাচ। অতিরিক্ত গরম, অতিরক্ত ঠান্ডা, মৃত্যু, যুদ্ধবিমানের আঘাত, বাঘের আক্রমণ এবং গুইসাপ ঢুকে পড়ার কারণেও বন্ধ রাখতে হয়েছিল ম্যাচ। যেখানে এবার যুক্ত হলো পোকামাকড়।
ক্রিকেট মাঠে যেসব কারণে বন্ধ ছিল ম্যাচ
গুইসাপ: ঘটনাটা এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা–আফগানিস্তান টেস্টে। প্রথম ইনিংসের ৪৮তম ওভারে ব্যাট করছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। এমন সময়ে মাঠে গুইসাপ এসে হাজির। গুইসাপ খুব ভয়ংকর কোনো প্রাণী না হলেও আর যা-ই হোক, মশা-মাছির মতো এড়িয়ে তো যাওয়া যায় না। তাই বন্ধ হয়ে যায় খেলা। মাঠকর্মী ও অফিশিয়ালসরা এসে গুইসাপটিকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর আবার খেলা শুরু হয়।
বাঘ: শুনেই পিলে চমকে ওঠার মতো। নাহ্, আগেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই বাঘ মোটেই আসল বাঘ ছিল না। যদিও সেটা জানার আগেই ঘটে গেছে লঙ্কাকাণ্ড। ঘটনাটা ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের রোজ বল নার্সারি গ্রাউন্ডে ইসিবি সাউদার্ন ইলেকট্রিক প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচের। হ্যাম্পশায়ার ও সাউথ উইলটিসের মধ্যে খেলা চলার সময় এক দর্শক জানান, পাশের গলফ কোর্সে একটি বাঘ দেখা গেছে। সেই দর্শক জুম লেন্স বের করে বাঘের অস্তিত্ব স্বচক্ষেও দেখেছেন। এরপর নিরাপত্তাঝুঁকিতে সব খেলোয়াড় ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। পরে পুলিশ এসে আবিষ্কার করেন, সেটা ছিল মূলত খেলনা বাঘ। বাঘ-কাণ্ডে সেদিন ম্যাচ বন্ধ ছিল ২০ মিনিট।
যুদ্ধবিমান: এ ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের। লর্ডসে আর্মি ও আরএএফের ম্যাচ চলছিল। প্রথমে ব্যাট করে আর্মি ১ উইকেটে ৫৭ রান করার পর জার্মানির একটি যুদ্ধবিমান মাঠের কাছাকাছি চলে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য যুদ্ধবিমানটা লর্ডস পর্যন্ত আসেনি। কিন্তু যুদ্ধবিমান আসার খবরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খেলা।
মৃত্যু: ১৯৫২-৫৩ সালের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের ঘটনা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২২৪ রান। দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ড দল ড্রেসিংরুমে যেতে না যেতেই জানতে পারে, রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা গেছেন। রাজার মৃত্যুর শোকে টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা বন্ধ রাখা হয়। এই টেস্টেই ভারত তাদের প্রথম টেস্ট জয় পায়। এমন দৃষ্টান্ত আরও আছে।
১৯৮৪ সালের শিয়ালকোটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরও এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেট–বিশ্ব। সেবার শুধু ম্যাচ নয়, পুরো পাকিস্তান সফরই বাতিল করে দেশে ফেরত যায় ভারত দল। এরপর সর্বশেষ ২০১৪ সালে নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে বন্ধ করে দেওয়া হয় শারজায় পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা।
ড্রেনের পাইপ: ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড সিরিজের হেডিংলি টেস্টের ঘটনা। গ্রাহাম গুচের বিপক্ষে ইনিংসের প্রথম ৪টি বল করলেন কার্টলি অ্যামব্রোস, তবে পঞ্চম বল করতে গিয়েই থেমে গেলেন। কারণ, ড্রেন বিস্ফোরণ। পাইপ ফেটে পানি উপচে ঢুকে পড়ছিল মাঠে।
ক্যালামারি: ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে এ মজার ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাসল কাপে। রজার টেলেমাকাসের বলে ছয় মেরেছিলেন ড্যারেল কালিনান। বল গিয়ে পড়ে একটা ক্যালামারি স্কুইড ভাজার প্যানের মধ্যে। বলটা ঠান্ডা করতে লেগে যায় পাক্কা ১০ মিনিট। ‘ফ্রায়েড ক্যালামারি স্টপড প্লে’—এমনটাই তখন লিখেছিল উইজডেন।
মৌমাছি: ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে মাঠে ঢুকে পড়েছিল মৌমাছি। আতঙ্কে সেদিন মাঠেই শুয়ে পড়েছিলেন খেলোয়াড় ও আম্পায়াররা। কয়েক মিনিট পরই অবশ্য শুরু হয়ে যায় খেলা।
কুয়াশা: ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কুয়াশার কারণে বন্ধ করতে হয়েছিল ধর্মশালায় ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ। অতিরিক্ত কুয়াশায় সেদিন ঠিকঠাক কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না খেলোয়াড়েরা। যে কারণে আম্পায়াররা বাধ্য হয়ে কিছু সময় খেলা বন্ধ রাখেন।
অতিরিক্ত রোদ: বৃষ্টি বা কুয়াশায় ক্রিকেট ম্যাচ বন্ধ থাকার বিষয়টি মানা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত রোদের কারণে এমন কিছু ঘটা অদ্ভুতই বটে। ২০১৯ সালে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটেছিল। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কের ভেন্যুর অবস্থান এমন ছিল যে রোদ সরাসরি ব্যাটসম্যানের চোখে এসে লাগে। সেদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘটেছিল এমন ঘটনা। ফলে বন্ধ রাখতে হয় খেলা।
মরুঝড়: ১৯৯৮ সালে শারজায় মরুঝড়ের কারণে থেমে গিয়েছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। সেদিন ২৮৫ রান তাড়ায় ভারত ব্যাট করার সময় ম্যাচ বন্ধ ছিল ৩০ মিনিট। মাঠে এত ধুলা উড়ছিল যে একপর্যায়ে খেলোয়াড়দের দৌড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল।