প্রথম রাউন্ডে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া যায়নি একটিও। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আজ এক ইনিংসেই দেখা গেল দুটি। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ২৪৬ রানের ওপেনিং জুটির পথে সেঞ্চুরি পেয়েছেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের দুই ওপেনার শাহাদাত হোসেন ও পারভেজ হোসেন। ১১১ বলে ১১৯ রান করে শাহাদাত ফিরলেও পারভেজ খেলেছেন ১২৯ বলে ১৫১ রানের ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ইনিংস।
দুই সেঞ্চুরিতে প্রাইম ব্যাংক তোলে ৪৯ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৮০ রান। জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ২১৫ রান তোলা ব্রাদার্স ম্যাচটি হেরেছে ১৬৫ রানে। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। দিনের অন্য ম্যাচে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিকে ১৪৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে টসে জিতে প্রাইম ব্যাংককে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ব্রাদার্স। প্রথম উইকেটের দেখা পেতেই তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৩৭তম ওভার পর্যন্ত। তামিম আজ ওপেনিংয়ে নামেননি। শাহাদাতের আউটে ভাঙে ২৪৬ রানের ওপেনিং জুটি, প্রিমিয়ার লিগে যে কোনো উইকেটে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ ও ওপেনিংয়ে দ্বিতীয়। ৯৫ বলে সেঞ্চুরি করা শাহাদাত তাঁর ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে মারেন ৪টি ছক্কা।
শাহাদাতের ওপেনিং সঙ্গী পারভেজের সেঞ্চুরি করতে লাগে ১০৪ বল। পরের ৫০ করতে তিনি নেন মাত্র ২২ বল। লিস্ট ‘এ’ যুগে প্রিমিয়ার লিগের দশম সর্বোচ্চ ইনিংস খেলার পথে এ বাঁহাতি ৯টি চারের সঙ্গে মারেন ৮টি ছক্কা। শাহাদাত-পারভেজের পর শেষ দিকে ১৭ বলে ৪৫ রানের ক্যামিও খেলেন মেহেদী হাসান। প্রাইম ব্যাংকের ঝড় থামাতে ৮ জন বোলার এনেছিল ব্রাদার্স, তবে কাজের কাজ হয়নি। এ ম্যাচ নেমে এসেছিল ৪৯ ওভারে, সেটি না হলে প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর রেকর্ড ৩৯৩ রানের স্কোর প্রাইম ব্যাংক পেরোতে পারত সহজেই।
রান তাড়ায় ৫৭ রানের ওপেনিং জুটি পায় ব্রাদার্স, দ্বিতীয় উইকেটে আসে আরও ৬২ রান। তবে এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় তারা। প্রাইম ব্যাংক বোলিংয়ে আনে ৯ জনকে, অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ও তামিম ছাড়া হাত ঘোরান সবাই। ৩টি করে উইকেট নেন নাজমুল ইসলাম ও সানজামুল ইসলাম।
পাশের মাঠে ৪৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৭ উইকেটে ২৩৭ রান তোলে শেখ জামাল। ওপেনার সৈকত আলীর ৫৬ ও মিডল অর্ডারে অধিনায়ক নুরুল হাসানের ৮০ রানের বাইরে ৩৫ রান করেন ইয়াসির আলী। জাওয়াদ রোয়েন নেন ৩৭ রানে ৩ উইকেট। রান তাড়ায় ২৮ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল শাইনপুকুর। তবে ওপেনার খালিদ হাসান (৬৬), মার্শাল আইয়ুব (৫৭) ও অধিনায়ক আকবর আলীর (৬২) তিনটি ফিফটিতে জয়ের পথে এগিয়ে যায় দলটি। আকবরের সঙ্গে ইরফান শুক্কুরের (৩২*) অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৩ বল বাকি থাকতে জয় পায় তারা।
ফতুল্লায় গাজী টায়ার্সের সঙ্গে বড় স্কোর গড়লেও সেঞ্চুরির দেখা পাননি আবাহনীর কোনো ব্যাটসম্যান। ওপেনার সাব্বির হোসেন পুড়েছেন ২ রানের আক্ষেপে, ৮০ বলে ৯৮ রানের ইনিংসে তিনি মারেন ১০টি চার ও ৪টি ছক্কা। তিনে নামা মাহমুদুল হাসান ১০৫ বলে করেন ৭৩ রান। পাঁচে নেমে ৪৮ বলে ৭৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন জাকের আলী, ৩টি চারের সঙ্গে মারেন ৫টি ছক্কা। ১৫ বলে ২৯ রানের ক্যামিও খেলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও।
গাজী টায়ার্সের ইকবাল হোসেন ৯ ওভারেই দেন ১০৪ রান, প্রিমিয়ার লিগের এক ইনিংসে যা সবচেয়ে খরুচের বোলিংয়ের রেকর্ড।
বৃষ্টির কারণে গাজী টায়ার্সের পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ৩১০ রান। তবে রান তাড়ায় পাঁচে নামা অধিনায়ক তাহজিবুল ইসলামের ফিফটি ছাড়া গাজী টায়ার্সের ইনিংসে বলার মতো কিছু নেই। ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৩ রান তুলতে পারে তারা। ৩টি করে উইকেট নেন খালেদ আহমেদ ও মোসাদ্দেক হোসেন।
প্রাইম ব্যাংক-ব্রাদার্স
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯ ওভারে ৩৮০/৪ (পারভেজ ১৫১, শাহাদাত ১১৯, মেহেদী ৪৫; আবু জায়েদ ৩/৭০, শাকিল ১/৮৫)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৯ ওভারে ২১৫/৯ (মজিদ ৫৬, রহমতউল্লাহ ৩৭, ইমতিয়াজ ৩১; নাজমুল ৩/৩৪, সানজামুল ৩/৪০, নাঈম ১/১০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ১৬৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: পারভেজ হোসেন
আবাহনী-গাজী টায়ার্স
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ৩৪৩/৭ (সাব্বির ৯৮, জাকের ৭৬, মাহমুদুল ৭৩; ইফতিখার ২/৩৯, মারুফ ২/৬৫, ইকবাল ২/১০৪)
গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি: (৪০ ওভারে লক্ষ্য ৩১০) ১৬৩/৯ (তাহজিবুল ৫৮, আশিকুর ২৯, সাঈদ ২৮; খালেদ ৩/২৩, মোসাদ্দেক ৩/১৯)
ফল: আবাহনী ১৪৬ রানে জয়ী (ডিএলএস)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাব্বির হোসেন
শেখ জামাল-শাইনপুকুর
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৪৭ ওভারে ২৩৭/৭ (নুরুল ৮০, সৈকত ৫৬, ইয়াসির ৩৫; রোয়েন ৩/৩৭, রবিউল ২/৩৫)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৪.৫ ওভারে ২৩৮/৪ (খালিদ ৬৬, মার্শাল ৫৭, আকবর ৬২; সৈকত ১/৬, জিয়াউর ১/২১, টিপু ১/৪৬)
ফল: শাইনপুকুর ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আকবর আলী